প্রতি হাতে কাজ জোগাতে দক্ষতা বাড়ানোয় জোর দিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। সেই অনুযায়ী চালু হয়েছিল প্রধানমন্ত্রী দক্ষতা উন্নয়ন প্রকল্প (কৌশল বিকাশ যোজনা)। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, তিন বছরে যেখানে ১৩ লক্ষেরও বেশি জন প্রশিক্ষণ পেয়েছেন, সেখানে রোজগার জুটেছে মাত্র তিন লক্ষের বরাতে। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠছে ওই বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের কার্যকারিতা নিয়ে। অনেকের কটাক্ষ, এ যেন সেই সুকুমার রায়ের ‘খাচ্ছে কিন্তু গিলছে না’র মতো। দক্ষ, তবু কাজ পাচ্ছে না!
ভোটের মুখে এই প্রবল চাপের সামনে এ বার জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন পরিষদ (ন্যাশনাল স্কিল ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন) এবং তার তহবিল ঢেলে সাজার সিদ্ধান্ত নিল মোদী সরকার। সম্প্রতি মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সরকারি সূত্রের ব্যাখ্যা, ওই তহবিল থেকে খরচে নজরদারি বাড়াতেই এই সিদ্ধান্ত। কারণ দেখা যাচ্ছিল, ওই তহবিল থেকে সরকারি অর্থ আদায় করে অনেকেই ছোটখাটো প্রশিক্ষণ কেন্দ্র খুলছিলেন। টাকা নিয়ে শংসাপত্র বিলি হচ্ছিল। কিন্তু ঠিকমতো প্রশিক্ষণ মিলছিল না। তাই কর্পোরেট ধাঁচের প্রশাসনিক কাঠামো তৈরির সঙ্গে স্বচ্ছতা এবং দায়বদ্ধতা বাড়াতে সংস্থার বোর্ড ঢেলে সাজা হবে।
২০১৯ সালের ভোটের আগে কর্মসংস্থান নিয়ে চাপে থাকা সরকার এরপরেও হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারছে না। ঠিক হয়েছে, কর্মীদের পেনশন খাতে সংস্থাগুলি মূল বেতনের যে ১২% জমা করে, নতুন কর্মীদের জন্য প্রথম তিন বছর তার পুরোটাই সরকার বহন করবে। এতে এক কোটি চাকরি তৈরি হবে বলে দাবি করেছেন শ্রমমন্ত্রী সন্তোষ গঙ্গোয়ার। তাঁর দাবি, সে জন্যই কেন্দ্র ১০ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত বাড়তি খরচের বোঝা কাঁধে নিচ্ছে। কিন্তু শ্রমিক সংগঠন সিটু-র সাধারণ সম্পাদক তপন সেনের যুক্তি, ‘‘এ আসলে বেসরকারি সংস্থাকে ঘুরপথে সুবিধা পাইয়ে দেওয়া।’’ এত দিন ৮.৩৩ শতাংশের ভার বইত সরকার। ২০১৬ সালের ১ এপ্রিলের পরে যাঁরা কাজে যোগ দিয়েছেন এবং যাঁদের মূল বেতন ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত, মূলত তাঁদের জন্যই পুরো ভার বইবে কেন্দ্র। এতে আদৌ নতুন চাকরি তৈরি হবে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি।
বছরে এক কোটি কাজ তৈরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিলেন মোদী। শ্রম মন্ত্রকের তথ্যই বলছে, তার ধারেকাছেও পৌঁছতে পারেনি তাঁর সরকার। চাকরির অভাব কোথায় পৌঁছেছে, তা প্রমাণ করে সম্প্রতি রেলের ১ লক্ষ চাকরির জন্য ২ কোটির বেশি আবেদন জমা পড়া। বেকায়দায় পড়ে এখন শ্রম মন্ত্রকের দাবি, সরকার চাকরির কোনও লক্ষ্য স্থির করেনি।
মোদী সরকারকে অস্বস্তিতে ফেলে গবেষণা সংস্থা কেএলইএমএস ইন্ডিয়া জানিয়েছে, মোদী সরকারের প্রথম দু’বছরে নতুন চাকরি দূর অস্ত্, বরং কর্মসংস্থান কমেছে। রিজার্ভ ব্যাঙ্কেরই সাহায্যপ্রাপ্ত এই গবেষণা অনুযায়ী, টানা দুই অর্থবর্ষে কর্মসংস্থান কমেছে। কৃষি, খনি, খাদ্যপণ্য, বস্ত্র, চর্ম সমেত অধিকাংশ শিল্পেই কাজ কমেছে। এ নিয়ে সতর্ক করেছে আইএমএফ-ও।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, ওই দুই বছরে বৃদ্ধি ৭-৮ শতাংশের উপরে ছিল। তাতেও যদি কাজ কমে থাকে, তবে পরে কী হয়েছে তা চিন্তার বিষয়।