বন্ধ চা বাগানের সমস্যা নিয়ে রাজ্যের সঙ্গে বৈঠক করতে শীঘ্রই আসছেন কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রকের অতিরিক্ত সচিব রজনী রঞ্জন রশ্মি। পাশাপাশি, বন্ধ বাগান পুনরুজ্জীবনের ‘বাস্তবসম্মত’ পথ খুঁজতে আইন সংশোধনেও ফের উদ্যোগী হবে কেন্দ্র। শুক্রবার টি বোর্ড সূত্রে এই ইঙ্গিত মিলেছে। যদিও আইনি জটিলতা না কাটলে শুধু আলোচনায় কতটা কাজ হবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে সংশ্লিষ্ট মহলেই।
দেশের আটটি বন্ধ বাগানের পাঁচটি এ রাজ্যে। ওই সব বাগান এলাকায় অপুষ্টি ও অনাহারে চলতি মাসে ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। প্রায় ৩,০০০ শ্রমিকের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। এ নিয়ে রাজ্যে যেমন শাসক ও বিরোধীদের মধ্যে চাপানউতোর শুরু হয়েছে, তেমনই মুখ্যমন্ত্রীও বাগান খোলার দায় কেন্দ্রের উপর চাপিয়ে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনকে চিঠি দিয়েছেন।
তবে শুক্রবার এক অনুষ্ঠানের ফাঁকে টি বোর্ডের চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ অপুষ্টি, অনাহারে বাগানে মৃত্যুর খবর মানতে চাননি। তবে বন্ধ বাগানে আয়ের সূত্র কী, তারও উত্তর মেলেনি তাঁর কাছে। সিদ্ধার্থের দাবি, বাগান পুনরুজ্জীবনের পথ খুঁজতে হপ্তা দু’য়ের মধ্যেই তাঁরা রাজ্যের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন। কেন্দ্রীয় চা আইন (১৯৫৩) সংশোধনেও ফের উদ্যোগী হবেন।
বন্ধ বাগান খোলার ক্ষেত্রে সমস্যা দু’দিক দিয়ে। প্রথমত, জমির মালিক সরকার। তারা জমি লিজ দেয়। তাই মালিক বাগান বন্ধ করলে রাজ্য লিজ বাতিল করে তা অন্য সংস্থাকে দিতে পারে, দাবি টি বোর্ডের একাংশের। কিন্তু সে ক্ষেত্রে বাগানের সব দায় রাজ্যের উপর আসতে পারে। তাই তারা লিজ বাতিলের সিদ্ধান্ত নিতে তেমন উৎসাহী হয় না।
জমির মালিকানা বদল না-হলে, উপায় শুধু বাগান পরিচালনার ভার হস্তান্তর। বস্তুত, কেন্দ্রীয় চা আইনে সেই কথা বলাও রয়েছে। ফলে লিজ বাতিলের দায় এড়াতে রাজ্য কেন্দ্রীয় আইন কার্যকরের দাবি তুলছে বলে অনেকের ধারণা।
কিন্তু টি বোর্ডের একাংশের মতে, ওই আইন স্রেফ কাগুজে বাঘ। কারণ তিন মাস বাগান বন্ধ থাকলে তার পরিচালন ভার অন্য সংস্থা বা মালিককে হস্তান্তর আইনি ভাবে করা গেলেও তা বাস্তবসম্মত নয়। তাই আগেও তা কাযর্কর করতে গিয়ে হোঁচট খেয়েছে বোর্ড। বাগান নিয়ে মামলা থাকলে এই হস্তান্তর করা যায় না। তা ছাড়া, ঋণদাতা ব্যাঙ্ক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান প্রাপ্য আগে দাবি করে। কিন্তু সেই খরচ কোনও নতুন সংস্থা বহন করতে আগ্রহী হয় না।
আবার যেহেতু মালিকানা বদল হবে না, তাই নতুন সংস্থা বা মালিক ওই জমি বন্ধক রেখে ঋণও নিতে পারেন না। আইন অনুযায়ী, গোড়ায় তিনি ৫ বছর বাগান চালানোর অনুমতি পান। কিন্তু তার মধ্যে লাভের আশা কার্যত না-থাকায় এই বিপুল খরচ সামলে বাগানের দায়িত্ব নেওয়ার ক্ষেত্রে তেমন সাড়া মেলে না। যদিও ৫ বছর পরেও প্রতি বছর কাজ খতিয়ে দেখে আরও ছ’বছর নতুন সংস্থাকে সুযোগ দিতে পারে বোর্ড। শিল্পমহলও বলছে, বন্ধ বাগানের দায় নিতে না হলে চালু বাগানের কর্তৃপক্ষ সেগুলির ভার নেওয়ার কথা ভাবতে পারে।
অতীতে দু’একটি বন্ধ বাগানের ক্ষেত্রে আগ্রহী মালিক দরপত্র দেওয়ার পরে তা পরিদর্শনে গেলে ইউনিয়ন ও শ্রমিকদের একাংশের বাধার মুখে পড়েছেন। টি বোর্ড সূত্রে খবর, কাজ না-করেই যা সরকারি সাহায্য মেলে তা কাযর্ত মজুরির চেয়ে বেশি। উপরন্তু বাগান না-চললেও ইউনিয়নের ছত্রছায়ায় অনেক সময় পাতা তুলে বটলিফ কারখানায় তা বিক্রি করা হয়। সে ক্ষেত্রে বাড়তি আয় হয় সব পক্ষেরই। এ ছাড়া, কেউ কেউ অন্য কাজ করেও বাড়তি রোজগার করতে পারেন। এই দুষ্ট চক্রই বাগান পরিচালনার হস্তান্তরে অন্তরায় তৈরি করে। সব মিলিয়ে জটিল জটেই আটকে থাকে হস্তান্তরের মাধ্যমে বাগান পুনরুজ্জীবনের ভাবনা।