এই বাজারে নতুন লগ্নিতে ঝুঁকি থাকছেই

বিজয়ী ঘোষণা তো দূরের কথা, ম্যাচই এখনও শেষই হয়নি। তা সত্ত্বেও শুক্রবার খোলা হল শ্যাম্পেনের বোতল। এমনই অবস্থা ছিল শেয়ার বাজারের। অনেকটা পঞ্চমী থেকেই উৎসব শুরু হওয়ার মতো। তার আগের বেশ কয়েক দিন বাজার একটু মুষড়ে ছিল। হঠাৎ তেড়েফুঁড়ে উঠল বুথ-ফেরত সমীক্ষা বেরোনোর আগেই।

Advertisement

অমিতাভ গুহ সরকার

শেষ আপডেট: ১২ মে ২০১৪ ০১:০৬
Share:

বিজয়ী ঘোষণা তো দূরের কথা, ম্যাচই এখনও শেষই হয়নি। তা সত্ত্বেও শুক্রবার খোলা হল শ্যাম্পেনের বোতল। এমনই অবস্থা ছিল শেয়ার বাজারের। অনেকটা পঞ্চমী থেকেই উৎসব শুরু হওয়ার মতো। তার আগের বেশ কয়েক দিন বাজার একটু মুষড়ে ছিল। হঠাৎ তেড়েফুঁড়ে উঠল বুথ-ফেরত সমীক্ষা বেরোনোর আগেই। যেন, যেমন আশা করা হয়েছিল তার সঙ্গে অক্ষরে অক্ষরে মিলে গিয়েছে নির্বাচনী ফলাফল। কিন্তু বাস্তবে যদি তা না-মেলে? ১৬ তারিখ যদি ষোলো আনা আশা পূর্ণ না-হয়। তবে কিন্তু তাৎক্ষণিক ভাবে ধস নামতে পারে শেয়ার বাজারে।

Advertisement

গত শুক্রবার একই সঙ্গে বেশ কয়েকটি নতুন নজির গড়েছে ভারতীয় শেয়ার বাজার। সেনসেক্স এবং নিফ্টি দুই-ই উঠেছে সর্বকালীন রেকর্ড উচ্চতায়। প্রথম বারের জন্য সেনসেক্স জয় করে ২৩০০০ অঙ্কের শৃঙ্গ। পরে অবশ্য নেমে এসে বন্ধ হয় ২২৯৯৪ পয়েন্টে, যা এই সূচকের নয়া নজির। অন্য দিকে, প্রথম বারের জন্য ৬৮০০ পয়েন্টের বাধা ভেঙে নিফ্টি উঠে যায় ৬৮৭১ পর্যন্ত। দিনের শেষে অবশ্য থিতু হয় ৬৮৫৯ অঙ্কে। শতাংশের হিসাবে সেনসেক্স ও নিফ্টি ওঠে যথাক্রমে ২.৯১% ও ২.৯৯%। একটি কাজের দিনে এটি কিন্তু অতি বড় উত্থান। এই দিন ব্যাঙ্ক নিফ্টি বাড়ে অতি দ্রুত গতিতে। এক সময়ে পৌঁছোয় ১৩৮১৪ পয়েন্টে, যা এই সূচকেরও রেকর্ড উচ্চতা। জীবনের সর্বোচ্চ উচ্চতায় ওঠে আই সি আই সি আই ব্যাঙ্ক। গত ৪১ মাসের মধ্যে সব চেয়ে উঁচু জায়গায় উঠতে দেখা যায় রিল্যায়ান্স ইন্ডাস্ট্রিজকে। ভাল রকম বাড়ে অ্যাক্সিস ব্যাঙ্ক, সি ই এস সি, হিরো মোটোকর্প, এল অ্যান্ড টি, মারুতি সুজুকি, পঞ্জাব ন্যাশনাল এবং স্টেট ব্যাঙ্ক। বাজার হঠাৎ এতটা তেজি হয়ে ওঠায় লাফিয়ে ন্যাভ বেড়েছে বেশির ভাগ ইকুইটি-নির্ভর মিউচুয়াল ফান্ডের। ফলে সপ্তাহের শেষে খুশির আমেজ সব ইকুইটিতে লগ্নিকারীদের ঘরেই। তবে এর মধ্যেও পড়তে দেখা গিয়েছে কিছু ওষুধ সংস্থার শেয়ারকে।

এখন বড় প্রশ্ন, এতটা লাভ কি বাজারে ফেলে রাখা উচিত? না কি আংশিক ঘরে তুলে রাখা ভাল। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাজার উত্তাল হওয়া কিন্তু নতুন ঘটনা নয়। ২০০৯ সালেও কেন্দ্রীয় নির্বাচনী ফলাফল প্রকাশিত হয়েছিল একই দিনে অর্থাৎ ১৬ মে। কিন্তু দিনটি ছিল শনিবার। অর্থাৎ বাজারে ফলাফলের তাৎক্ষণিক কোনও প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। সপ্তাহ শেষে ফলাফলের চুলচেরা বিশ্লেষণের পর বাজার খুলেছিল সোমবার। ফল লগ্নিারীদের মনঃপুত হওয়ায় খোলা মাত্রই উত্তাল হয়ে উঠেছিল সেনসেক্স এবং নিফ্টি। এ দিন শেয়ার বাজার শুরুতেই ঠেকেছিল ‘সার্কিট ব্রেকার’-এ।

Advertisement

এ বার কিন্তু ফলাফল ঘোষিত হবে শুক্রবার বাজার খোলা অবস্থায়। অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, গত শুক্রবার বাজার এতটা ওঠার পরও আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত (১৫ মে) তা চাঙ্গা থাকতে পারে বিক্রির চাপকে উপেক্ষা করে। বুথ-ফেরত সমীক্ষার সঙ্গে যদি বাজারের আকাঙ্ক্ষা কিছুটা মেলে তা হলে ঊর্ধ্বমুখীই থাকবে দুই সূচক। ফলাফল বেরোনোর আগে যদি বাজার আরও ওঠে, সে ক্ষেত্রে ফলাফলের পর তার বয়লারে হয়তো তত বেশি বাষ্প থাকবে না সূচককে টেনে আরও ওপরে তোলার। তবে ফলাফল যদি দেশকে মজবুত সরকার দিতে ব্যর্থ হয়, তা হলে কিন্তু পতন বেশ জোরালো হবে। আর সংসদের যদি ত্রিশঙ্কু অবস্থা হয় তবে নিফ্টি এখন যেখানে আছে, সেখান থেকে নেমে ৫৮০০ থেকে ৬১০০ পয়েন্টের মধ্যে চলে আসতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন কেউ কেউ। অবশ্য বেশির ভাগেরই ধারণা এমন অবস্থা সম্ভবত এ বার দেখতে হবে না।

মনে রাখতে হবে বাজারের এত বড় উত্থান কিন্তু দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থার বিচারে নয়। শুধু রাজনৈতিক উত্তেজনা ও শক্তিশালী সরকার পাওয়ার আশাকে কেন্দ্র করে। এই কারণে বর্তমান বাজারে নতুন লগ্নিতে কিন্তু ঝুঁকি থাকবে। এন ডি এ ক্ষমতায় এলে টাকার দাম বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। বিদেশি লগ্নিকারী থাকলে ডলার প্রবাহ বাড়বে। ফলে কমতে পারে টাকায় ডলারের দাম। সব উত্তর মিলবে ষোলো তারিখ, শুক্রবার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন