আশ্বাস: বৈঠকে জেটলি। শুক্রবার নয়াদিল্লিতে। পিটিআই
রফতানি না-বাড়লে বৃদ্ধির হার টেনে তোলা মুশকিল। কিন্তু জিএসটি-র চালুর পরে সেই রফতানিকারীদেরই নাভিশ্বাস উঠেছে। অন্য দিকে নোট বাতিলের পরে ধাক্কা খেয়েছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প, অসংগঠিত ক্ষেত্র। তাতেও বৃদ্ধি ধাক্কা খেয়েছে বলে অর্থনীতিবিদদের এক বড় অংশ একমত। জিএসটি চালুর পরে ওই সব ক্ষেত্রের ব্যবসা মার খাচ্ছে। ব্যবসা যেটুকু হচ্ছে, তাতেও কর মেটানো, রিটার্ন ফাইল করতে গিয়ে হিমসিম দশা। এই অবস্থায় অর্থনীতির হাল ফেরাতে জিএসটি পরিষদের বৈঠকে এই দু’টি ক্ষেত্রকেই সুরাহা দেওয়ার বন্দোবস্ত হল। সম্প্রতি যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন খোদ প্রধানমন্ত্রী।
জিএসটি-র পর থেকেই রফতানি -কারীদের মূল ক্ষোভ ছিল, তাদের কাঁচামালে অগ্রিম জিএসটি মেটাতে গিয়ে নগদ পুঁজি আটকে থাকছে। রিফান্ড পেতে দেরি হওয়ায় দৈনন্দিন ব্যবসা লাটে উঠছে। শুক্রবার ঠিক হয়েছে, ১০ অক্টোবরের মধ্যে জুলাইয়ের রিফান্ড মিলবে। ১৮ অক্টোবরের মধ্যে মিলবে অগস্টের রিফান্ড। পণ্য রফতানিকারীদের কার্যত ২০১৮-র ৩১ মার্চ পর্যন্ত পুরোপুরি জিএসটি ছাড় দেওয়া হচ্ছে। রফতানি ব্যবসায়ীদের জন্য ধার্য হয়েছে মাত্র ০.১% জিএসটি। অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি বলেন, ‘‘বিশ্বের বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতেই এই সিদ্ধান্ত।’’
১ এপ্রিলের মধ্যে রফতানি-কারীদের জন্য ই-ওয়ালেটও চালু হবে। তাতে রাখা ‘কাল্পনিক’ টাকা থেকেই কর মেটানো যাবে। পাওনা ও প্রাপ্য ফেরতের হিসেব পরে হবে। বন্ড বা ব্যাঙ্ক গ্যারান্টির শর্তও উঠছে। নগদের বদলে ডিউটি ক্রেডিট স্ক্রিপস-এ লেনদেন জনপ্রিয় করতে তাতে জিএসটি তুলে দেওয়া হচ্ছে। রফতানিকারীদের সংগঠন ফিও-র সভাপতি গণেশ গুপ্তর কথায়, ‘‘একেবারে বাস্তববাদী সিদ্ধান্ত।’’
স্বস্তি কোথায় রফতানিকারীদের:
• দেশ বা বিদেশ থেকে কাঁচামাল কিনে পণ্য উৎপাদনের পরে রফতানি করলে, কার্যত পুরোপুরি জিএসটি ছাড় আগামী
৩১ মার্চ পর্যন্ত।
• যাঁরা দেশে বা বিদেশে তৈরি পণ্য কিনে রফতানি করেন, তাঁদের তত দিন জিএসটি দিতে হবে ০.১%।
• জুলাইয়ের প্রাপ্য করছাড়ের চেক মিলবে ১০ অক্টোবরের মধ্যে। অগস্টেরটি ১৮ অক্টোবরের মধ্যে।
