আশা এবং আশঙ্কায় ভরা ছিল গত সপ্তাহটা। এর প্রভাবে উত্থান-পতন দেখা গিয়েছে শেয়ার বাজারেও। এক দিকে কিছু ভাল খবর যখন সূচককে শক্তি জুগিয়েছে, তখন তাকে টেনে নামাতে চেষ্টা করেছে কিছু প্রতিকূল সংবাদ। খবরগুলি ও তার প্রতিক্রিয়া দেখে নেব এক নজরে:
অশোধিত তেলের দাম বাড়তে শুরু করায় নতুন করে আশঙ্কার মেঘ দেখা দেয় বিশ্ব অর্থনীতিতে। ব্যারেল পিছু তেলের দাম ৭০ ডলারে পৌঁছে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয় বিভিন্ন মহল থেকে। এর প্রভাবে বিশ্ব জুড়ে ঝুঁকে পড়ে শেয়ার বাজার। সূচক নামে ভারতেও। তেলের দাম বাড়লে সরকারের আমদানি বিল বাড়বে। এর প্রভাবে দেশের মধ্যে বাড়তে পারে পণ্যমূল্য। পাশাপাশি কমবে সুদ ছাঁটাইয়ের সম্ভাবনা।
যেমন আশা করা হয়েছিল, তার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে জিএসটি কমানো হয়েছে ১৭৮ পণ্যের ক্ষেত্রে। এর ফলে দাম কমবে ওই সব পণ্যের। সংশ্লিষ্ট শিল্পমহলের আশা, দাম কমার কারণে চাহিদা বাড়বে এই সব পণ্যের। ফলে উপকৃত হবে তারা। অন্য দিকে করের হার এতটা কমার কারণে রাজস্ব আয় ভাল রকম কমতে পারে সরকারের। কেন্দ্রের অবশ্য দাবি, বিক্রি বাড়লে মোট কর আদায় সম্ভবত কমবে না।
সেপ্টেম্বরে শিল্প বৃদ্ধির হার নেমে এসেছে ৩.৮ শতাংশে। গত বছর একই সময়ে তা ছিল ৫%। উৎসবের মরসুমেও সব থেকে বেশি উৎপাদন কমেছে কারখানা ও মেয়াদি ভোগ্যপণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে। এর প্রতিকূল প্রভাব পড়ে শেয়ার সূচকে।
ফলাফলের মরসুম এখন একদম শেষের দিকে। গত সপ্তাহে যে-সব সংস্থা ফল প্রকাশ করে, সেগুলির মধ্যে ছিল স্টেট ব্যাঙ্ক, ব্যাঙ্ক অব বরোদা, এলাহাবাদ ব্যাঙ্ক, সিইএসসি, এলঅ্যান্ডটি ইত্যাদি। এখনও পর্যন্ত প্রকাশিত ফল মোটের উপর হতাশাজনক নয়। আশা, বছরের শেষ ছয় মাসে ফলাফলে উন্নতি ঘটবে।
আশঙ্কার মেঘ
• বিশ্ব বাজারে মাথা তুলেছে অশোধিত তেলের দাম। ব্যারেল পিছু দর ছুঁতে পারে ৭০ ডলারও।
• সেপ্টেম্বরে শিল্পোৎপাদন বৃদ্ধি মাত্র ৩.৮%। গত বছর একই সময়ের হার ৫%। উৎসবের মরসুমেও মার খেয়েছে কল-কারখানা ও মেয়াদি ভোগ্যপণ্য উৎপাদন।
রুপোলি রেখা
• প্রত্যাশা মাফিক জিএসটি কমেছে ১৭৮টি পণ্যে। দাম কমার জেরে এই সব পণ্যের চাহিদা বাড়ার আশা।
• হতাশাজনক নয় এ পর্যন্ত প্রকাশিত কোম্পানি ফলাফল। বছরের দ্বিতীয় ভাগে তা ভাল হওয়ারই আশা
• প্রবীণ নাগরিক এবং শারীরিক প্রতিবন্ধীদের বিশেষ সুবিধা দিতে ব্যাঙ্কগুলিকে নির্দেশ আরবিআইয়ের
অন্যান্য বিমা সংস্থার পাবলিক ইস্যুর তুলনায় কিছুটা ভাল সাড়া পেয়েছে এইচ ডি এফ সি লাইফের আই পি ও। আকার বেশ বড় হওয়া সত্ত্বেও এই ইস্যুতে আবেদন জমা পড়েছে প্রয়োজনের তুলনায় ৪.৯ গুণ। প্রথম দিকে বড় কোনও লাভের সন্ধান দিতে না-পারলেও, বড় মেয়াদে এটি একটি ভাল শেয়ারে পরিণত হবে বলে মনে করা হচ্ছে। অনাদায়ী ঋণের চাপে নুয়ে পড়া বেসরকারি অ্যাক্সিস ব্যাঙ্ক নতুন করে মূলধন বাড়াতে উদ্যোগী। এই পথে ব্যাঙ্কে আসতে চলেছে ১১,৬২৬ কোটি টাকার নতুন লগ্নি। এই খবরে গত সপ্তাহে কিছুটা চাঙ্গা হয়ে ওঠে অ্যাক্সিস শেয়ার। এ দিকে, ১:১ অনুপাতে বোনাস শেয়ার ইস্যুর কথা ঘোষণা করেছে গাড়ি সংস্থা মহীন্দ্রা অ্যান্ড মহীন্দ্রা। কোম্পানি শেষ বোনাস শেয়ার ইস্যু করেছিল ২০০৫ সালে। এই খবরে বেশ চাঙ্গা হয়ে ওঠে এম অ্যান্ড এম শেয়ার।
বুধবার খুলবে ‘ভারত ২২ ইটিএফ ইস্যু’। কেন্দ্রের এই ফান্ডের অধীনে থাকবে ২২টি রাষ্ট্রায়ত্ত ও ৩টি বেসরকারি সংস্থার শেয়ার। তালিকায় আছে স্টেট ব্যাঙ্ক, ওএনজিসি, আইওসি, গেইল, পাওয়ার গ্রিড, কোল ইন্ডিয়া, এনটিপিসি, আইটিসি, এল অ্যান্ড টি-র মতো শেয়ার। সব শ্রেণির লগ্নিকারীরা ৩% ডিসকাউন্ট পাবেন এই ইস্যুতে। ১৭ তারিখে বন্ধ হবে এই ইস্যু। ঝুলিতে ২ ডজন ভাল শেয়ার থাকায়, বড় মেয়াদে এখানে লগ্নি লাভজনক হবে বলে ভাবা হচ্ছে। সুবিন্যস্ত (ডাইভার্সিফায়েড) হওয়ায় ঝুঁকিও অপেক্ষাকৃত কম থাকবে।
ব্যাঙ্কিং লেনদেনের ব্যাপারে নানা অসুবিধায় পড়তে হয় প্রবীণ নাগরিক এবং শারীরিক প্রতিবন্ধীদের। এই ব্যাপারে অনেক অভিযোগ জমা পড়ায় গত সপ্তাহে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক একটি নির্দেশিকা জারি করে ব্যাঙ্কগুলিকে এই শ্রেণির মানুষদের জন্য কয়েকটি বিশেষ পরিষেবার ব্যবস্থা করতে বলেছে। এগুলির মধ্যে আছে:
• এঁদের জন্য বিশেষ কাউন্টার বা প্রাধান্য দেওয়ার ব্যবস্থা করা।
• পেনশন প্রাপকদের জন্য সহজে লাইফ সার্টিফিকেট দেওয়া ও নথিবদ্ধ
করার ব্যবস্থা করা। এখন থেকে সার্টি-ফিকেট সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্কের যে-কোনও শাখায় জমা করা যাবে ও তা সেই শাখাকে দ্রুত নথিবদ্ধ করতে হবে।
• বিনা মাসুলে বছরে কম করে ২৫ পাতার চেকবই দেওয়া।
• ব্যাঙ্কে কেওয়াইসি-র সব কাগজপত্র জমা দেওয়া থাকলে স্বয়ংক্রিয় ভাবে অ্যাকাউন্টকে উপযুক্ত দিনে ‘প্রবীণ নাগরিক অ্যাকাউন্ট’-এ পরিবর্তনের সুযোগ থাকবে। এ জন্য আলাদা আর্জি জানানো বা নথি দাখিল জরুরি নয়।
• যে-সব নাগরিকের বয়স ৭০ বছর বা তার বেশি, তাঁদের জন্য কিছু পরিষেবা বাড়িতে পৌঁছে দিতে হবে।
এই নির্দেশের পরে আশা করা যায়, ব্যাঙ্কগুলি প্রবীণ নাগরিক ও প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ পরিষেবার ব্যবস্থা করতে উদ্যোগী হবে।