বিশ্বব্যাঙ্ককে চ্যালেঞ্জ ছুড়ল এশিয়া

পরিকাঠামোয় লগ্নির ব্যাঙ্ক গড়তে চুক্তি ২১ দেশের

ব্রিকস ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্কের পর এ বার এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্ক বা এআইআইবি (এশীয় পরিকাঠামো লগ্নি ব্যাঙ্ক)। শুক্রবার এআইআইবি তৈরির জন্য চুক্তি সই করে ফের পশ্চিমী দুনিয়ার সামনে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিল চিন-সহ এশিয়ার বিভিন্ন উন্নয়নশীল দেশ। এই ব্যাঙ্ক গড়ার অন্যতম লক্ষ্যই হল, এশিয়া জুড়ে পরিকাঠামো উন্নয়নের তহবিল জোগাড়ের জন্য শুধুমাত্র বিশ্বব্যাঙ্ক, আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডার মতো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের উপর নির্ভরশীলতা কমানো। যে প্রতিষ্ঠানগুলির পরিচালনা ও তহবিলে বহু বছর যাবৎ আধিপত্য আমেরিকা, ইউরোপ-সহ উন্নত দুনিয়ার দেশগুলির।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

বেজিং শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০১৪ ০০:৫৮
Share:

একজোট। ব্যাঙ্ক গড়ার জন্য সই করতে আসা বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা। শুক্রবার বেজিংয়ে। ছবি: এপি।

ব্রিকস ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্কের পর এ বার এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্ক বা এআইআইবি (এশীয় পরিকাঠামো লগ্নি ব্যাঙ্ক)। শুক্রবার এআইআইবি তৈরির জন্য চুক্তি সই করে ফের পশ্চিমী দুনিয়ার সামনে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিল চিন-সহ এশিয়ার বিভিন্ন উন্নয়নশীল দেশ। এই ব্যাঙ্ক গড়ার অন্যতম লক্ষ্যই হল, এশিয়া জুড়ে পরিকাঠামো উন্নয়নের তহবিল জোগাড়ের জন্য শুধুমাত্র বিশ্বব্যাঙ্ক, আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডার মতো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের উপর নির্ভরশীলতা কমানো। যে প্রতিষ্ঠানগুলির পরিচালনা ও তহবিলে বহু বছর যাবৎ আধিপত্য আমেরিকা, ইউরোপ-সহ উন্নত দুনিয়ার দেশগুলির।

Advertisement

বিশ্বব্যাঙ্ক ও অর্থভাণ্ডারের তহবিল জোগানো ও পরিচালনায় ছড়ি ঘোরায় মূলত আমেরিকা ও ইউরোপ। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক বা এডিবি-তে আবার প্রাধান্য জাপান ও আমেরিকার। কিন্তু ভারত, চিন-সহ উন্নয়নশীল দেশগুলি বেশ কিছু দিন ধরেই দাবি করে আসছে যে, অর্থনীতির ভরকেন্দ্র ক্রমশ সরছে এবং বিশ্ব অর্থনীতিতে গুরুত্ব বাড়ছে তাদের। ফলে তার প্রতিফলন থাকা উচিত আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলির কাঠামোয়। সেই জায়গা থেকেই এ দিন এই নতুন ব্যাঙ্ক তৈরির চুক্তিকে কার্যত বিশ্বব্যাঙ্কের দিকে এশিয়ার (বিশেষত চিনের) কড়া চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞেরা। তাঁদের মতে, এতে আদৌ খুশি হবে না আমেরিকা, ইউরোপ বা জাপান।

বিশেষজ্ঞদের মতে, তাঁদের এই অনুমান যে ভুল নয়, তার প্রমাণ এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ দেশ হয়েও এ দিন জাপানের অনুপস্থিতি। মার্কিন প্রশাসনেরও দাবি, এআইআইবি-র প্রস্তাব এখনও অস্পষ্ট। এই ব্যাঙ্ক পরিচালনা আন্তর্জাতিক মাপকাঠি মেনে ও স্বচ্ছতার সঙ্গে হওয়া উচিত। শুধু তা-ই নয়, এ দিন চুক্তি সই করেনি অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া এবং ইন্দোনেশিয়াও। এর মধ্যে প্রথম দুই দেশের অনুপস্থিতির পিছনেও মার্কিন প্রভাব কাজ করেছে বলে সংশ্লিষ্ট মহলের ধারণা।

Advertisement

এশীয় অঞ্চলে পরিকাঠামো উন্নয়নের তহবিল জোগাতে এই নতুন ব্যাঙ্ক তৈরির মূল হোতা চিন। যার সদর দফতরও হবে বেজিংয়ে। এ দিন তা গড়ার জন্য চুক্তি করতে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়েছিল তিয়েনানমেন স্কোয়ারের গা ঘেঁষা গ্রেট হল অব দ্য পিপল-এ। ভারত ও চিন-সহ মোট ২১টি দেশ সই করেছে তাতে। ভারতের হয়ে সই করেন অর্থ মন্ত্রকের আর্থিক বিষয় সংক্রান্ত বিভাগে জয়েন্ট সেক্রেটারি ঊষা তিতাস। চুক্তি অনুযায়ী, এই এশীয় পরিকাঠামো লগ্নি ব্যাঙ্কের মোট শেয়ার মূলধনের পরিমাণ হবে ১০ হাজার কোটি ডলার। তবে প্রাথমিক ভাবে হাতে থাকতে পারে ৫,০০০ কোটি ডলার।

ব্যাঙ্কটিতে কোন দেশের কতটা ভোট দানের অধিকার থাকবে তা এখনও স্থির হয়নি। সদস্য দেশগুলির সঙ্গে কথা বলেই এর নির্দিষ্ট মাপকাঠি ঠিক করা হবে। তবে সংশ্লিষ্ট মহলের ধারণা, এক একটি দেশের জাতীয় আয় এবং বাজারে কেনাকাটার ক্ষেত্রে সেখানকার মুদ্রার শক্তি কতটা, এই দুই মাপকাঠিতে ফেলেই বিচার করা হবে ওই অধিকার। আর শেষ পর্যন্ত যদি সত্যিই এই সমীকরণ মানা হয়, তা হলে চিনের (সম্ভবত ৫০% পর্যন্ত) পর ভারতই ব্যাঙ্কটির দ্বিতীয় বৃহত্তম শেয়ারহোল্ডার হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

তিতাসের দাবি, নয়া ব্যাঙ্ক পরিকাঠামো উন্নয়নে পুঁজি জোগাবে বলেই ভারত এতে উৎসাহী। এ আই আই বি-তে ভারতের যোগ দেওয়াকে স্বাগত জানিয়েছে এ দেশের শিল্পমহলও। ব্যাঙ্কের অন্যান্য সদস্যরা হল ভিয়েতনাম, উজবেকিস্তান, তাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, সিঙ্গাপুর, কাতার, ওমান, ফিলিপিন্স, ব্রুনেই, পাকিস্তান, নেপাল, বাংলাদেশ, কম্বোডিয়া, কাজাকাস্তান, কুয়েত, লাও পিডিআর, মালয়শিয়া, মঙ্গোলিয়া, মায়ানমার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন