প্রায় চোদ্দ বছর এক জায়গায় থমকে থেকে অবশেষে প্রভিডেন্ট ফান্ডের আওতায় পেনশনের অঙ্ক বেড়ে হল মাসে ন্যূনতম ১ হাজার টাকা। এই প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কেন্দ্র। এ বছরের ১ এপ্রিল থেকেই বর্ধিত পেনশন মিলবে বলে আজ লোকসভায় এক লিখিত জবাবে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ইস্পাত, খনি, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী বিষ্ণু দেব সাই। তবে এই প্রকল্পেই যাঁদের পেনশন ১ হাজার টাকার বেশি ছিল, তাঁদের ক্ষেত্রে তা আপাতত অপরিবর্তিত থাকছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর।
পূর্বতন ইউপিএ সরকারই চলতি আর্থিক বছর থেকে বর্ধিত পেনশন চালুর এই প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছিল। কিন্তু নির্বাচনের আগে আদর্শ আচরণবিধি বলবৎ হওয়ায় বিজ্ঞপ্তি জারি হয়নি বলে তা রূপায়ণ করা যায়নি। মন্ত্রী জানান, ১ হাজার টাকার কম পেনশনপ্রাপকদের ক্ষেত্রে তা বাড়ানোর জন্য কর্মীদের পক্ষ থেকে অনেক প্রতিনিধিই ইতিমধ্যে কেন্দ্রের কাছে আর্জি জানিয়েছেন। তার ভিত্তিতেই দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া হল। প্রসঙ্গত, এর আগে শ্রমমন্ত্রী নরেন্দ্র সিংহ তোমর বিষয়টি নিয়ে গত ২৪ জুন ট্রেড ইউনিয়নের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করেন। তখনই তিনি তাঁদের আশ্বাস দেন যে, পরবর্তী দু’সপ্তাহের মধ্যেই কেন্দ্র এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে।
পিএফের আওতায় কর্মী পেনশন প্রকল্প (ইপিএস-৯৫) চালু হয় ১৯৯৫ সালের ১৬ নভেম্বর। তার পর পেনশনের অঙ্ক শেষ বার বেড়েছিল ২০০০ সালে, তা-ও মাত্র ৪ শতাংশ। সে বার অবশ্য পিএফের আওতায় পেনশন সকলের জন্যই বেড়েছিল। এ বার তা বাড়ছে শুধু ১ হাজার টাকার কম পেনশনপ্রাপকদের জন্য। পরিস্থিতি এতটাই সঙ্গিন যে, বহু পেনশনপ্রাপকই এক যুগেরও বেশি সময় ধরে মাসে ২৫০ টাকার মতো পেনশন নিতে বাধ্য হচ্ছেন। নতুন সরকার অবশেষে প্রকল্পটি রূপায়ণের পথ প্রস্তুত করায় উপকৃত হবেন ৫ লক্ষ বিধবা সমেত ২৮ লক্ষ পেনশন- প্রাপক, যাঁরা এত দিন ধরে ১০০০ টাকার কম মাসিক পেনশন পাচ্ছেন। উল্লেখ্য, প্রকল্পে মোট ৪৪ লক্ষ পেনশন প্রাপক রয়েছেন।
কমপক্ষে সকলের জন্য ১ হাজার টাকার পেনশনের ব্যবস্থা করতে চলতি ২০১৪-’১৫ অর্থবর্ষে কেন্দ্রকে তার কোষাগার থেকে খরচ করতে হবে বাড়তি ১২১৭ কোটি টাকার মতো। সরকারি সূত্রের খবর, কেন্দ্র অবশ্য বর্ধিত পেনশন শুধু এই অর্থবর্ষের জন্য নয়, পরেও তা বহাল রাখতে আগ্রহী। কর্মী প্রভিডেন্ট ফান্ড বা ইপিএফও দফতরের এক আধিকারিক অবশ্য এ দিন জানান, এখনও তাঁরা পেনশন বাড়ানো নিয়ে শ্রম মন্ত্রকের থেকে কোনও নির্দেশ পাননি। সম্ভবত, বৃহস্পতিবারের কেন্দ্রীয় বাজেটেই তা ঘোষণা হবে বলে ইঙ্গিত দেন তিনি।
অন্য দিকে, প্রভিডেন্ট ফান্ড পাওয়ার জন্য কর্মীর মাসিক বেতনের ঊর্ধ্বসীমা (কিছু নির্দিষ্ট শিল্প বাদ দিয়ে) বর্তমানে ৬৫০০ টাকা। তা বাড়িয়ে ১৫ হাজার টাকা করার প্রস্তাবেও কেন্দ্র শীঘ্রই সায় দেবে বলে মনে করছে ইপিএফও। ওই প্রস্তাবেও ইউপিএ সরকার সায় দিয়েছিল, কিন্তু আদর্শ আচরণবিধির কারণে তা কার্যকর হয়নি। এই প্রস্তাবে সায় মিললে আরও ৫০ লক্ষ কর্মী প্রভিডেন্ট ফান্ডের আওতায় আসবেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর।
প্রসঙ্গত, পিএফের আওতায় যে-সব কর্মী রয়েছেন, তাঁদের জন্য বেতনের ১২% কেটে পিএফ তহবিলে জমা দেওয়া হয়। একই পরিমাণ টাকা তহবিলে জমা দেন নিয়োগকারীও। নিয়োগকারীর টাকার ৮.৩৩% পেনশন খাতে জমা পড়ে। বাকি ৩.৬৭% যায় পিএফ খাতেই। এ ছাড়া, বেতনের উপর ১.১৬% অনুদান দেয় কেন্দ্র।