শেয়ার বাজারের প্রতি এখন বিরাজ করছে সাধারণ মানুষের ভয়মিশ্রিত শ্রদ্ধা। বাজার এতটা ওঠায় ভাল যে লাগছে, সে বিষয় কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু পাশাপাশি ভয়, এই বুঝি পড়ে গেল। এই ভয় আরও জোরালো হয়েছে গত সপ্তাহে। সকাল দেখে নাকি বলে দেওয়া যায় দিনটা কেমন যাবে। শেয়ার বাজারের ক্ষেত্রে এ কথা অবশ্য খাটে না।
জানুয়ারিতে শিল্পোৎপাদন ০.১০ শতাংশ বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেকেরই মনে হয়েছিল, এ বার বুঝি শিল্পে মন্দা কাটতে চলেছে। বছরটা বোধহয় ভালই যাবে। কিন্তু ফেব্রুয়ারির বিভিন্ন পরিসংখ্যান এই আশার সঙ্গে একেবারেই সুর মেলায়নি। বছরের দ্বিতীয় মাসে শিল্পোৎপাদন সঙ্কুচিত হয়েছে ১.৯০ শতাংশ। ফলে সপ্তাহের শেষে নেমে এসেছে বিষাদের ছায়া।
এখানেই শেষ নয়। মার্চ মাসে ভারতের রফতানি কমেছে ৩.১৫ শতাংশ। তার আগের মাসে, অর্থাৎ ফেব্রুয়ারিতেও তা কমে গিয়েছিল। আর টানা দু’মাস রফতানি কমার কারণে বৈদেশিক বাণিজ্যে ঘাটতি বেড়ে পৌঁছেছে গত পাঁচ মাসের মধ্যে সবচেয়ে উঁচু জায়গায়।
সপ্তাহ শেষে তৃতীয় খারাপ খবর ছিল ২০১৩-১৪ বছরে গাড়ি বিক্রি কমে আসা। এই নিয়ে টানা দু’বছর কমলো দেশে যাত্রী গাড়ি বিক্রি। গত আর্থিক বছরে দেশে গাড়ি বিক্রি কমেছে ৪.৬৫ শতাংশ। এর ফলে আনুমানিক ১.৫ লক্ষ মানুষ কাজ হারিয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। এর আগে ২০১২-১৩ অর্থবর্ষে ওই গাড়ি বিক্রি কমেছিল ৬.৬৯ শতাংশ।
মনে রাখতে হবে, গাড়ি বিক্রির সঙ্গে ইস্পাত, টায়ার, রং, যন্ত্রাংশ ইত্যাদি শিল্পের চাহিদাও ওঠানামা করে। আবার গাড়ি বিক্রি বাড়লে বাড়ে ড্রাইভারের কর্মসংস্থান। সব মিলিয়ে যে দখিনা বাতাস বইতে শুরু করেছিল বাজারে, তা হঠাৎই স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে। শুক্রবার সূচকও পড়েছে খানিকটা। প্রতিকূল খবরগুলি অবশ্য শুক্রবার শেষবেলায় প্রকাশিত হওয়ায় বাজারের উপর এর পুরো প্রভাব এখনও স্পষ্ট হয়নি। অর্থাৎ শেয়ার বাজারের দিক থেকে বাংলার নতুন বছরের সূচনা যে তেমন ভাল হবে না, তা খানিকটা বোঝাই যাচ্ছে। মানুষের ভয়, বৈশাখে না চৈত্রের ‘সেল’ শুরু হয়! বাজারে এই হঠাৎ বইতে শুরু করা প্রতিকূল হাওয়াকে মোদী হাওয়া কতটা প্রতিরোধ করতে পারে, এখন সেটাই দেখার।
তবে আগামী দিনে বাজার কেমন যাবে তার অনেকটাই নির্ভর করবে বেশ কয়েকটি বিষয়ের উপর। এগুলির মধ্যে আছে—
(১) বিদেশি লগ্নিপ্রবাহ চালু থাকে কিনা,
(২) কেন্দ্রে বাজারের পছন্দমত সরকার গঠিত হয় কিনা,
(৩) ২০১৩-১৪ সালে সংস্থাগুলির ফলাফল কেমন হয়,
(৪) বিশ্ব বাজার কেমন থাকে,
(৫) বর্ষা কেমন হয় এবং
(৬) পণ্যমূল্য ও সুদ কমার সম্ভাবনা থাকে কি না।
বাজারের অনিশ্চয়তার আঁচ পেয়ে অনেকেই শেয়ার বিক্রি করেছেন গত সপ্তাহে। ভাঙানো হয়েছে অনেক মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিটও। এই পরিস্থিতিতে যদি বড় কোনও আশঙ্কা তৈরি হয়, তবে স্বাভাবিক ভাবেই বিক্রির চাপ বাড়তে পারে। এতে সূচকের পতনের পথ মসৃণ হবে। তবে আর্থিক বছরের শেষ দিনে শেয়ার সূচক উঁচু জায়গায় থাকায় বিশেষ সুবিধা হবে সেই সব সংস্থার, যাদের মোটা টাকা শেয়ারে লগ্নি করা আছে। এতে তাদের ব্যালান্স শিটের অনেকটাই উন্নতি ঘটবে। বাজার দরের উপর ভিত্তি করে বর্ষশেষে লগ্নির মূল্যায়ন করা যায়, যাকে অ্যাকাউন্ট্যান্সির পরিভাষায় বলা হয় ‘মার্ক টু মার্কেট’।
সপ্তাহ শেষে এক ডলারের দাম ছিল ৬০.১৭ টাকা। ভালই বলতে হবে। অন্য দিকে আবার পাকা সোনা (২৪ ক্যারাট) হাতবদল হয়েছে ২৯,৫০০ টাকায় (১০ গ্রাম)। বাজারের এখন দরকার দু’একটি ভাল খবর, যা পতনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে।
আর্থিক ফলাফলের মরসুম এ বার শুরু হতে চলেছে। প্রথম দিকে সাধারণত প্রযুক্তি সংস্থাগুলি তাদের ফলাফল নিয়ে হাজির হয়। এ বার অবশ্য ইনফোসিস, টিসিএস-এর মতো প্রথম সারির বড় তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলির থেকে এ ব্যাপারে আশার তুলনায় আশঙ্কাই বেশি। নববর্ষে এরা মিষ্টি না কি নোন্তা কোন ধরনের খবর পরিবেশন করে, এখন তা-ই দেখার অপক্ষায় সকলে।
এ দিকে, আর্থিক দিক থেকে পিছিয়ে থাকা মানুষের জন্য আশার কথা শুনিয়েছে দেশের তৃতীয় বৃহত্তম বেসরকারি ব্যাঙ্ক, অ্যাক্সিস ব্যাঙ্ক। ব্যাঙ্কটির দ্বিতীয় দশক পূর্তি উপলক্ষে তারা বাজারে এনেছে ‘আশা হোম লোন’ নামে একটি সহজ গৃহঋণ প্রকল্প। এক নজরে দেখে নেব প্রকল্পটির বৈশিষ্ট্যগুলি—
• মেয়াদ সর্বাধিক ৩০ বছর।
• ন্যূনতম আয়ের যোগ্যতা মাসে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা। এই আয় পরিবারের একাধিক সদস্যের মিলিত আয় হলেও চলবে।
• ঋণের পরিমাণ ছোট শহরের ক্ষেত্রে ১ লক্ষ টাকা থেকে ১৫ লক্ষ টাকা। এবং ১০ লক্ষের বেশি মানুষ বসবাস করেন এমন শহরে তা অনধিক ২৫ লক্ষ টাকা।
• যোগ্যতা চাকরিজীবী অথবা স্বনির্ভর।
• ঋণের ব্যবহার নির্মীয়মাণ অথবা তৈরি বাড়ি/ফ্ল্যাট এবং জমি কেনার জন্য নেওয়া যাবে এই ঋণ।
• কাগজপত্র এবং পদ্ধতি অনেকটাই সহজ।
• ইএমআইসহজে বহনযোগ্য।
• সুদ স্থায়ী (ফিক্সড) এবং পরিবর্তনশীল (ফ্লোটিং)।
• ঋণের সর্বাধিক পরিমাণবাড়ি/ফ্ল্যাটের দামের ৯০ শতাংশ।