বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার হাল ফেরাতে কমিটি

গ্রামীণ বিদ্যুদয়ন প্রকল্পের কারণে রাজ্য জুড়ে গ্রাহক সংখ্যা বাড়ছে। ফলে বাড়ছে বিদ্যুৎ বিক্রির ব্যবসাও। কিন্তু ব্যবসা বাড়লেও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার ঘরে সারা বছরই নগদের টানাটানি। খাতায়-কলমে ব্যবসার বহর বাড়লেও, নানা কারণে ফাঁক গলে বেরিয়ে যায় লাভের গুড়। বিদ্যুৎ বিলের আদায় বাড়াতে তাই পৃথক ‘মনিটরিং সেল’ তৈরি করছেন বণ্টন কতৃর্পক্ষ। যার কাজ হবে সংস্থার বিভিন্ন গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্রের লোকসান কমিয়ে আয় বৃদ্ধির রাস্তা খুঁজে বার করা।

Advertisement

পিনাকী বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০১৫ ০২:১২
Share:

গ্রামীণ বিদ্যুদয়ন প্রকল্পের কারণে রাজ্য জুড়ে গ্রাহক সংখ্যা বাড়ছে। ফলে বাড়ছে বিদ্যুৎ বিক্রির ব্যবসাও। কিন্তু ব্যবসা বাড়লেও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার ঘরে সারা বছরই নগদের টানাটানি। খাতায়-কলমে ব্যবসার বহর বাড়লেও, নানা কারণে ফাঁক গলে বেরিয়ে যায় লাভের গুড়। বিদ্যুৎ বিলের আদায় বাড়াতে তাই পৃথক ‘মনিটরিং সেল’ তৈরি করছেন বণ্টন কতৃর্পক্ষ। যার কাজ হবে সংস্থার বিভিন্ন গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্রের লোকসান কমিয়ে আয় বৃদ্ধির রাস্তা খুঁজে বার করা।

Advertisement

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে, বিনা কারণে কোথাও লোডশেডিং করা যাবে না। দিন-রাত প্রতিটি গ্রাহককে বিদ্যুৎ দিতে হবে। একই সঙ্গে বিদ্যুৎ পরিষেবা পৌঁছে দিতে হবে প্রতিটি গ্রামে। রাজ্যের এক বিদ্যুৎ কর্তা জানাচ্ছেন, এই কাজ করতে গিয়ে গত তিন বছরে বণ্টন সংস্থাকে যেমন বাজার থেকে অনেক বেশি বিদ্যুৎ কিনতে হয়েছে, তেমনই গ্রামাঞ্চলেও বিদ্যুৎ পরিষেবা পৌঁছে দিতে গিয়ে গ্রাহক সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে আড়াই কোটির কাছাকাছি। ওই কর্তার দাবি, ব্যবসার পরিধি যে-ভাবে বেড়েছে, সংস্থার বিদ্যুৎ বিল আদায় কিন্তু সেই ভাবে বাড়ছে না। বরং বেড়েছে হুকিং-ট্যাপিং করে বিদ্যুৎ চুরির বহর। কোথায় কী ভাবে কতটা ক্ষতি হচ্ছে এবং কেন হচ্ছে, তা খতিয়ে দেখার পাশাপাশি লোকসান কমিয়ে রাজস্ব বাড়ানোই হবে ওই কমিটির কাজ। একই সঙ্গে করতে হবে ‘এনার্জি অডিট’। অর্থাৎ কোন অঞ্চলে মাসে কত টাকার বিদ্যুৎ সরবরাহ করে কত টাকা আয় হচ্ছে, তার পুঙ্খানুপুঙ্খ হিসেব করা।

সম্প্রতি বণ্টন সংস্থার পরিচালন পর্ষদের বৈঠকে এই ‘মনিটরিং কমিটি’-র প্রস্তাবটি অনুমোদন করা হয়েছে বলে সংস্থা সূত্রে খবর। সংস্থার এক কর্তা বলেন, ‘‘একজন চিফ ইঞ্জিনিয়ারকে মাথায় রেখে আট জন সদস্যকে নিয়ে এই কমিটি তৈরি করা হচ্ছে। যাঁদের উপরে আবার থাকবেন বণ্টন সংস্থার বিদ্যুৎ সরবরাহ বিভাগের ডিরেক্টর।’’

Advertisement

বণ্টন সংস্থার আওতায় থাকা এলাকায় ১০০টি গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্র রয়েছে, যেখানে প্রচুর লোকসান হচ্ছে। ওই সমস্ত অঞ্চলে ১০০ টাকার বিদ্যুৎ বিক্রি করে ঘরে ৩০-৪০ টাকার বেশি আসছে না। অনেক জায়গায় আবার বিল বাবদ আয় গড়ে ১৫-২০ টাকা। মূলত বিদ্যুৎ চুরি ও তার সঙ্গে ঠিক মতো বিল আদায় না-হওয়াই এর প্রধান কারণ। এর ফলে বণ্টন সংস্থার সার্বিক লোকসানের বহর গড়ে ৩২-৩৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

সংস্থার পরিচালন পর্ষদের সদস্যরা মনে করছেন, পাকাপাকি ভাবে কোনও মনিটরিং কমিটি না-থাকলে লোকসান কমিয়ে রাজস্ব বাড়ানো যাবে না। কারণ যখনই লোকসান বাড়ে, তখন ওই বিষয়টি নিয়ে কিছুদিন হিসেব-নিকেষ চলে। বিল আদায় বাড়াতে পরিষেবা কেন্দ্রগুলির ম্যানেজারদের উপর চাপ সৃষ্টিও করা হয়। কিন্তু তার পরে সব বন্ধ হয়ে যায়। ধারাবাহিক ভাবে কোথায় কত বিদ্যুৎ বিক্রি করে কত টাকা আসছে, কেন কম আসছে, সেই বিষয়গুলি বিজ্ঞানসম্মত ভাবে বিচার-বিবেচনার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হয় না। এ ধরনের গাফিলতি চললে সংস্থার আর্থিক ভিত নড়বড়ে হয়ে যাবে বলেই আশঙ্কা। যে কারণেই এই প্রথম ‘রেভিনিউ অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট সেল’ তৈরি হচ্ছে, সারা বছর যারা রাজস্ব আদায়ের উপরই নজরদারি চালাবে।

কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে তাতেই কি রাজস্ব আদায় বাড়ানো যাবে? সংস্থা-কর্তাদের একাংশের দাবি, কমিটির সদস্যরা যখন নির্দিষ্ট অঞ্চল ধরে লাভ-ক্ষতির হিসেব করে ব্যবস্থা নেবেন, তখন ফাঁক-ফোকর দিয়ে লোকসান নিশ্চয়ই কমানো যাবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন