কয়লা খননের জন্য বেসরকারি ক্ষেত্রের দরজা চলতি বছরেই খুলে দিতে চায় কেন্দ্র। এ নিয়ে এখনই সময়সীমা বেঁধে না-দিলেও অদূর ভবিষ্যতেই বাণিজ্যিক ভিত্তিতে খয়লা খননে বেসরকারি সংস্থাকে সামিল করতে জোরদার তৎপরতা শুরু করে দিয়েছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। সেই কারণেই, নিলামের মাধ্যমে বেসরকারি সংস্থার হাতে খনি তুলে দেওয়া হবে বাণিজ্যিক ভাবে খনন শুরুর জন্য। দাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বৈঠকে সম্প্রতি এই ইঙ্গিতই দেন কয়লা ও বিদ্যুৎমন্ত্রী পীযূষ গয়াল।
খনি হাতে পেলে তা থেকে কয়লা তোলা ও বিক্রির অধিকার পাবে বেসরকারি সংস্থা। এ ব্যাপারে ডিসেম্বরেই অর্ডিন্যান্স জারি করে কেন্দ্র, যাতে সায় দিয়েছেন রাষ্ট্রপতিও। তবে যে-সব খনি সরাসরি বিদ্যুৎ, সিমেন্ট, ইস্পাতের মতো শিল্পে সরাসরি কয়লা জোগাচ্ছে, সেগুলির বণ্টনকেই অগ্রাধিকার দেবে কেন্দ্র। প্রাথমিক ভাবে তাদেরই নিলামে সামিল করে খনি হাতে দিতে দরপত্র চেয়েছে কেন্দ্র। তবে সার্বিক ভাবে কেন্দ্রের লক্ষ্য দেশে কয়লা উৎপাদন বাড়িয়ে আমদানির উপর রাশ টানা।
বিদ্যুৎ শিল্পই যেহেতু অগ্রাধিকার পাবে, তাই গৌতম আদানি-র আদানি গোষ্ঠী এবং জিভিকে প্রথম দফাতেই তাদের দরপত্র দেবে বলে শিল্পমহল সূত্রের খবর। কারণ, প্রয়োজন মতো কয়লা জোগানের অভাবে তাদের উৎপাদন অনেক সময়েই ব্যাহত হচ্ছে বলে অভিযোগ।
প্রসঙ্গত, কয়লা শিল্পে গত ৬ জানুয়ারি থেকে ডাকা দেশ জুড়ে ডাকা পাঁচ দিনের ধর্মঘট গয়ালের আশ্বাসেই উঠে যায় দ্বিতীয় দিনেই। মন্ত্রীর সঙ্গে একটানা ছ’ঘণ্টার বৈঠকের পরে শেষ পর্যন্ত ধর্মঘট থেকে সরে আসতে রাজি হয় ৫টি কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন। গয়াল ধর্মঘটীদের আশ্বস্ত করে বলেছিলেন, কোল ইন্ডিয়ার বেসরকারিকরণের কোনও পরিকল্পনা কেন্দ্রের নেই। পাশাপাশি, কোল ইন্ডিয়া-র কর্মীদের স্বার্থও দেখবে কেন্দ্র।
তবে পরের দিনই গয়াল সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন, কর্মীদের সঙ্গে রফার অর্থ এই নয় যে, সংস্কারের পথ থেকে সরে আসবেন তাঁরা। মন্ত্রক সূত্রেও জানানো হয়েছে, কর্মীদের কাছে দেওয়া প্রতিশ্রুতি ও কেন্দ্রের সংস্কার কর্মসূচির মধ্যে কোনও বিরোধ নেই। তার কারণ, ১০% বিলগ্নিকরণের অর্থ বেসরকারিকরণ নয়, সংস্থার মালিকানা বদলও নয়। কিন্তু কয়লা শিল্পে দক্ষতা বাড়াতে বেসরকারি পুঁজির পথ প্রশস্ত করতে কেন্দ্র বদ্ধপরিকর। বস্তুত, দক্ষতা বাড়াতে ও কয়লার দাম কমাতে সংস্কারকেই দাওয়াই হিসেবে মনে করছে কেন্দ্র। তার লক্ষ্য ২০১৯-এর মধ্যে ভারতের ১২০ কোটি মানুষের প্রত্যেকের কাছে দিনরাত বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া। কয়লা সরবরাহ বাড়াতে তাই সাহসী সিদ্ধান্তই লক্ষ্য কেন্দ্রের।
শিল্পমহলের অবশ্য ধারণা, কর্মীরা ভয় পাচ্ছেন যে, খনন ক্ষেত্রে বেসরকারি সংস্থা পা রাখলে কোল ইন্ডিয়াও প্রতিযোগিতায় এঁটে উঠতে খরচ কমাতে বাধ্য হবে। যার জেরে কর্মী ছাঁটাই হতে পারে, কমতে পারে তাঁদের বেতনও। কারণ, দেশে কয়লা উৎপাদনের ৮০% কোল ইন্ডিয়াই করে থাকে। বিশেষজ্ঞদের অভিযোগ, এই একচেটিয়া বাজারে মান্ধাতার আমলের কাঠামো ও বিপুল কর্মীর বহর নিয়ে ক্রমেই অদক্ষ হয়ে পড়ছে সংস্থা। আর, ঠিক এই কারণেই সরকার এবং ভারতের জনগণ, উভয়ের স্বার্থেই কয়লা খননে বেসরকারি সংস্থার পুরোদস্তুর পা রাখা জরুরি বলে মন্তব্য করেন গয়াল। আর রাষ্ট্রায়ত্ত কয়লা শিল্পে এ বছরেই সেই সংস্কার পর্ব সেরে ফেলার লক্ষ্যে এগোচ্ছে কেন্দ্র।