লম্বা সময় বসে কাজ করার প্রভাব পড়ছে শরীরে, কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা বাড়ছে। সমাধান কী ভাবে? ছবি: এআই সহায়তায় প্রণীত।
কারও শীত এলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা বাড়ে, কাউকে আবার মলত্যাগের সময় বছরভরই কষ্ট ভোগ করতে হয়। চিকিৎসকেরা বার বার বলেন, ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া এবং অস্বাস্থ্যকর খাবার বর্জনই হতে পারে এমন সমস্যার সমাধানের চাবিকাঠি।
তবে শুধু খাওয়ার দোষে নয়, ওঠা-হাঁটা, শরীরচর্চার অভাবও এর নেপথ্য কারণ হতে পারে। বর্তমানে কাজের ধরন বদলেছে। বাড়ি থেকে হোক বা অফিসে গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা টানা বসে কাজ করতে হয়। চিকিৎসকেরা বলছেন, ওঠা-হাঁটার অভাব, বেগ এলেও জরুরি মিটিং বা কাজের জন্য শৌচালয়ে যেতে না পারা, ডেস্কে বসে ভাজাভুজি খাওয়ার অভ্যাস, জল কম খাওয়া— এই সব কিছুই সমস্যা বাড়িয়ে দেয়। মোদ্দা কথা হল, লম্বা সময় ধরে এক ভাবে চেয়ার বসে থাকার সামগ্রিক প্রভাব শরীরে পড়ে। যার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা বাড়ে।
সমস্যা কেন হয়?
শারীরিক পরিশ্রম বা ওঠা-হাঁটা, নড়াচড়া অন্ত্রের পেশিগুলিকে সক্রিয় রাখে, যা অপাচ্য খাবার মলদ্বারের দিকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে। দীর্ঘ সময় বসে থাকলে অন্ত্র এবং পেশির কার্যকারিতা কমে যায় এবং হজম প্রক্রিয়া ধীর হয়ে যায়। দীর্ঘ ক্ষণ বসে থাকার কারণে পরিপাকতন্ত্র সহ শরীরের বিভিন্ন অংশে রক্ত সঞ্চালন কমে যেতে পারে। রক্তের প্রবাহ কমে গেলে অন্ত্রের স্বাভাবিক কার্যকারিতাও ব্যাহত হতে পারে। এর ফলে মল কোলনে বেশি সময় ধরে রয়ে যায়। এতে মল শক্ত হয়ে যায়, যা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা বাড়িয়ে দেয়।
অতীতে একাধিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে মাঝারি থেকে শ্রমসাধ্য শরীরচর্চা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা অনেকটাই কমিয়ে দেয়। পেট পরিষ্কারে সাহায্য করে। কারণ, হাঁটাহাটি বা শরীরচর্চার ফলে পেশি সক্রিয় হয়। খাবার সঠিক ভাবে হজম হয়। আবার এ-ও দেখা গিয়েছে, পেশাগত কারণে যাঁদের দীর্ঘ ক্ষণ বসে কাজ করতে হয়, তাঁদের ক্ষেত্রে পেটের স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। কম ঘুম, সঠিক সময় ঘুমোতে না পারা, হজমের সমস্যা বহু গুণ বাড়িয়ে দেয়। যার প্রভাব পেটের উপরেও পড়ে।
কোন কোন কারণ সমস্যা বাড়িয়ে দেয়
· ঘণ্টার পর ঘণ্টা একেবারে ওঠা-হাঁটা না করে বসে বা শুয়ে থাকা।
· ফাইবার সমৃদ্ধ প্রাতরাশ না খাওয়া। তা ছাড়া সময়ে না খেলে বা দেরিতে খেলেও গ্যাসের সমস্যা বাড়ে।
· মল বা মূত্র ত্যাগ না করে মিটিং বা ব্যস্ততার জন্য তা চেপে রাখার অভ্যাস ক্ষতিকর। এতে স্বাভাবিক মলত্যাগের প্রবণতাতেও এর প্রভাব পড়ে।
· শৌচালয়ে বসে মোবাইলে চোখ রাখা।
সমস্যার সামাধান কী ভাবে সম্ভব
· প্রতি ৪০-৪৫ মিনিট অন্তর এক বার করে উঠুন। ৩-৪ মিনিট হাঁটাহাটি করে নিন। এতে শরীরের প্রতিটি পেশি সচল থাকবে। কোমরে-কাঁধে ব্যথার প্রবণতাও কমবে।
· ভারী প্রাতরাশ করলে বা দুপুরে খাওয়ার আধ ঘণ্টা পরে শৌচালয়ে যান। বাতকর্মের বেগ এলে সেটি চেপে না রাখাই ভাল। এতে পেট হালকা হয়।
· জল খাওয়া খুব জরুরি। জল কম খেলেও মল শক্ত হয়ে যেতে পারে, মলত্যাগে সমস্যা হয়। অফিস ডেস্কে বড় বোতল রাখুন। ঘড়ি ধরে জল খান। মাঝে মধ্যে ঈষদুষ্ণ জল খেলেও গ্যাসের সমস্যা কমে। পেট হালকা লাগে।
· সকাল বা সন্ধ্যায় কিংবা কাজের ফাঁকে একটু জোরে হাঁটাহাটি করলেও লাভ হবে। লিফটের বদলে সিঁড়ি দিয়ে ওঠা-নামা করতে পারেন।
· প্রাতরাশ হোক বা মধ্যাহ্নভোজ, পাতে প্রোটিনের পাশাপাশি ফাইবার থাকাটাও জরুরি। পেঁপে, কলা, রাঙাআলুর মতো খাবার, চিয়া, তিসিবীজ ভিজিয়ে খেলেও কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা কমে। সে কারণেই সঠিক ডায়েট মানা দরকার।
· সময়ে ঘুম এবং খাওয়া-দাওয়া, তার সঙ্গে শরীরচর্চা— এগুলি ঠিক থাকলেই পেটের স্বাস্থ্য ভাল থাকবে। কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা এড়ানো সহজ হবে।