ইঙ্গিত কেন্দ্রের

বছর শেষেই বাজার দরে ডিজেল

এ বার মোদী সরকারের হাত ধরেই আর্থিক সংস্কারের ক্ষেত্রে ঘোষিত হতে চলেছে আর একটি সাহসী পদক্ষেপ। চলতি বছরের শেষেই ডিজেলের দামের উপর সরকারি নিয়ন্ত্রণ উঠে যাচ্ছে বলে বৃহস্পতিবার ইঙ্গিত দিয়েছেন কেন্দ্রীয় অর্থ সচিব অরবিন্দ মায়ারাম। অর্থাৎ বিশ্ব বাজারে তেলের দাম যে-ভাবে ওঠা-নামা করবে, তার ভিত্তিতেই ডিজেলের দাম বাড়বে বা কমবে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০১৪ ০১:১৬
Share:

অ্যাসোচ্যামের সভায় মায়ারাম। ছবি: পিটিআই।

এ বার মোদী সরকারের হাত ধরেই আর্থিক সংস্কারের ক্ষেত্রে ঘোষিত হতে চলেছে আর একটি সাহসী পদক্ষেপ। চলতি বছরের শেষেই ডিজেলের দামের উপর সরকারি নিয়ন্ত্রণ উঠে যাচ্ছে বলে বৃহস্পতিবার ইঙ্গিত দিয়েছেন কেন্দ্রীয় অর্থ সচিব অরবিন্দ মায়ারাম। অর্থাৎ বিশ্ব বাজারে তেলের দাম যে-ভাবে ওঠা-নামা করবে, তার ভিত্তিতেই ডিজেলের দাম বাড়বে বা কমবে।

Advertisement

ডিজেলের উপর ভর্তুকি কমানোর কাজটা শুরু হয়েছিল মনমোহন সিংহের জমানাতেই। ২০১৩-র জানুয়ারি থেকে প্রতি মাসে গড়ে ৫০ পয়সা করে ডিজেলের দাম বাড়ানো শুরু হয়। যাতে বাজার দরের সঙ্গে ভর্তুকিতে বিক্রি করা ডিজেলের দামের ফারাকটা কমে আসে। কিন্তু একেবারে ভর্তুকি তোলার সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি মনমোহন সরকার। ডিজেলের দাম বাড়লে জিনিসপত্রের দাম আরও বাড়বে। কারণ পণ্য পরিবহণে ব্যবহৃত ট্রাক-লরি ডিজেলে চলে। ইউ পি এ নেতৃত্বের আশঙ্কা ছিল, ডিজেলের দাম বাড়লে ও জিনিসপত্রের দর চড়া হলে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ তৈরি হবে। ভোট বাক্সে তার প্রতিফলন পড়া নিয়ে চিন্তিত ছিল তারা। সেই কারণেই ২০১০-এর জুনে পেট্রোলের দাম বাজারের হাতে ছাড়লেও, ডিজেলে সেই সাহস দেখাতে পারেনি ইউপিএ সরকার।

নরেন্দ্র মোদীর সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ডিজেলের দামে ভর্তুকি কমতে কমতে তার দর বাজারের ভিত্তিতে হিসাব করা দামের সমান হয়ে গেলে আর ভর্তুকি দেওয়া হবে না। তারপর থেকে সরকার নয়, বাজারই ঠিক করবে ডিজেলের দাম। আজ বণিকসভা অ্যাসোচ্যমের সভায় মায়ারাম বলেন, “কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত হল, প্রতি মাসে ডিজেলে ভর্তুকি ৫০ পয়সা করে কমানো। অর্থাৎ মাসে ৫০ পয়সা করে দাম বাড়বে। যখন ভর্তুকি শূন্য হয়ে যাবে, দাম বাজারের হাতেই চলে যাবে।”

Advertisement

২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসে প্রতি লিটার ডিজেলে কেন্দ্রকে প্রায় ১৩ টাকা করে ভর্তুকি দিতে হত। তারপর থেকে ১৮ দফায় মোট ১১ টাকা ২৪ পয়সা দাম বাড়ানো হয়েছে ডিজেলের। চলতি মাসের শেষ হিসেব অনুযায়ী, এক লিটার ডিজেল বিক্রি করে এখন তেল সংস্থাগুলির ১ টাকা ৭৮ পয়সা করে ক্ষতি হয়। সেটাই সরকার ভর্তুকি হিসেবে দেয়। অর্থাৎ ৫০ পয়সা করে দাম বাড়ানো হলে আর তিন থেকে চার মাসের মধ্যেই ডিজেলের দামে কোনও ভর্তুকি দিতে হবে না। কিন্তু তারপর বাজারে ডিজেলের দাম বাড়লেও সরকার যে ভর্তুকি দেবে না, আজ সেটাই স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন অর্থ সচিব।

এ ক্ষেত্রে অবশ্য কেন্দ্র আশা করছে, খুব তাড়াতাড়ি বিশ্ব বাজারে অশোধিত তেলের দাম বাড়ছে না। এই দাম আজই ব্যারেল প্রতি ১০২ ডলারে নেমে এসেছে। যা গত ১৪ মাসে সব থেকে কম। মায়ারাম বলেন, “আমরা ভাগ্যবান, কারণ তেলের দাম কমছে। আমার আশা, খুব শীঘ্রই ডিজেলে ভর্তুকির বোঝা থেকে বেরিয়ে আসতে পারব।” এক দিকে ডিজেলের ভর্তুকি তুলে দেওয়া, অন্য দিকে আমজনতার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি নগদ ভর্তুকি পৌঁছে দেওয়া এই দুইয়ের প্রভাবে পেট্রোলিয়ামের উপর ভর্তুকির বোঝা অনেকটাই কমে আসবে বলে মোদী সরকারের আশা।

অরুণ জেটলির বাজেট অনুযায়ী, চলতি অর্থবর্ষে ডিজেল, কেরোসিন ও রান্নার গ্যাসে কেন্দ্রকে প্রায় ৬৩ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হবে। গত বছর যা ছিল ৮৫ হাজার কোটিরও বেশি। তেল সংস্থাগুলির হিসেবে, এখন প্রতিদিন এই তিনটি পণ্য বিক্রিতে ২৩০ কোটি টাকা করে ক্ষতি হয়। ডিজেলে যেমন লিটার প্রতি ১ টাকা ৭৮ পয়সা করে ক্ষতি হয়, তেমনই কেরোসিনে লিটারে প্রায় ৩৩ টাকা করে ক্ষতি হয় সরকারের। রান্নার গ্যাসে সিলিন্ডার প্রতি প্রায় ৪৪৮ টাকা করে ক্ষতি হয়।

রান্নার গ্যাসে অবশ্য ভর্তুকিতে দেওয়া সিলিন্ডারের সংখ্যা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কেরোসিনের ক্ষেত্রে ভর্তুকি কমানোর এখনও কোনও উপায় খুঁজে বার করতে পারেনি পেট্রোলিয়াম মন্ত্রক। ডিজেলের উপর থেকে সরকারি নিয়ন্ত্রণ তুলে নিলেও কেরোসিনের ক্ষেত্রে এখনই সে কথা ভাবছে না পেট্রোলিয়াম মন্ত্রক। তবে নগদ ভর্তুকির পাশাপাশি কেরোসিনে ভর্তুকি কমানোর অন্য কোনও অভিনব উপায় বার করার চেষ্টা চালাচ্ছে পেট্রোলিয়াম মন্ত্রক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন