উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করেও বন্ধ চা বাগান চালুর প্রশ্নে কার্যত এক পা-ও এগোতে পারল না কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার। আইনি জটিলতা এবং বন্ধ বাগান হস্তান্তরের ক্ষেত্রে নানা সমস্যার জট যে কে সেই থেকে গেল।
রাজ্যের পাঁচটি বাগান বন্ধ। সেই সব এলাকায় অপুষ্টি ও অনাহারে চলতি মাসেই ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। প্রায় তিন হাজার শ্রমিকের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। এই ঘটনা নিয়ে রাজ্যে যেমন শাসক ও বিরোধীদের মধ্যে রাজনৈতিক চাপান-উতোর শুরু হয়েছে, তেমনই আবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাগান খোলার দায় কেন্দ্রের উপর চাপিয়ে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনকে চিঠি দিয়েছিলেন। এর পরেই ঠিক হয় রাজ্যের মুখ্য সচিব সঞ্জয় মিত্রের সঙ্গে বৈঠক করতে কলকাতায় আসবেন কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রকের অতিরিক্ত সচিব রজনী রঞ্জন রশ্মি। পাশাপাশি বন্ধ বাগানগুলির পুনরুজ্জীবনের ‘বাস্তবসম্মত’ পথ খুঁজতে প্রয়োজনীয় আইন সংশোধনেও ফের উদ্যোগী হবে কেন্দ্রীয় সরকার।
সেই সূত্রেই বৃহস্পতিবার কলকাতায় আসেন রশ্মি। নবান্নে রাজ্যের মুখ্য সচিব-সহ পদস্থ আমলাদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। তাঁর সঙ্গে টি বোর্ডের চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ ও অন্য কর্তারাও ছিলেন। পরে রশ্মি জানান, তাঁরা গোটা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখছেন। আলোচনা চলছে। দিল্লি ফিরে গিয়ে এ দিনের বৈঠক সম্পর্কে তাঁরা মন্ত্রককে অবহিত করবেন। তারপর ফের কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে এ নিয়ে কথা হবে। তাঁর ও টি বোর্ডের চেয়ারম্যানের দাবি, কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকার, সকলেই সমস্যার জট খুলতে যছেষ্ট আগ্রহী।
কিন্তু বাস্তবে তার সম্ভাবনা কি তৈরি হয়েছে? সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, এ দিন কার্যত জট খোলা নিয়ে কোনও রফাসূত্র মেলেনি। বরং রাজ্যের সেই একই দাবি, কেন্দ্রীয় আইনে বন্ধ বাগান নতুন মালিককে হস্তান্তর করুক টি বোর্ড। যদিও টি বোর্ডের দাবি, সে ক্ষেত্রে আইনি জটিলতা অনেক বেশি। আগেও সেই পথে এগিয়ে আইনি প্রশ্নেই থমকে গিয়েছে হস্তান্তর প্রক্রিয়া। বরং তাদের দাবি, বাগানের জমির লিজ দেয় রাজ্য। সে ক্ষেত্রে মালিক বাগান বন্ধ করলে তাঁর লিজ বাতিল করে অন্য কারও হাতে তা তুলে দিক রাজ্য। কিন্তু তা হলে বাগানের সব দায় রাজ্যের উপর চলে আসতে পারে, এই আশঙ্কায় রাজ্য আপাতত কেন্দ্রীয় আইনের দিকেই বল ঠেলছে, মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।
এ দিন পরে বাগানগুলিকে ঋণ দেওয়া ব্যাঙ্ক, চা শিল্পমহল ও বন্ধ বাগানের কিছু মালিকের সঙ্গেও আলাদা করে বৈঠক করেন রশ্মি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর, ব্যাঙ্কের প্রতিনিধিরা জানান, বন্ধ বাগানগুলিতে বিপুল ঋণ বকেয়া আছে। চা শিল্পের বক্তব্য, বন্ধ বাগানের দায়ভার নিতে হলে ছাড় দিতে হবে সরকারকে, যাতে আগের মালিকের দায় নতুন মালিককে মেটাতে না-হয়।
বস্তুত, এই সব সমস্যা ও জট না-কাটাতে পারলে শুধু কেন্দ্রীয় আইন সংশোধন করলেই সমাধানসূত্র মিলবে না, দাবি সংশ্লিষ্ট মহলের। সে ক্ষেত্রে রাজ্যেরও বড় দায় রয়েছে। শুধু কেন্দ্রের উপর দায় চাপালেই বাগান খুলবে, এমন আশা নিরর্থক বলেই অনেকে মনে করেন। চা শিল্পমহলের একাংশের ধারণা, শীঘ্রই মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করতে আসতে পারেন সীতারামন। তার আগে রাজ্যের মনোভাব ও বাস্তব পরিস্থিতি বুঝতেই এসেছিলেন রশ্মি।