রাজ্যে নয়া কেন্দ্র গড়ার পরিকল্পনা স্থগিত মেট্রো ক্যাশ অ্যান্ড ক্যারি-র

ফের ধাক্কা। রাজ্যে সম্প্রসারণের পরিকল্পনা স্থগিত করে দিল মেট্রো ক্যাশ অ্যান্ড ক্যারি। কলকাতায় ২০০৮ সালে ই এম বাইপাসের ধারে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ সরবরাহ কেন্দ্র চালু করেছিল জার্মান বহুজাতিকটি। তারও আগে থেকে তাদের পরিকল্পনা ছিল এ রাজ্যে আরও দু’টি কেন্দ্র তৈরি করার। এমনকী সে জন্য দিল্লি রোডের কাছে এবং উত্তর চব্বিশ পরগনায় দু’টি জমিও দেখেছিল তারা।

Advertisement

গার্গী গুহঠাকুরতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:১১
Share:

ফের ধাক্কা। রাজ্যে সম্প্রসারণের পরিকল্পনা স্থগিত করে দিল মেট্রো ক্যাশ অ্যান্ড ক্যারি।

Advertisement

কলকাতায় ২০০৮ সালে ই এম বাইপাসের ধারে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ সরবরাহ কেন্দ্র চালু করেছিল জার্মান বহুজাতিকটি। তারও আগে থেকে তাদের পরিকল্পনা ছিল এ রাজ্যে আরও দু’টি কেন্দ্র তৈরি করার। এমনকী সে জন্য দিল্লি রোডের কাছে এবং উত্তর চব্বিশ পরগনায় দু’টি জমিও দেখেছিল তারা। কিন্তু সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর, এখন সেই দু’টি কেন্দ্র গড়ার ভাবনাচিন্তা থেকে সরে এসেছে পাইকারি হিসেবে এক ছাদের তলায় বহু ব্র্যান্ডের পণ্য বিক্রি করা জার্মান বহুজাতিকটি। এই মুহূর্তে যাদের ব্যবসা ছড়িয়ে রয়েছে ২৯টি দেশে।

শুধু তা-ই নয়। কলকাতায় চালু কেন্দ্রটিতেও কর্মী সঙ্কোচনের পথে হাঁটতে চলেছে মেট্রো ক্যাশ অ্যান্ড ক্যারি। ওই কেন্দ্রের বেশ কিছু কর্মীকে ইতিমধ্যেই ভারতে সংস্থার সদর দফতর বেঙ্গালুরুতে যোগ দিতে বলা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর, কলকাতা কেন্দ্রে বন্ধ রাখা হয়েছে বার্ষিক বেতন বৃদ্ধিও।

Advertisement

সংশ্লিষ্ট শিল্পমহলের মতে, চুক্তি-চাষ ও কৃষকদের থেকে সরাসরি পণ্য কেনার বিষয়ে রাজ্যের বিরূপ মনোভাব নিয়ে মেট্রো কর্তৃপক্ষের অস্বস্তি ছিলই। এখন কৃষি বিপণন আইন সংশোধন পিছিয়ে যাওয়ায় সেই অস্বস্তি বেড়েছে। উল্লেখ্য, সম্প্রতি কৃষি বিপণনে নয়া আইন তৈরির জন্য বিধানসভায় বিল আনার পরেও তা পাশ হয়নি। পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে বিধানসভার সিলেক্ট কমিটির কাছে।

এখন মেট্রো ক্যাশ অ্যান্ড ক্যারির মোট লাভের ৩০ শতাংশই আসে তাজা কৃষিপণ্য বেচে। এ রাজ্যে সংস্থার পা রাখার পিছনেও অন্যতম প্রধান কারণ ছিল পশ্চিমবঙ্গে কৃষিপণ্য উৎপাদনের পরিমাণ। কিন্তু এখানে ব্যবসার রাস্তায় প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়াচ্ছিল, সেই কৃষিপণ্য সরাসরি চাষিদের থেকে কেনার ক্ষেত্রে বিস্তর বিভিনিষেধ।