• ১ এপ্রিল থেকে চালু হবে ই-ওয়ালেট। নগদে না-মিটিয়ে কর দেওয়া যাবে সেখান থেকেই। পরে কর পাওনা ও প্রাপ্য ফেরতের হিসেব হবে। সমস্যা মিটবে জিএসটির জন্য নগদ পুঁজি আটকে থাকার।
ছোট-মাঝারি ব্যবসায়ীদের:
• বছরে ১.৫ কোটি টাকা পর্যন্ত ব্যবসায় প্রতি মাসের বদলে জিএসটি রিটার্ন ফাইল করা যাবে তিন মাস অন্তর। করও তা-ই। কেন্দ্রের দাবি, এতে সুবিধা হবে ৯০% করদাতার। সুযোগ অক্টোবর থেকে।
• ‘কম্পোজিশন স্কিম’-এর পরিধি বাড়ছে। এর আওতায় আসতে পারবে এক কোটি টাকার পর্যন্ত ব্যবসা। এত দিন তা ছিল ৭৫ লক্ষ।
(এই প্রকল্পে ব্যবসায়ীদের ১%, উৎপাদনকারীদের ২%, রেস্তোরাঁর ৫% কর মেটালেই চলে। তবে আগে মেটানো কর ফেরত মেলে না)
অসংগঠিত ক্ষেত্রকে:
• কোনও বড় সংস্থা জিএসটি-র আওতার বাইরে থাকা ছোট সংস্থা থেকে জিনিস কিনলে, বড় সংস্থাকেই জিএসটি দিতে হত। পরে তা ফেরত মিলত। তাই ছোট সংস্থার সঙ্গে ব্যবসায় উৎসাহ কমছিল। ওই ব্যবস্থা ৩১ মার্চ পর্যন্ত স্থগিত।
হার কমলো:
• শুকনো কাটা আম, আইসিডিএস-এর খাবার, ব্র্যান্ডহীন নিমকি, ব্র্যান্ডহীন আয়ুর্বেদিক ওষুধ, কৃত্রিম তন্তু, মার্বেল-গ্রানাইট ছাড়া মেঝে তৈরির পাথর, ক্লিপ, ডিজেল ইঞ্জিনের যন্ত্রাংশ, পাম্পের যন্ত্রাংশ, পোশাকে জরির কাজ, ইমিটেশন গয়নার কাজ, সেচের মতো সরকারি কাজ (যেখানে অনেক কর্মী লাগে), খাকরা, রুটি-চাপাটি ইত্যাদি
ভাবনা জারি:
• কম্পোজিশন স্কিমের আওতায় থাকা সংস্থা আন্তঃরাজ্য ব্যবসা করতে পারবে কি না, বড় এবং বাতানুকূল রেস্তোরাঁয় কর কমানো যায় কি না ইত্যাদি খতিয়ে দেখে রিপোর্ট শীঘ্রই
ছোট ও মাঝারি সংস্থাকে সুরাহা দিতে ১.৫ কোটি টাকা পর্যন্ত ব্যবসায় প্রতি মাসের বদলে তিন মাসে একবার কর জমা ও রিটার্ন ফাইলের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। অক্টোবর থেকে এই সুবিধা মিলবে। ব্যবসায়ীদের সংগঠন সিএআইটি-র সচিব প্রবীণ খাণ্ডেলওয়াল বলেন, ‘‘এর ফলে অনিশ্চয়তা ও অব্যবস্থা কাটবে।’’
‘কম্পোজিশন স্কিম’-এর আওতা বেড়ে হচ্ছে ১ কোটি টাকা। তা ছাড়া, এর আওতায় থাকা ব্যবসায়ীদের আন্তঃরাজ্য লেনদেনের সুবিধা বাড়ানোর উপায় খুঁজতে কিছু রাজ্যের অর্থমন্ত্রীদের নিয়ে একটি কমিটি তৈরি হবে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বড় রেস্তোরাঁয় জিএসটি-র হার, তার সঙ্গে খাবারের দামের সাযুজ্য, কর ফেরতের সুবিধা ক্রেতা পাচ্ছেন কি না, খতিয়ে দেখা হবে তা-ও।
ই-ওয়ে বিল ১ জানুয়ারি থেকে আর টিডিএস/টিসিএস চালু হওয়ার কথা ১ এপ্রিল থেকে।