স্পাইসজেটের ডানায় কিংফিশারের ছায়া

অনেকটা একই উপসর্গ। বাকি পড়েছে কর্মীদের বেতন। বসিয়ে দিতে হচ্ছে বিমান। বাজারে ক্রমশ বাড়ছে বিশাল অঙ্কের ঋণ। সব মিলিয়ে, স্পাইসজেটের ডানাতেও যেন কিংফিশারের ছায়া। পরিস্থিতি এতটাই উদ্বেগজনক যে, খোদ বিমানমন্ত্রী অশোক গজপতি রাজু-র মুখেও উঠে আসছে তাই কিংফিশারেরই উদাহরণ। তিনি বলছেন, “কিংফিশার এক প্রস্ত আঘাত দিয়েছে আমাদের।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৩:০৮
Share:

অনেকটা একই উপসর্গ। বাকি পড়েছে কর্মীদের বেতন। বসিয়ে দিতে হচ্ছে বিমান। বাজারে ক্রমশ বাড়ছে বিশাল অঙ্কের ঋণ। সব মিলিয়ে, স্পাইসজেটের ডানাতেও যেন কিংফিশারের ছায়া।

Advertisement

পরিস্থিতি এতটাই উদ্বেগজনক যে, খোদ বিমানমন্ত্রী অশোক গজপতি রাজু-র মুখেও উঠে আসছে তাই কিংফিশারেরই উদাহরণ। তিনি বলছেন, “কিংফিশার এক প্রস্ত আঘাত দিয়েছে আমাদের। এ বার স্পাইসজেটের জন্য হার্ট অ্যাটাক হওয়ার জোগাড়।” নড়েচড়ে বসেছে বিমান পরিবহণ নিয়ন্ত্রক ডিরেক্টরেট জেনারেল অব সিভিল অ্যাভিয়েশনও (ডিজিসিএ)। শুক্রবারই তারা কলানিধি মারানের স্পাইসজেট-কে কড়া নির্দেশ দিয়েছে ১০ দিনের মধ্যে কর্মীদের বকেয়া বেতন মিটিয়ে দেওয়ার। প্রতি মাসে বেতন দিতে বলেছে ৭ তারিখের মধ্যে। চুকিয়ে দিতে বলেছে পাওনাদারদের টাকা। বারণ করেছে, এক মাসের বেশি আগে থেকে টিকিট বিক্রি করতে। আর রোজ যে সমস্ত উড়ান বাতিল হচ্ছে, তার টিকিটের টাকাও যাত্রীদের ফেরত দিয়ে দিতে নির্দেশ দিয়েছে তারা।

শুধু তা-ই নয়। বাজারে স্পাইসজেটের বকেয়া দাঁড়িয়েছে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা। যার বেশির ভাগটাই পাবে বিভিন্ন তেল সংস্থা ও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর, বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দিয়েছে, নতুন করে আর ধার দেওয়া হবে না স্পাইসজেটকে। কোনও বিমানবন্দরে নামার জন্য ল্যান্ডিং চার্জ, সেখানে বিমান রাখার পার্কিং চার্জ, যাত্রীদের মালপত্র বহনের জন্য ব্যাগেজ চার্জ ইত্যাদি সমস্ত কিছুই নগদে মিটিয়ে দিতে হবে তাদের।

Advertisement

সেপ্টেম্বরেও যেখানে সংস্থা ৩৫টি বিমান চালাচ্ছিল, সেখানে এখন তারা চালাচ্ছে ২৪টি বিমান। উড়ান সংখ্যা কমে গিয়েছে সারা দেশে। তা বাতিলও হচ্ছে ঘন ঘন। অসন্তুষ্ট ডিজিসিএ তাই ১৮৬টি স্লট বাতিল করেছে। বলেছে, অবিলম্বে নতুন উড়ানসূচি জমা দিতে হবে সংস্থাকে। যা দেখে বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়। সংস্থার অবশ্য দাবি, স্লট ফেরতের বিষয়টি রুটিন ঘটনা।

বিমান সংস্থা সূত্রে খবর, সম্প্রতি স্পাইসজেট ছেড়ে গিয়েছেন ১২৫ জন পাইলট। ফলে সংস্থাকে ডিজিসিএ সতর্ক করে বলেছে, কম পাইলট দিয়ে বেশি উড়ান চালাতে গিয়ে যেন নির্দিষ্ট সময়ের বেশি উড়তে বাধ্য করা না হয় তাঁদের।

আর এই সমস্ত উপসর্গ দেখেই আঁতকে উঠছেন বিশেষজ্ঞরা। জানাচ্ছেন, একটু পিছনে ফিরলেই দেখা যাবে, কিংফিশারের ক্ষেত্রেও ঠিক এই একই ভাবে একের পর এক নির্দেশ জারি করতে বাধ্য হয়েছিল ডিজিসিএ। যা কার্যকর করতে ব্যর্থ হয়েছিল বিজয় মাল্যর সংস্থাটি। টানা এক বছরেরও বেশি সময় স্পাইসজেটের ক্ষতির অঙ্ক কমানো যায়নি। বেড়েছে বাজারে ধার। অনেকেই বলছেন, বছর কয়েক আগে ঠিক এ ভাবেই একের পর এক চাপ এসেছিল কিংফিশারের উপরেও। চাপে পড়ে শেষে গুটিয়ে গিয়েছে সেই সংস্থা। পরিস্থিতি দেখে এ দিন স্পাইসজেটের শেয়ার দরও পড়েছে অনেকখানি।

কিন্তু একই সঙ্গে যে প্রশ্ন উঠছে, তা হলে এই বেহাল দশায় কয়েক মাস আগেও এক টাকার টিকিট প্রকল্প ঘোষণা করা হল কেন? সংস্থার যুক্তি, ইন্ডিগো এবং গো-এয়ারের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় হাঁসফাঁস দশা হয়েছিল। তার উপরে সম্প্রতি বাজারে এসেছে টাটা এবং এয়ার এশিয়ার যৌথ বিমান সংস্থা। সব মিলিয়ে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে বাধ্য হয়েই ওই ঘোষণা।

সংস্থার সিওও সঞ্জীব কপূর জানান, এই অবস্থায় একমাত্র বাঁচাতে পারে লগ্নি। আপাতত চেষ্টা হচ্ছে বাইরে থেকে বড় অঙ্কের বিনিয়োগ জোগাড় করার। কী আশ্চর্য! মুখ থুবড়ে পড়ার আগে কিংফিশারও তো ঠিক এমনই বলেছিল!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন