বস্তা জোগানোয় দুর্নীতির অভিযোগ

রাজ্যে ৭টি চটকলের বরাত বন্ধ করল পঞ্জাব

এ বার কেন্দ্রীয় আইন অপব্যবহারের অভিযোগ উঠল রাজ্যের ৭টি চটকলের বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত চটকলগুলি হল, নর্থব্রুক, হেস্টিংস, গৌরীশঙ্কর, রামেশ্বর, ডেল্টা, ভিক্টোরিয়া ও ইন্ডিয়া জুট মিল। চটের বস্তার বরাত পাওয়া কেন্দ্রীয় আইনে নিশ্চিত। আর, চটকল মালিকদের একাংশ তার সুযোগ নিয়েই দুর্নীতিতে জড়িত বলে তদন্ত শুরু করে তাদের বরাত দেওয়া ইতিমধ্যেই বন্ধ করেছে পঞ্জাব সরকার। অভিযোগ, বাংলাদেশ ও নেপালের মতো প্রতিবেশী দেশ থেকে নিম্নমানের সস্তার বস্তা এনে ওই রাজ্যকে সরবরাহ করা সরকারি বরাতে ঢুকিয়ে কোটি কোটি টাকার ফায়দা তুলেছে এই সব চটকল।

Advertisement

প্রভাত ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০১৪ ০২:১৮
Share:

এ বার কেন্দ্রীয় আইন অপব্যবহারের অভিযোগ উঠল রাজ্যের ৭টি চটকলের বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত চটকলগুলি হল, নর্থব্রুক, হেস্টিংস, গৌরীশঙ্কর, রামেশ্বর, ডেল্টা, ভিক্টোরিয়া ও ইন্ডিয়া জুট মিল।

Advertisement

চটের বস্তার বরাত পাওয়া কেন্দ্রীয় আইনে নিশ্চিত। আর, চটকল মালিকদের একাংশ তার সুযোগ নিয়েই দুর্নীতিতে জড়িত বলে তদন্ত শুরু করে তাদের বরাত দেওয়া ইতিমধ্যেই বন্ধ করেছে পঞ্জাব সরকার। অভিযোগ, বাংলাদেশ ও নেপালের মতো প্রতিবেশী দেশ থেকে নিম্নমানের সস্তার বস্তা এনে ওই রাজ্যকে সরবরাহ করা সরকারি বরাতে ঢুকিয়ে কোটি কোটি টাকার ফায়দা তুলেছে এই সব চটকল। এ নিয়ে অনুসন্ধান চালিয়েই ‘চুরি’ ও ‘নিম্নমানের বস্তা’ পাঠানোর অভিযোগে পঞ্জাব সরকার ৭টি চটকলকে বরাত দিতে অস্বীকার করেছে।

গত ৪ অগস্ট বিষয়টি নিয়ে পঞ্জাব সরকার কলকাতায় অবস্থিত জুট কমিশনারের দফতরে চিঠি দেয়। তাতে জানানো হয়েছে, বস্তা নির্দিষ্ট মানের তো নয়ই, এমনকী চুরি করা এবং ব্যবহৃত (সেকেন্ড হ্যান্ড) বস্তা নতুন করে সরবরাহ করারও অভিযোগ তোলা হয়েছে ওই চিঠিতে। চিঠি পাওয়ার পরে জুট কমিশনার সুব্রত গুপ্ত পঞ্জাব সরকারকে অভিযোগের প্রামাণ্য নথি দাখিল করতে বলেন। এর পরে পঞ্জাব সরকারের কেন্দ্রীয় ভিজিল্যান্স কমিশন তদন্ত শুরু করে। চলতি মাসের গোড়ায় চণ্ডীগড় থেকে তদন্তের রিপোর্ট ও বিভিন্ন প্রমাণ পাঠানো হয় কলকাতায়। এই সঙ্গেই জুট কমিশনারকে অনুরোধ জানানো হয়, ভবিষ্যতে বস্তার বরাত যেন এই ৭টি চটকলকে দেওয়া না-হয়।

Advertisement

তদন্ত রিপোর্টে বলা হয়েছে, এক একটি চটকল থেকে পাঠানো ৫০০ বস্তার প্রতিটি গাঁটে খুব বেশি হলে ৫টি করে বস্তা খারাপ থাকতে পারে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে ৬০-৭০টি করে খারাপ বস্তা পাঠানো হয়েছে। ওজন নির্দিষ্ট থাকলেও বরাতে জোগান দেওয়া অধিকাংশ বস্তার ওজন অনেক কম। এ ছাড়া, বহু বস্তায় বাংলাদেশ বা নেপালের কোম্পানির ছাপ মারা। প্রচুর বস্তা পাঠানো হয়েছে, যেগুলিতে অন্য মালপত্র বহন করার প্রমাণ লেগেছিল। রিপোর্ট পাওয়ার পরে কমিশনার অভিযুক্ত চটকলগুলিকে জানালে একটি সংস্থা আদালতে মামলা করে।

জুট কমিশনারের দফতরের এক সূত্র জানান, ১৯৮৭ সালের জুট প্যাকেজিং মেটেরিয়ালস (কম্পালসরি ইউজ ইন প্যাকিং কমোডিটিজ) আইন অনুসারে চটের বস্তার বাধ্যতামূলক ব্যবহারের যে-ব্যবস্থা কেন্দ্র করে দিয়েছে, তার লক্ষ্য চটকলের ব্যবসা বাড়ানো এবং শ্রমিক ও পাটচাষিদের উপার্জন নিশ্চিত করা। কিন্তু বাস্তবে তার বিপরীত ঘটেছে বলে অভিযোগ। নিম্নমানের বস্তা জোগান দিয়ে নিজেদের মিলে উৎপাদনও মালিকরা ছাঁটাই করেছেন বলে অভিযোগ, যার জেরে মার খেয়েছেন কর্মীরা। পঞ্জাব সরকারের তদন্তে তা ফাঁস হয়ে গিয়েছে।

কিন্তু জুট কমিশনারের দফতর বস্তার গুণমান পরীক্ষার ব্যবস্থা করে না কেন? কমিশনার বলেন, “ভারত সরকারের ডিরেক্টরেট জেনারেল অব সাপ্লাই অ্যান্ড ডিসপোজাল্স (সংক্ষেপে ডিজিএসডি) কোন রাজ্যে কত বস্তা লাগবে জানায়। সেই অনুযায়ী আমরা চটকলগুলির উৎপাদন ক্ষমতা দেখে বরাত ভাগ করে দিই। কমিশনারের দফতরে গুণমান পরীক্ষা করে দেখার পরিকাঠামো নেই বলে সে দায়িত্ব দেওয়া হয় ডিজিএসডি-র অধীন ডিরেক্টরেট অব কোয়ালিটি অ্যাশিওরেন্স (ডিসিএ)-কে। তারা বলতে পারবে পঞ্জাব কী করে এই দুর্নীতির প্রমাণ পেল।” এক সূত্রের অভিযোগ, ডিসিএ অফিসারদের যোগসাজশেই চটকল মালিকেরা অনাচার চালিয়ে যাচ্ছিলেন। এ নিয়ে একটি অভিযুক্ত চটকলের মালিক শ্রীকুমার তোষনিওয়াল বলেন, “আমার সংস্থার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল ঠিকই। কিন্তু প্রমাণ হয়নি। তবে, যে-অভিযোগ উঠেছে, তার সবটাই ভুল নয়। কিছু চটকল মালিক সত্যিই এ রকম অন্যায় করে চলেছেন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন