সাজসজ্জা: তাঁতিদের তৈরি ডিজাইনার পোশাকে একটি হোমের আবাসিকেরা। সম্প্রতি কলকাতায়। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী
তাঁরা তাঁত বুনে তৈরি করেন কাপড়। কিন্তু তা বাজারে বেচে মোটা মুনাফা পকেটে পোরেন অন্য কেউ। তাঁতিদের কাজের কদর ছড়িয়ে দেশে-বিদেশে। কিন্তু সেই কৃতিত্বের ভাগ অনেক সময় জোটেও না তাঁদের। সেই ছবিই এ বার পাল্টানার চেষ্টা শুরু হয়েছে কেন্দ্রীয় বস্ত্র মন্ত্রকের অধীন কলকাতার তাঁতি সেবা কেন্দ্রের (ওয়েভার্স সার্ভিস সেন্টার) উদ্যোগে। যেখানে রাজ্যের কয়েকশো তাঁতি ও জনা পনেরো ডিজাইনারকে এক ছাতার তলায় এনে তৈরি হয়েছে একটি মঞ্চ, ওয়েভার্স অ্যান্ড ডিজাইনার্স।
চুক্তি মাফিক এখানে তৈরি জামা-কাপড় বাজারে বিক্রি হলে ১৫% মুনাফা সরাসরি পাবেন তাঁতি নিজে। বাকি ১০% যাবে তাঁদের সমবায় সংগঠনের অ্যাকাউন্টে। সেই সঙ্গে পণ্যে লেখা থাকবে সংশ্লিষ্ট তাঁতির নামও। মুনাফার আর একটা অংশ পাবেন ডিজাইনাররা।
তাঁতি সেবা কেন্দ্রের ডেপুটি ডিরেক্টর তপন শর্মার দাবি, ‘‘তাঁতিদের আয় বাড়ানোর পাশাপাশি ডিজাইনারদের সঙ্গে তাঁদের সরাসরি ব্যবসায়িক সম্পর্ক তৈরি করার লক্ষ্যেই এই প্রথম পশ্চিমবঙ্গে এমন একটি মঞ্চ গড়া হয়েছে। এর পরে ডিজাইনার ও তাঁতিদের নিয়ে কোম্পানি আইনে পৃথক সংস্থাও তৈরি হবে।’’
উইভার্স অ্যান্ড ডিজাইনার্সের তরফে জানানো হয়েছে, তাদের তৈরি পোশাকে থাকবে বারকোড। সেখানে দেওয়া থাকবে তাঁতিদের নাম। এমনকী কোন অঞ্চলে কাপড়টি তৈরি হয়েছে এবং ১০০ শতাংশই হাতে বোনা কিনা, তারও উল্লেখ থাকবে স্পষ্ট। ক্রেতাদের জানাতে লেখা হবে তাঁতিরা কত শতাংশ মুনাফা পাচ্ছেন, তা-ও। ঠিক যেমন কৃষিপণ্য রফতানির ক্ষেত্রে এখন কৃষকদের নাম ও জমি চিহ্নিতকরণের পরে তা পণ্যের সঙ্গে জানিয়ে দিতে হয়।
সূত্রের খবর, এই মঞ্চের ডিজাইনাররা ফুলিয়া, জাঙ্গিপাড়া, কাটোয়া, কালনা, কোচবিহার, শান্তিপুরের বেশ কিছু তাঁতি সমবায় সমিতির সঙ্গে কাজ করছেন। প্রায় ১৫০ জন তাঁতি ইতিমধ্যেই যোগ দিয়েছেন। উৎসাহী আরও অনেকে।
পোশাক ডিজাইনার সন্তোষ গুপ্ত, সৌমিত্র মণ্ডল, সানন্দা বিশ্বাস উইভার্স অ্যান্ড ডিজাইনার্সে তাঁতিদের সঙ্গে কাজ করছেন। তাঁরা বলছেন, ‘‘আমাদের নকশা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনই জরুরি পোশাক তৈরি করা। তাই তাঁতিও গুরুত্ব পাচ্ছেন। পাচ্ছেন প্রাপ্য মুনাফাও। এমন স্বচ্ছ ভাবনার কারণেই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত হয়েছি।’’