অনেকে মনে করছেন, নতুন কৃষি বিপণন আইন তৈরির সম্ভাবনা হয়তো কিছুটা আশা জাগিয়েছিল জার্মান সংস্থাটিকে। কিন্তু আপাতত সেই সম্ভাবনা হিমঘরে চলে যাওয়ায় হতাশ তারা। তার উপর তোলাবাজি-সহ নানা সমস্যার জেরে সামগ্রিক ভাবেও রাজ্যের ভাবমূর্তি যেখানে পৌঁছেছে, তাতে এই মুহূর্তে এখানে আর ব্যবসা বাড়াতে উৎসাহিত বোধ করছে না মেট্রো। কর্মী কমানো বা কর্মীদের বেতন না-বাড়ার মতো সমস্যার উৎসও সম্ভবত তা-ই। সংস্থার তরফে অবশ্য এ বিষয়ে কেউ মুখ খোলেননি। প্রসঙ্গত, কেন্দ্রীয় কৃষি বিপণন আইন অন্যান্য ১৬টি রাজ্যে চালু হয়ে গেলেও, পশ্চিমবঙ্গ-সহ কিছু রাজ্যে তা মানা হয়নি। থমকে গিয়েছে রাজ্যের তরফে নয়া আইন প্রণয়নের প্রক্রিয়াও।

এ রাজ্যে অবশ্য একেবারে গোড়া থেকেই বাধায় পড়েছে মেট্রোর বিনিয়োগ। ‘এগ্রিকালচারাল প্রোডিউস মার্কেট কমিটি’ বা এপিএমসি ছাড়পত্র নিয়ে টালবাহানা তো ছিলই। সঙ্গী ছিল জমি নিয়ে আইনি সমস্যাও।

মেট্রো পাইকারি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। অর্থাৎ, শুধু ছোট ব্যবসায়ীরাই তাদের কাছ থেকে পণ্য কিনতে পারবেন। অন্যান্য রিটেল (খুচরো ব্যবসা) সংস্থার মতো ট্রেড লাইসেন্স না-থাকা আমজনতাকে পণ্য বিক্রি করে না তারা। কিন্তু খুচরো ব্যবসা ও পাইকারি ব্যবসার সেই ফারাক জেনেও শুরুতে এ রাজ্যে মেট্রোর বিনিয়োগ ঠেকানোর চেষ্টা করেছিল তৎকালীন বাম সরকারের শরিক ফরওয়ার্ড ব্লক। বহু বিতর্কের পরে ২০০৬ সালে শেষ পর্যন্ত এপিএমসি ছাড়পত্র (লাইসেন্স) পায় সংস্থাটি।

এ রাজ্যে এপিএমসি আইন নিয়েও জলঘোলা হয়েছে বিস্তর। রাজনৈতিক টানাপড়েনের জেরে এই আইনে সংশোধন না-হওয়ায় খুচরো ব্যবসার ক্ষেত্রেও মোটা অঙ্কের বিনিয়োগ থমকে গিয়েছে। তখন ওই লাইসেন্স না-পাওয়ায় পশ্চিমবঙ্গে খুচরো ব্যবসা চালুর পরিকল্পনা বাতিল করতে বাধ্য হয়েছিল রিলায়্যান্স। পরে তারা কয়েকটি বিপণি চালু করলেও, কৃষিপণ্য কেনা ও সংরক্ষণ ব্যবস্থার পরিকল্পনা নিয়ে বেশি দূর এগোয়নি মুকেশ অম্বানীর সংস্থা।

ভারতে মেট্রো ক্যাশ অ্যান্ড ক্যারি পা রেখেছিল ২০০৩ সালে। ২০০৬ সালে এ রাজ্যে ব্যবসা শুরুর কথা ঘোষণা করেন সংস্থা কর্তারা। বেঙ্গালুরুতে পাইকারি ব্যবসা শুরু করে মুম্বই, হায়দরাবাদ, কলকাতা-সহ বিভিন্ন শহরে তৈরি হয়েছে সংস্থাটির স্বয়ংসম্পূর্ণ সরবরাহ কেন্দ্র। ভারতে ১৬টি। মেট্রোর দাবি, ২০২০ সালের মধ্যে এ দেশে ৫০টি পাইকারি কেন্দ্র চালু হবে।

ভারতে যখন সংস্থাটি এ ভাবে ব্যবসা বাড়ানোর কথা বলছে, তখন তারাই আবার সম্প্রসারণ পরিকল্পনা খারিজ করে দিচ্ছে এই রাজ্যে। অথচ ২০০৬ সালে এ রাজ্যে ব্যবসা শুরুর সময় তাদের দাবি ছিল, তিন বছরের মধ্যে এখানে পাঁচটি অত্যাধুনিক গুদাম গড়া হবে। তাতে সংরক্ষণের জন্য থাকবে হিমঘর। থাকবে বন্টনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও।

সমস্যা ও বিরোধিতার বিস্তর বাধা পেরিয়ে এক সময় আশা জাগিয়ে যাত্রা শুরুর এই রাজ্যেই এখন সম্প্রসারণ পরিকল্পনা স্থগিত করে দিল মেট্রো।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন