নিজেদের মধ্যে কর সংক্রান্ত তথ্য সরাসরি আদান-প্রদানের ব্যবস্থা ২০১৭ সালের মধ্যে চালু করার ব্যাপারে একমত হল জি-২০। উন্নত ও উন্নয়নশীল রাষ্ট্রগুলির এই জোট রবিবার তার সদস্য রাষ্ট্রগুলির অর্থমন্ত্রী ও শীর্ষ ব্যাঙ্ককর্তাদের বৈঠক শেষে এক ঘোষণাপত্রে আইনের ফাঁক-ফোকরকে কাজে লাগিয়ে কর ফাঁকি ঠেকাতে এই অঙ্গীকার করেছে। সে ক্ষেত্রে ভারতের পক্ষেও বিদেশি ব্যাঙ্কে গচ্ছিত কালো টাকা উদ্ধার করা সহজ হবে বলে মত সংশ্লিষ্ট মহলের। পাশাপাশি, ওই ঘোষণাপত্রেই জি-২০-র সদস্য রাষ্ট্রগুলি জানিয়েছে, ২০১৮ সালের মধ্যে বিশ্বের জাতীয় আয় ২ লক্ষ কোটি ডলার (প্রায় ১২০ লক্ষ কোটি টাকা) বাড়াতে তারা কৃতসংকল্প।
জি-২০ গোষ্ঠীর নেতারা গত ফেব্রুয়ারিতে সিডনির বৈঠকেই এই সমস্ত দেশের জাতীয় আয় ২০০ বেসিস পয়েন্ট বাড়ানোর অঙ্গীকার করেন। গোষ্ঠীর নেতৃত্ব এ বছরে যে-দেশটির হাতে রয়েছে, সেই অস্ট্রেলিয়ার অর্থমন্ত্রী জো হকি-ই সে বার এই লক্ষ্যমাত্রার কথা ঘোষণা করেছিলেন। আর্থিক সংস্কারকে হাতিয়ার করে নতুন করে সেই লক্ষ্যে অটল থাকার অঙ্গীকার করল জি-২০। লক্ষ্যে পৌঁছতে দু’দিনের বৈঠকে এ ব্যাপারে সদস্যরা হাজার খানেক প্রস্তাব পেশ করেছেন। তবে সম্মেলন শেষে অন্য সদস্য রাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের সঙ্গে এক সুরেই ভারতের অর্থ প্রতিমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন ইঙ্গিত দিয়েছেন, জাতীয় আয় ১৮০ বেসিস পয়েন্ট বাড়ানো যে-সম্ভব, সে ব্যাপারে তাঁরা কার্যত নিশ্চিত। বিভিন্ন রাষ্ট্রই আগামী নভেম্বরে ব্রিসবেনে জি-২০ শীর্ষ বৈঠকে এই লক্ষ্যপূরণে অনেকটা এগোনোর কথা জানাতে পারবেন বলে আশাবাদী। বৈঠকে যোগ দিয়েছেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর রঘুরাম রাজন এবং কেন্দ্রীয় অর্থ সচিব অরবিন্দ মায়ারামও।
কর ফাঁকি ঠেকাতে বার্ষিক ভিত্তিতে সরাসরি তথ্য বিনিময় ব্যবস্থা বাধ্যতামূলক করছে জি-২০। এ জন্য তাদের লক্ষ্য ২০১৭। তা সম্ভব না হলে ২০১৮-র মধ্যে নয়া জমানা চালু হয়ে যাবে বলে বৈঠক শেষে জানানো হয়েছে। এতে ভারতের পক্ষেও দেশে কর ফাঁকি দিয়ে বিদেশে কালো টাকা জম্য রাখার উপর নজরদারি সহজ হবে। প্যারিসের প্রতিষ্ঠান ওইসিডি -র (অর্গানাইজেশন ফর ইকনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট)দেওয়া সূত্র মেনেই চালু হবে এই ব্যবস্থা। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এত দিন সুইটজারল্যান্ডের মতো কিছু দেশ বলে এসেচে, অনিয়মের অভিযোগ উঠলে এবং তথ্য তলব করলে তবেই তারা অন্য একটি দেশকে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট সংক্রান্ত তথ্য দেবে, নচেৎ তারা তা জোগাতে বাধ্য নয়। ভবিষ্যতে তারা তথ্য দিতে বাধ্য থাকলে কালো টাকা গচ্ছিত রাখতেও দ্বিধা করবেন গ্রাহকেরা। সবাই যাতে ন্যায্য কর জমা দিতে বাধ্য থাকে, তার জন্যই এই ব্যবস্থা। প্রসঙ্গত, বিশ্ব অর্থনীতির ৮৫ শতাংশেরই প্রতিনিধিত্ব করছে জি-২০।
এ দিকে জার্মানির মতো ইউরোপের কিছু সদস্য রাষ্ট্র বৈঠকে সাফ জানিয়ে দিয়েছে, অনেক দেশেই এখনও ঋণের বোঝা বিপুল। ব্যয়সঙ্কোচের উল্টো পথে হেঁটে সরকারি খরচ লাগামছাড়া ভাবে বাড়ালে বিপদ ঘটতে পারে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে জার্মানি। ফলে বৃদ্ধির হার ২০০ বেসিস পয়েন্ট বাড়ানো কতটা যুক্তিসঙ্গত হবে, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছ তারা।