শুঁটকির স্বাদেই লক্ষ্মীলাভের স্বপ্ন বেনফিশের

তবু শুঁটকি মাছের ক্রমবর্ধমান চাহিদা রীতিমতো সমীহ করার মতো। বেনফিশ-কর্তৃপক্ষ এই সারসত্যটুকু বুঝে গিয়েছেন। লাভের কড়ি ঘরে তুলে ঘুরে দাঁড়াতে তাই সুগন্ধি মাছভাজার সঙ্গে ‘দুর্গন্ধ’-এর শুঁটকিও এ বার তাঁদের মুশকিল আসান।

Advertisement

ঋজু বসু

শেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০১৭ ১২:০০
Share:

পসরা: বাজারে পাঠানোর আগে।

কারও কারও রসনায় তিনি সাক্ষাৎ স্বর্গীয় অনুভূতি! আবার তাঁর একটুকুন গন্ধেই অনেকের প্রাণ ওষ্ঠাগত!!

Advertisement

তবু শুঁটকি মাছের ক্রমবর্ধমান চাহিদা রীতিমতো সমীহ করার মতো। বেনফিশ-কর্তৃপক্ষ এই সারসত্যটুকু বুঝে গিয়েছেন। লাভের কড়ি ঘরে তুলে ঘুরে দাঁড়াতে তাই সুগন্ধি মাছভাজার সঙ্গে ‘দুর্গন্ধ’-এর শুঁটকিও এ বার তাঁদের মুশকিল আসান।

এই বাংলার শুঁটকি-রসিকেরা সাধারণত বরাক ও ত্রিপুরার শুঁটকি-সংস্কৃতির কথা ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেলেন। অনেকেই জানেন না, কাকদ্বীপ-ডায়মন্ড হারবার থেকে মন্দারমণি-কাঁথি পর্যন্ত বিরাট অঞ্চলে শুঁটকির আঁতুড়ঘর বিস্তৃত। পশ্চিম বা দক্ষিণ ভারতের উপকূলের তুলনায় গভীর সমুদ্র কিছুটা বেশি দূরে বলে এ তল্লাটেই শুকোনোর উপযোগী ছোট মাছের জোগান বেশি।

Advertisement

লইট্যা, রকমারি চিংড়ি, নোনা ইলিশ ছাড়াও তাবড়া, পাতিয়া, শিলা, ভোলা, খয়রা, কাগজা... অন্তত ১০০ কিসিমের শুকনো মাছের ছড়াছড়ি এই অঞ্চলে। সেই সুবাদে পূর্ব মেদিনীপুর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার উপকূলবর্তী এলাকায় গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি শুঁটকি উৎপাদন কেন্দ্র। লোকমুখে তার নাম ‘খটি’। জাতীয় সমবায় উন্নয়ন নিগমের একটি প্রকল্পে অনুদান মিলেছে। পূর্ব মেদিনীপুরের পুরুষোত্তমপুর, দাদনপাত্রবাড়, নিউ জলদা, জলদায় মোট ন’টি ‘আদর্শ শুঁটকি খটি’ গড়ে তোলা হচ্ছে।

আরও খবর
নিজের অভাবের সংসার, তবু ১ টাকায় গরিবদের পেট ভরা লাঞ্চ খাওয়াচ্ছেন ইনি

অচিরেই নিজেদের ‘ব্র্যান্ড’-এর প্যাকেটবন্দি শুঁটকি বাজারে আনবে রাজ্যে মৎস্যজীবী সমবায়ের শীর্ষ সংগঠন বেনফিশ। সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর বিধান রায়ের কথায়, ‘‘খটিতে ফর্ম্যালিন-সহ রাসায়নিক ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। পশ্চিমবঙ্গের শুঁটকি উৎপাদনের ব্যবস্থাকে একটু স্বাস্থ্যসম্মত করা গেলেই গোটা উত্তর-পূর্বের বাজার ধরা যাবে।’’ সম্প্রতি ভাজা মাছ, মাছের জন্য বরফ তৈরি বা একুশ টাকার মাছভাত প্রকল্পে কিছুটা লাভ করেছে বেনফিশ। শুঁটকি উৎপাদনে লক্ষ্মী আরও মুঠোয় আসবেন বলেই আশা সংস্থার।

সরকারি সূত্রের খবর, শুধু পূর্ব মেদিনীপুরেই সেপ্টেম্বর থেকে মার্চের মরসুমে সপ্তাহে ৩-৪ টন শুঁটকি তৈরি হয়। উৎপাদনের মাত্রা বাড়িয়ে ১৫-২০ টন ছুঁয়ে ফেলা সম্ভব। ‘‘ফি-মরসুমে খটি থেকে বেনফিশের জন্য ২০০-২৫০ টন শুঁটকি দেওয়া যাবে,’’ বলছেন কাঁথি মহকুমা খটি মৎস্যজীবী উন্নয়ন সমিতির সম্পাদক লক্ষ্মীনারায়ণ জানা।

তবে বুদ্ধদেব বসুর ভাষায় ‘নির্জলিত কাষ্ঠাকৃতি’ শুঁটকিকে কাঠের মতো খটখটে শুকনো করার হ্যাপা কম নয়। ৫-৬ থেকে ১২-১৩ দিন লাগে। বেনফিশের তরফে প্রতি খটিতে মাছ ধোয়ার চৌবাচ্চা, মাছ শুকোনোর সিমেন্টের চাতাল, মাছ ঝুলিয়ে রাখার বাঁশের খুঁটির ব্যবস্থা হচ্ছে। মাছ জীবাণুমুক্ত রাখতে মশারির ব্যবস্থাও হতে পারে। শুঁটকির সঙ্গে প্রায় এক লক্ষ লোকের রুজিরুটি জড়িয়ে। মাছ শুকোনোর কাজটা সাধারণত মেয়েরাই করেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন