চার বা দু’চাকার মালিকদের কপালে এখন চিন্তার ভাঁজ! পেট্রোল-ডিজেলের দাম যে আকাশছোঁয়া। দাম কমা তো দূরের কথা, দিনের পর দিন তা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। শুধু কি বাহন মালিকদেরই চিন্তা? দৈনন্দিন জীবনেও তো থাবা বসিয়েছে তা। প্রতিদিনের খাবারে সামান্য পেঁয়াজের ঝাঁঝও যে এখন চড়া হতে শুরু করেছে। এর পিছনেও রয়েছে সেই তেলেরই দাম। ভেবে দেখেছেন কখনও, নাসিক থেকে ট্রাকভর্তি পেঁয়াজ আনতে ট্রাক-মালিকদের খরচ কত বেড়েছে? আর সেই খরচের কড়ি তো গুণতে হচ্ছে আমজনতাকেই।
ভারতের বাজারে তো বটেই, বিশ্ববাজারেও ছবিটা একই। কেন বাড়ছে তেলের দাম? কেনই বা কমে তা? আমজনতার কাছে এই তেলের দাম ওঠা-পড়া নিয়ে খানিকটা ধোঁয়াশা রয়েছে।
সহজ ভাবে বিষয়টা বোঝার চেষ্টা করা যেতে পারে।
তেলের দাম কেন বাড়ছে? এই প্রশ্নের জবাব দেওয়ার আগে বুঝে নেওয়া যাক আরও একটি বিষয়। এ দেশে পেট্রোল-ডিজেলের মতো পেট্রোপণ্যের দাম নির্ভর করে বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেলের দামের উপর। কারণ, তার সিংহভাগই আমদানি হয় বিদেশ থেকে। দেশের বাজারে তা পরিশোধন করে ভারতীয় সংস্থাগুলি। এর পর ওই পেট্রোপণ্য বিক্রি করা হয়। সে কারণে বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম কমা-বাড়ার প্রভাব পড়ে দেশীয় বাজারেও।
আরও পড়ুন
অম্বানীর পর রাজ্যে লগ্নির প্রতিশ্রুতি আদানিরও
দেশের সবচেয়ে বড় তেল পরিশোধনকারী সংস্থা ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশন লিমিটেড-এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৪-র ১ অগস্টের পর গত সোমবার পেট্রোল-ডিজেলের দাম সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। সোমবার রাজধানী দিল্লিতে ডিজেলের দাম ছিল ৬১.৭৪ টাকা লিটার। পেট্রোলের দাম ছিল ৭১.১৮ টাকা লিটার। বৃহস্পতিবার যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রতি লিটার ৭১.৫৪ টাকায়। এবং ডিজেলের দাম ওই দিন ছুঁয়েছে প্রতি লিটার ৬২.২৩ টাকা।
এ বার ফিরে আসা যাক সেই মূল প্রশ্নে। কেন বাড়ছে তেলের দাম? এর পিছনে মূলত দু’টি কারণ রয়েছে।
• মধ্য এশিয়ার ১৩টি তেল উৎপাদক দেশের সংগঠন অর্গানাইজেশন অব দ্য পেট্রোলিয়াম এক্সপোর্টিং কান্ট্রিজ (ওপেক) তেলের উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছে।
• বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেল সরবরাহ কমিয়েছে অন্যতম সরবরাহকারী রাশিয়া।
তবে, বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেলের দামের উপরেই যে পেট্রোপণ্যের দাম সম্পূর্ণ নির্ভর করে তা পুরোপুরি সত্যি নয়। ডলার এবং টাকার বিনিময় মূল্যের ওঠাপড়ার উপরেও তা নির্ভর করে। এর প্রভাবে চাহিদা ও সরবরাহের সেই চিরকালীন সম্পর্কে টান পড়েছে। ফলে অপরিশোধিত তেলের দাম বেড়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রক সূত্রে খবর, গত ডিসেম্বরে এ দেশে অপরিশোধিত তেল আমদানির খরচ বেড়েছে ২৮ শতাংশ। আর্থিক মূল্যে যা ৬৬ হাজার ৪৬৪ কোটি টাকা।
পেট্রোপণ্যের দাম কি আদৌ কমবে?
আরও পড়ুন
প্রচুর লগ্নি, ২০ লক্ষ কর্মসংস্থান! ঘটা করে ঘোষণা রাজ্যের
আশার কথা, আগামী কয়েক মাসের মধ্যে তেলের দাম কমার ইঙ্গিত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। কর্পোরেট রেটিং সংস্থা আইসিআরএ লিমিটেড-এর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড গ্রুপ হেড কে রবিচন্দ্রনের দাবি, “মাস দুয়েকের মধ্যে বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেলের দামের ওঠানামা বন্ধ হতে পারে।” কী ভাবে তা সম্ভব? রবিচন্দ্রন বলেন, “আমেরিকার শেল অয়েল উৎপাদক সংস্থাগুলি উৎপাদন বাড়ালেই তা সম্ভব হবে। এতে বিশ্ববাজারে ওই ধরনের তেলের সরবরাহ বাড়বে। ফলে দামের ওঠানামা বন্ধ হবে।”
পেট্রোপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় সরকার কী করছে?
আরও পড়ুন
ওদের উচিত শিক্ষা দিন, সীমান্তে জওয়ানদের নির্দেশ বিএসএফ প্রধানের
পেট্রোপণ্যের খরচের ধাক্কা কমাতে অপ্রচলিত শক্তি থেকে ফুয়েল সরবরাহ করায় উদ্যোগী হয়েছে কেন্দ্র। বায়োফুয়েল ব্যবহারে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। পেট্রোল বা ডিজেলচালিত গাড়ির পরিবর্তে ইলেকট্রিক গাড়ি উৎপাদনেরও লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে কেন্দ্র। এমনকী, সৌরবিদ্যুতের দামও গত কয়েক বছরে লক্ষণীয় ভাবে কমেছে। এতে পরিবেশ দূষণের মাত্রা কমানোর পাশাপাশি পেট্রোজাত পণ্যের ব্যবহারেও রাশ টানা যাবে।
গ্রাফিক্স: শৌভিক দেবনাথ।