Sensex

চড়া বাজারে অস্বস্তি, সংশোধনের অপেক্ষাও

এ বছর ২০ জানুয়ারি সেনসেক্স উঠেছিল ৪২,২৭৪-তে। এখনও পর্যন্ত ওটাই তার সর্বোচ্চ শিখর। সব থেকে অস্বস্তিকর ব্যাপার, সেই সর্বোচ্চ জায়গা থেকে সূচক এখন মাত্র ২৮০৭ পয়েন্ট অর্থাৎ ৬.৬৪% পিছনে।

Advertisement

অমিতাভ গুহ সরকার

শেষ আপডেট: ৩১ অগস্ট ২০২০ ০৫:০৮
Share:

প্রতীকী ছবি।

সূচক যে ভাবে নাগাড়ে চড়ছে, দেখে মনে হবে অর্থনীতির সঙ্গে শেয়ার বাজারের কোনও সম্পর্ক নেই। বিশ্বের বহু অর্থনীতি বিপর্যস্ত। রীতিমতো ধুঁকছে ভারতের অর্থনীতি। অথচ গত সপ্তাহে প্রতিদিন উঠে হাজারেরও বেশি পয়েন্ট বেড়েছে সেনসেক্স। ৩৯ হাজারের গণ্ডি পেরিয়ে পৌঁছেছে ৩৯,৪৬৭ অঙ্কে। নিফ্‌টির শেষ অবস্থান ছিল ১১,৬৪৮। এ বছর ২০ জানুয়ারি সেনসেক্স উঠেছিল ৪২,২৭৪-তে। এখনও পর্যন্ত ওটাই তার সর্বোচ্চ শিখর। সব থেকে অস্বস্তিকর ব্যাপার, সেই সর্বোচ্চ জায়গা থেকে সূচক এখন মাত্র ২৮০৭ পয়েন্ট অর্থাৎ ৬.৬৪% পিছনে। এমন এক সময়, যখন দেশের মোট আভ্যন্তরীণ উৎপাদন বা জিডিপি বড় মাপের সঙ্কোচনের মুখে। করোনা সংক্রমণ কমার নাম নেই। অর্থনীতিকে ঘুরিয়ে দাঁড় করানোর পথও ঝাপসা।

Advertisement

এই কারণেই চিন্তায় বিশেষজ্ঞদের অনেকে। আশঙ্কা, এর পরে যে কোনও ছোট-বড় প্রতিকূল ঘটনা বা আশাভঙ্গের কারণে তা হুড়মুড়িয়ে পড়তে পারে। এমনকি এই ধরনের উত্থানের পরে কারণ ছাড়াই নামতে পারে বাজার। তবে এটাও ঠিক, দুর্বল অর্থনীতির আবহে বাজারের জমি পোক্ত করতে কিছুটা পতন (সংশোধন) জরুরি। যা অবশ্যম্ভাবীও। কিন্তু সেটা কবে হয়, সেটাই দেখার। অগস্ট ১৩ থেকে ২৫ তারিখের মধ্যে করা রয়টার্সের এক সমীক্ষায় ৪৬ জন ইকুইটি বিশেষজ্ঞের মত, আগামী তিন মাসের মধ্যে বড় রকমের সংশোধনের দেখা মিলবে।

প্রশ্ন উঠছে, এত সমস্যার মধ্যে বাজার এ ভাবে উঠছে কেন? এর একটি বড় কারণ, লকডাউনের পরে শেয়ার বাজারে বিদেশি লগ্নির জোয়ার। অন্য কারণগুলি হল, একাংশের হাতে অতিরিক্ত টাকার জোগান, করোনার টিকা বাজারে আসার আশা, তলানি ছোঁয়া ব্যাঙ্কের সুদ ইত্যাদি। বর্তমান আর্থিক পরিস্থিতি নয়, আগামী দিনের সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখে ভারতে মোটা টাকা ঢালছে বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলি। এরা মনে করে করোনা-সমস্যা কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলে বিভিন্ন অর্থনীতি যখন ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করবে, তখন ভারতের উত্থানের গতি বহু দেশের তুলনায় বেশি দ্রুত হবে।

Advertisement

শেয়ার বাজার সূত্রের খবর, অগস্টে এখনও পর্যন্ত বিদেশি লগ্নিকারী সংস্থাগুলির হাত ধরে ভারতের শেয়ার বাজারে ঢুকেছে ৪৬,৬০২ কোটি টাকা। দেশে এই মাত্রায় বিদেশি মুদ্রা ঢোকায় ফুলেফেঁপে উঠেছে বিদেশি মুদ্রার ভান্ডার। ডলারের জোগান বাড়ায় পড়ছে তার দাম। বাড়ছে ডলারে টাকার বিনিময় মূল্য। গত সোমবার এক ডলার ছিল ৭৪.৩২ টাকা। শুক্রবার নেমে হয়েছে ৭৩.৩৯ টাকা। এতে উপকৃত হবে আমদানি নির্ভর শিল্প। আমদানি বিলে চাপ কমবে সরকারেরও।

এ দিকে, বাজারে বন্ডের দাম কমার কারণে ইল্ড অনেকটা বেড়ে ওঠায় চিন্তায় পড়েছিলেন বন্ড এবং বন্ড ফান্ডের লগ্নিকারীরা।

মাত্র কিছু দিন আগে ১০ বছর মেয়াদি সরকারি বন্ডের ইল্ড যেখানে ছিল ৬ শতাংশের নীচে, তা গত সোমবার উঠে হয় ৬.২২%। ফলে নিট অ্যাসেট ভ্যালু (ন্যাভ) বেশ খানিকটা কমে অনেক বন্ড ফান্ডের। এর পরে ফের ময়দানে নাম রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। সিদ্ধান্ত হয় ২০ হাজার কোটি টাকা মূল্যের বড় মেয়াদের সরকারি বন্ড দু’কিস্তিতে বাজার থেকে কিনবে তারা। আরবিআই বন্ড কিনলে বাজারে তার চাহিদা বাড়বে। ফলে বাড়বে দাম। কিছুটা নামবে ইল্ড। বন্ডে বেশি রিটার্ন পাওয়ার সম্ভাবনা বাড়বে। যে কারণে আরবিআইয়ের সিদ্ধান্তের পরে শুক্রবার বন্ড ইল্ড কমে দাঁড়িয়েছে ৬.১০%। ফলে কিছুটা হলেও বেড়েছে বন্ড ফান্ডের ন্যাভ।

(মতামত ব্যক্তিগত)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন