এ বার জমা থাকা সোনার একাংশ কাজে লাগানোর পক্ষে সওয়াল করল দেশের শীর্ষস্থানীয় দুই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া এবং ব্যাঙ্ক অব বরোদা।
নগদের জোগান বাড়াতে স্বর্ণ আমানতকে ফেলে না-রেখে তার কিছুটাও টাকার আমানতের ধাঁচেই নগতে পরিণত করে সিআরআর ও এসএলআর খাতে বরাদ্দ করার দাবি জানিয়েছে এই দুই ব্যাঙ্ক। স্টেট ব্যাঙ্কের চেয়ারপার্সন অরুন্ধতী ভট্টাচার্য এবং ব্যাঙ্ক অব বরোদার চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর এস এস মুন্দ্রা আজ এখানে জেম অ্যান্ড জুয়েলারি এক্সপোর্ট প্রমোশন কাউন্সিল আয়োজিত ‘ব্যাঙ্কিং সামিট’-এ সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে এই আর্জি জানান।
কেন্দ্রের আর্থিক পরিষেবা সংক্রান্ত সচিব জি এস সন্ধু সভায় বলেন, “বিপুল পরিমাণ সোনা অকেজো হয়ে পড়ে আছে। স্বর্ণ সঞ্চয়কে আরও ভাল ভাবে কাজে লাগানোর অনুমতি চেয়ে অনেক সংস্থাই আর্জি জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রকের কাছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
প্রসঙ্গত, সি আর আর (ক্যাশ রিজার্ভ রেশিও) বা নগদ জমার অনুপাত হল বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কের টাকার আমানতের সেই অংশ, যা বাধ্যতামূলক ভাবে জমা রাখতে হয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছে। টাকার আমানতের যে-অংশ বাণিজ্যিক ব্যাঙ্ককে বাধ্যতামূলক ভাবে সরকারি ঋণপত্র ইত্যাদি খাতে লগ্নির জন্য সরিয়ে রাখতে হয়, সেটাই এস এল আর (স্ট্যাটুটরি লিক্যুইডিটি রেশিও) বা বিধিবদ্ধ জমার অনুপাত। বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলি দীর্ঘ দিন যাবৎই সিআরআর এবং এসএলআর খাতে রাখা টাকাকে ‘অনুৎপাদক’ বলে অভিযোগ জানিয়ে আসছে। তাদের মতে সিআরআর বাবদ জমা টাকায় সুদ মেলে না, এসএলআরে আয়ও যৎসামান্য।
এই যুক্তির ভিত্তিতেই নগদের অভাব মেটাতে সোনার আমানতের একাংশকেও নিয়ম মেনে সিআরআর ও এসএলআর খাতে বরাদ্দের জন্য হিসাবের আওতায় আনার পক্ষে জোরালো সওয়াল করেছে স্টেট ব্যাঙ্ক ও ব্যাঙ্ক অব বরোদা।
এ দিন অরুন্ধতী দেবী বলেন, “আমাদের সোনার আমানতের কিছুটা কি নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের পক্ষে সিআরআর বা এসএলআরের দায় মেটাতে কাজে লাগানোর অনুমতি দেওয়া সম্ভব? এটা তো মানতেই হবে, স্বর্ণ সম্পদের নিজস্ব মূল্য রয়েছে।” তাঁর দাবি, স্বর্ণ জমা প্রকল্পে সবচেয়ে বেশি আমানত রয়েছে স্টেট ব্যাঙ্কের। ওই সম্পদ লাভজনক ভাবে লগ্নি করতে তাঁরা আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন। তিনি জানান, “সঞ্চিত সোনার পুরোটা আমরা লাভজনক খাতে লগ্নি করতে পারছি না। বলতে গেলে, এই আমানত আরও বেশি করে সংগ্রহের তাই তেমন উৎসাহও ব্যাঙ্কের নেই।” নগদে পরিণত করে ওই জমাকে সিআরআর, এসএলআর বজায় রাখার জন্য কাজে লাগাতে পারলে তবেই তা লাভজনক হবে। সাম্প্রতিক কালে বিপুল পরিমাণ সোনা আমদানির চাপে বৈদেশিক মুদ্রার চলতি খাতে লেনদেন ঘাটতি যে ভাবে বেড়েছিল, সে প্রসঙ্গ টেনে আনেন এসবিআই চেয়ারপার্সন। তাঁর মতে, এই আমদানি কমাতেও সোনার সঞ্চয় কাজে লাগানো জরুরি।
অরুন্ধতী দেবীর সঙ্গে একই সুরে এ দিন ব্যাঙ্ক অব বরোদার সিএমডি মুন্দ্রা বলেন, “স্বর্ণ সম্পদের একাংশকে সিআরআর, এসএলআর খাতে কাজে লাগানোর দাবি যথেষ্ট যুক্তিসঙ্গত। এই সম্পদকে উৎপাদনশীল করে তুলে তা অর্থনীতির সার্বিক হাল ফেরাতে ব্যবহার করার পক্ষেও এটা জরুরি।” ব্যাঙ্ক কর্ণধারদের সঙ্গে একমত সন্ধুও। তিনিও সোনা আমদানি কমিয়ে আনার লক্ষ্যে স্বর্ণ সঞ্চয়কে কাজে লাগানোর কথা বলেন।
উল্লেখ্য, এই মুহূর্তে সিআরআর ৪ শতাংশ, এসএলআর ২২.৫ শতাংশ। এর আগে অরুন্ধতী দেবীর পূর্বসূরি প্রতীপ চৌধুরীও ব্যাঙ্কের হাতে নগদের জোগান বাড়াতে সিআরআর তুলে দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করেছিলেন। কেন্দ্র সোনার সঞ্চয়কে কাজে লাগাতে দিলে ব্যাঙ্কের নগদের ঘাটতি কিছুটা মিটবে বলেই আশা করছে সংশ্লিষ্ট শিল্পমহল।