পাঁচ রুগণ চা বাগানের উদ্যোগ

বিলগ্নিকরণে উপদেষ্টা নিয়োগ এ মাসেই

মাস দেড়েক আগে পাঁচ রুগ্ণ সরকারি চা বাগানের দরজা বেসরকারি বিনিয়োগের জন্য খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল রাজ্যের মন্ত্রিসভা। সরকারি সূত্রে খবর, সব ঠিকঠাক চললে সেই বিলগ্নিকরণ প্রক্রিয়ার জন্য উপদেষ্টা সংস্থা (ট্র্যানজাকশন অ্যাডভাইজর) নিয়োগও সম্পূর্ণ হয়ে যাবে এ মাসের মধ্যে। তার পর বিলগ্নিকরণের পদ্ধতি ঠিক করা থেকে শুরু করে বাগানের কতটা অংশীদারি বিক্রি করা হবে এই সমস্ত কিছুরই রূপরেখা তৈরি করবে তারা। পরামর্শ জোগাবে রাজ্য সরকারকে।

Advertisement

দেবপ্রিয় সেনগুপ্ত

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০১৪ ০২:১০
Share:

মাস দেড়েক আগে পাঁচ রুগ্ণ সরকারি চা বাগানের দরজা বেসরকারি বিনিয়োগের জন্য খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল রাজ্যের মন্ত্রিসভা। সরকারি সূত্রে খবর, সব ঠিকঠাক চললে সেই বিলগ্নিকরণ প্রক্রিয়ার জন্য উপদেষ্টা সংস্থা (ট্র্যানজাকশন অ্যাডভাইজর) নিয়োগও সম্পূর্ণ হয়ে যাবে এ মাসের মধ্যে। তার পর বিলগ্নিকরণের পদ্ধতি ঠিক করা থেকে শুরু করে বাগানের কতটা অংশীদারি বিক্রি করা হবে এই সমস্ত কিছুরই রূপরেখা তৈরি করবে তারা। পরামর্শ জোগাবে রাজ্য সরকারকে।

Advertisement

দার্জিলিঙের রঙ্গরুক-সিডার, পানডাম ও রঙ্গারুম। আর ডুয়ার্সের হিলা ও মহুয়া। ধুঁকতে থাকা এই পাঁচ চা বাগানের পুঞ্জীভূত ক্ষতির অঙ্ক দাঁড়িয়েছে ২৫৫ কোটি টাকা। তা ছাড়া ফি বছর তাদের পিছনে রাজ্যের খরচ প্রায় ২৫ কোটি। এই পরিস্থিতিতে ওই বাগানগুলিতে বেসরকারি পুঁজি আনার পরিকল্পনা মাস দেড়েক আগে ঘোষণা করে রাজ্য। যাতে আর্থিক ক্ষতি ও অপচয় এড়ানো সম্ভব হয়। আবার একই সঙ্গে বেসরকারি বিনিয়োগ ও দক্ষতাকে সামিল করে উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হয় বাগানগুলিতে।

রুগ্ণ বাগান বিলগ্নিকরণের এই পদক্ষেপকে প্রত্যাশিত ভাবেই স্বাগত জানিয়েছিল শিল্পমহল। এর মধ্যে রাজনৈতিক বাধা পেরিয়ে সংস্কারের পথে হাঁটার সদিচ্ছা দেখতে পেয়েছিল তারা। ঠিক তেমনই সেই বিলগ্নিকরণের রাস্তা ঠিক করতে উপদেষ্টা সংস্থার হাত ধরার সিদ্ধান্তেরও প্রশংসা করছে শিল্পমহল। তাদের মতে, ব্যবসায়িক ভাবে বাগানকে লাভজনক করতে পেশাদার মনোভাব একান্ত জরুরি। এবং তার উপযুক্ত রূপরেখা তৈরি করতে পারে পেশাদার পরামর্শদাতা সংস্থাই। উল্লেখ্য, লোকসান কমাতে তিন সরকারি পরিবহণ সংস্থাকে মিশিয়ে একটি করার দিকেও এগোচ্ছে রাজ্য।

Advertisement

শিল্প দফতর সূত্রে খবর, লোকসভা নির্বাচনের নির্ঘণ্ট ঘোষণার আগেই এই উপদেষ্টা সংস্থা নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করেছিল রাজ্য। এ জন্য সরকারি প্যানেলভুক্ত উপদেষ্টা সংস্থাগুলির সঙ্গে বার কয়েক বৈঠকও করেছেন শিল্প দফতরের কর্তারা। তার পর আগ্রহপত্র চাওয়া হয়েছে তাদের কাছ থেকে। যা খতিয়ে দেখে এ মাসের মধ্যেই পরমার্শদাতা নিয়োগ চূড়ান্ত হয়ে যাবে বলে দফতরের আশা।

তবে অনেকের মতে, বিলগ্নিকরণ প্রক্রিয়া একেবারে সম্পন্ন না-হওয়া পর্যন্ত এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করা শক্ত। কারণ, তা করতে চেয়ে ভেস্তে যাওয়ার উদারহরণ এ রাজ্যে ভুরি ভুরি। যেমন, বাম আমলে বিলগ্নিকরণের জন্য প্রাথমিক ভাবে ৩০টি সরকারি সংস্থাকে চিহ্নিত করা হলেও, বিস্তর টানাপোড়েনের পর শেষ পর্যন্ত সাফল্য এসেছিল মাত্র চারটি সংস্থার ক্ষেত্রে। দীর্ঘ দিন টানা লোকসানে চলা রুগ্ণ সরকারি সংস্থার ভার বইতে গিয়ে কোষাগারের উপর চাপ বাড়ার কথা বার বার বলেও লাভ হয়নি।

অনেক ক্ষেত্রে আবার বেসরকারিকরণ প্রস্তাবের বিরুদ্ধে প্রথমেই সোচ্চার হয় কর্মী সংগঠনগুলি। সম্ভবত সে কথা মাথায় রেখেই মন্ত্রিসভার বৈঠকে শিল্প তথা অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র শুরুতেই জানিয়ে দিয়েছেন যে, বাগানগুলির পূর্ণ বা আংশিক, কোনও কর্মীকেই ছাঁটাই করা হবে না। এমনকী তাঁদের অন্য সরকারি পদে নিয়োগ করেও রাজনৈতিক ক্ষতি সামাল দিতে চায় রাজ্য।

ধুঁকতে থাকা বাগানগুলির কর্মীদের বেতন ও রেশন ইতিমধ্যেই অনিয়মিত হয়ে পড়েছে। অন্যত্র কর্মীরা যে হারে বেতন পান, এই সব বাগানের কর্মীরা পান তার থেকে কম। বকেয়া বাড়ছে রেশনেরও। তাই এই পরিস্থিতিতে দ্রুত কোনও সমাধান বার করতে না-পারলে, বাগানগুলিকে দীর্ঘ দিন এ ভাবে টানা সম্ভব হবে না বলে মনে করেন খোদ সরকারি কর্তারাই।

কিন্তু ইউনিয়নের দাপট সামলে রুগ্ণ সংস্থার বেসরকারিকরণে তৃণমূল সরকার সফল হবে? না কি থমকে যাবে সেই বাম সরকারেরই মতো? আপাতত সে দিকেই চোখ সকলের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন