পুলিশ আবাসনে ডেঙ্গির থাবা, আতঙ্কে বাসিন্দারা

গত পাঁচ বছরে এই আবাসনের ৫৯ জন আবাসিক ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন। তবুও প্রশাসন সতর্ক হয়নি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০১:৫৬
Share:

যত্রতত্র: পুলিশ আবাসন চত্বরে জমে রয়েছে আবর্জনা। রবিবার, টালিগঞ্জে। নিজস্ব চিত্র

ছুটি নিয়ে কেউ কেউ আবাসন ছেড়ে জেলার বাড়িতে চলে গিয়েছেন। কেউ আবার সদ্য সেই আবাসনে ফিরেছেন হাসপাতাল থেকে। টালিগঞ্জের পুলিশ আবাসনে চলতি বছরে পাঁচ জন ডেঙ্গি আক্রান্ত হওয়ায় আতঙ্কিত বাসিন্দারা।

Advertisement

টালিগঞ্জ থানার সামনে ১৭৮এ, শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি রোডের ঠিকানায় তিনটি বহুতলে রয়েছে এই পুলিশ আবাসন। সেখানেই ১২তলা বাড়ির নীচের তলায় কলকাতা পুলিশের একাধিক অফিস রয়েছে। আবাসিকদের অভিযোগ, গত পাঁচ বছরে এই আবাসনের ৫৯ জন আবাসিক ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছেন। তবুও প্রশাসন সতর্ক হয়নি।

রবিবার টালিগঞ্জের ওই আবাসন চত্বরে ঢুকে দেখা গেল, চারপাশ জঞ্জাল আর আগাছায় ভর্তি। আবাসিকদের অভিযোগ, জঞ্জাল নিয়মিত পরিষ্কার হয় না। কলকাতা পুরসভা এবং পূর্ত দফতরের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ তুলছেন তাঁরা। এ দিন দুপুরে আবাসনের সামনে পূর্ত দফতরের আধিকারিককে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান মহিলা আবাসিকেরা। তিনটি বহুতলের একাধিক জায়গা থেকে চাঙড় খসে পড়ার অভিযোগও করছেন তাঁরা। এক আবাসিকের অভিযোগ, ‘‘মাঝারি বৃষ্টিতেই চুঁইয়ে জল পড়ে। দিন কয়েক আগে বাথরুমে বড় চাঙড় খসে পড়েছিল। অল্পের জন্য বেঁচে গিয়েছি।’’

Advertisement

২০০৮ সাল থেকে টালিগঞ্জ পুলিশ আবাসনে রয়েছেন শ্রেয়া দে। তাঁর কথায়, ‘‘২০১৪ সালে ডেঙ্গি এবং ২০১৬ সালে ম্যালেরিয়া হয়েছিল আমার। প্রতি বর্ষায় আতঙ্কে থাকি। মশার ভয়ে মশারির নীচে পড়াশোনা করতে হয়।’’ লালবাজারে কর্মরত এক পুলিশকর্মীর কিশোরী-কন্যা সপ্তাহখানেক আগে কলকাতার হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন। আতঙ্কে ওই পরিবার বর্ধমানের বাড়িতে ফিরে গিয়েছে। ফোনে ওই পুলিশকর্মী এ দিন বললেন, ‘‘দু’বছর আগে ওখানে বড় মেয়ের ডেঙ্গি হয়েছিল। এ বার ডেঙ্গির জন্য ছোট মেয়ে বাইপাসের এক হাসপাতালে সপ্তাহখানেক ভর্তি ছিল। এখন আবাসনে ফিরতেই ভয় হচ্ছে।’’

কেন এই হাল পুলিশ আবাসনের? লালবাজার সূত্রের খবর, আবাসনের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পূর্ত দফতরের। ওই দফতরের উদাসীনতায় আবাসনের সংস্কার শিকেয় উঠেছে বলে অভিযোগ। এ দিন দুপুরে পূর্ত দফতরের টালিগঞ্জ সাব ডিভিশনের অফিস অ্যাসিন্ট্যান্ট ইন্দ্রজিৎ পুরকাইত আবাসনে হাজির হলে তাঁকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান মহিলারা। আবাসনের বেহাল অবস্থার কথা মেনে নিয়ে ইন্দ্রজিৎবাবু বলেন, ‘‘আবাসন সংস্কার জরুরি। কিন্তু লালবাজার থেকে আর্থিক অনুদান না পাওয়ায় সংস্কার শুরু করা যাচ্ছে না।’’ নিয়মিত জঞ্জাল পরিষ্কার না করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘জঞ্জাল পরিষ্কার করা পুরসভার কাজ।’’ এ প্রসঙ্গে স্থানীয় কাউন্সিলর তথা কলকাতা (দক্ষিণ) লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ মালা রায়কে ফোন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘দূরে রয়েছি। কথা বলতে পারব না।’’ স্বাস্থ্য দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত তথা কলকাতার ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষের দাবি, ‘‘পুলিশ আবাসনের জঞ্জাল সাফাই করা পুরসভার কাজ নয়। তবু টালিগঞ্জের ওই আবাসনে কেন ডেঙ্গি ছড়াল সে বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হবে। পুর স্বাস্থ্য দফতরের দল শীঘ্রই ওই আবাসন পরিদর্শনে যাবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন