কলকাতা কড়চা

মেঘের মতো কালো রঙ দেখেই বাদল নাম রাখা হয়েছিল কিনা জানি না।... কিন্তু সেই কালো মুখে সাদা ঝকঝকে হাসিটা উজ্জ্বল।’ (সমরেশ বসু) ‘মেদিনীপুরের ছেলে বাদল, প্যারিস হোক বা লন্ডনই হোক, লুঙ্গিটা না পরলে ঠিক জুত হয় না।’ (সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়) ‘কর্তাব্যক্তি ধুতিশার্ট, কুচকুচে বরণ/ ‘কী চাই বলে ফেলুন’ এই তার ধরন...’ (জয় গোস্বামী)।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০১৬ ০০:০১
Share:

আশ্চর্য সময়ের রেশ থেকে যায়

Advertisement

মেঘের মতো কালো রঙ দেখেই বাদল নাম রাখা হয়েছিল কিনা জানি না।... কিন্তু সেই কালো মুখে সাদা ঝকঝকে হাসিটা উজ্জ্বল।’ (সমরেশ বসু) ‘মেদিনীপুরের ছেলে বাদল, প্যারিস হোক বা লন্ডনই হোক, লুঙ্গিটা না পরলে ঠিক জুত হয় না।’ (সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়) ‘কর্তাব্যক্তি ধুতিশার্ট, কুচকুচে বরণ/ ‘কী চাই বলে ফেলুন’ এই তার ধরন...’ (জয় গোস্বামী)। সমসময়ের তিন বিশিষ্ট সাহিত্যিকের মন্তব্য যে মানুষটিকে ঘিরে, বিশ শতকের শেষ দু’দশকে বাংলা প্রকাশনার জগতে সবাই তাঁকে এক ডাকে চিনত। শুধু এই তিনজন কেন, লেখালিখির সঙ্গে জড়িত খুব কম মানুষই ছিলেন, বাদল বসুর (পোষাকি নাম দ্বিজেন্দ্রনাথ বসু, ১৯৩৭-২০১৫) সঙ্গে যাঁদের কোনও যোগাযোগ ছিল না। পশ্চিম মেদিনীপুরের দহিজুড়ি গ্রামের স্কুলপালানো ছেলেটি পঞ্চাশের দশকে কলকাতায় এসে সেই যে ছাপাখানার তেলকালিকাগজে বাঁধা পড়ে গেল, আজীবন সেই সম্পর্ক আর ছিন্ন হয়নি।

Advertisement

আনন্দ পাবলিশার্সের প্রকাশক হিসেবে নবীন-প্রবীণ খ্যাত-অখ্যাত লেখকদের পাণ্ডুলিপি খুঁজে আনা, শিল্পিত অবয়বে তা ছাপার ব্যবস্থা করা যেমন সেই কাজের বহিরঙ্গ, তেমনই লেখক-শিল্পীদের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক (যার সূচনা ষাটের দশক থেকেই) বজায় রেখে তাঁদের ভালমন্দে জড়িয়ে থাকা ছিল তার অন্দরমহল।

আর এই অন্দরমহলের ঘনিষ্ঠ অভি়জ্ঞতাই বাদল বসুর স্মৃতিচারণকে (পিওন থেকে প্রকাশক। অনুলিখন ও সম্পাদনা: সিজার বাগচী। আনন্দ) দিয়েছে অন্য মাত্রা। সম্প্রতি প্রকাশিত ছশো পাতার এই বইয়ের বাহাত্তরটি অধ্যায়ে কত না বর্ণময় মানুষের মিছিল। শুধু দেশের নয়, বিদেশেরও। কলকাতা বইমেলার সঙ্গে ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলা। অভিজ্ঞতা অন্দরমহলের বলেই হয়তো আছে অনেক বিতর্কিত প্রসঙ্গও, কিন্তু তাতে ছন্দপতন হয়নি কোথাও। সোজা কথা আড্ডার মেজাজে সোজাসুজি বলেছেন, তরতরিয়ে পড়ে ফেলা যায়। চেনা যায় এক অন্য রকম প্রকাশককে, তার সঙ্গে রেশ থেকে যায় এক আশ্চর্য সময়ের, যা আর ফিরবে না। সঙ্গে বাঁ দিকে প্রচ্ছদ, ডানে দ্বিতীয় প্রচ্ছদ থেকে রৌদ্র মিত্রের আঁকা বাদল বসুর প্রতিকৃতি।

কান্তকবি

দ্বিজেন্দ্রলাল, রজনীকান্ত এবং অতুলপ্রসাদের গানকে তিনি তুলে ধরেছেন বাঙালির মননে। দেশবিদেশে পঞ্চকবির গানকে নব প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন সংগীতশিল্পী ঋদ্ধি বন্দ্যোপাধ্যায়। কান্তকবির (১৮৬৫-১৯১০) সার্ধশতবর্ষ উপলক্ষে তাঁর সম্পাদিত ও সংকলিত প্রথম গ্রন্থ রজনীকান্ত (পত্রভারতী) প্রকাশিত হবে আজ সন্ধে ৬টায় স্টারমার্কে (সাউথ সিটি)। সংকলনে থাকছে কবি লিখিত ‘আমার জীবন’ ও ‘হাসপাতালের কড়চা’, তাঁকে নিয়ে অন্যদের স্মৃতিচারণ, নির্বাচিত গান এবং দুষ্প্রাপ্য কিছু ছবি ও পাণ্ডুলিপি। সঙ্গে রজনীকান্ত সেনের দশটি গানের সিডি। অনুষ্ঠানে কথায় ও গানে থাকবেন বিশিষ্টজন। কান্তকবির জন্মদিনে, ২৬ জুলাই বিকেল ৪টেয় হেদুয়া পার্কে ‘ঋদ্ধি আ স্টেপ ফর মিউজিক’ ও কলকাতা পুরসভার যৌথ উদ্যোগে এবং কবির পরিবারবর্গের সাহায্যে কবির মর্মর মূর্তি স্থাপিত হবে। সেই উপলক্ষে ভারত ও বাংলাদেশের শিল্পী সমন্বয়ে, ঋদ্ধির বিন্যাস-ভাবনা-পরিচালনায় ২৯ জুলাই সন্ধে ৭টায় আই সি সি আর-এ আছে একটি অনুষ্ঠান।

স্মরণ

জীবনের আকস্মিক বাঁকে শান্তিনিকেতনের কলাভবনে পড়তে না এলে তাঁকে হয়তো আমরা চিনতাম স্বাধীনতা সংগ্রামী হিসেবেই। ১৯২৪-এ কেরলে জন্মানো কে জি সুব্রহ্মণ্যন ছিলেন অর্থনীতির কৃতী ছাত্র। মহাত্মা গাঁধীর আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে ঝাঁপিয়েছিলেন স্বাধীনতার লড়াইয়ে। চিত্রশিক্ষা শুরু ১৯৪৪-এ, নন্দলাল বসু বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায় রামকিঙ্কর বেজ’এর কাছে। বডোদরায় শিক্ষকতার শুরু, তার পর লন্ডন নিউ ইয়র্ক ঘুরে, দুনিয়া জয় করে শান্তিনিকেতনে স্থায়ী বসবাস, বিশ্বভারতীতে শিক্ষকতা, সর্বোচ্চ পদ্ম-সম্মান প্রাপ্তি, সর্বোপরি আজীবন ছবি আঁকা। আধুনিক চিত্রকলা-ভাস্কর্যের প্রবাদপ্রতিম এই শিল্পী ছিলেন সকলের প্রিয় ‘মানিদা’। আচমকা চলে-যাওয়া মানুষটিকে নিয়ে নন্দন-এর সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে স্মরণ তপন সিংহ ফাউন্ডেশন-এর, ৩০ জুলাই সন্ধে ৬টা। থাকবেন শুভাপ্রসন্ন, সুশোভন অধিকারী। দেখানো হবে তাঁকে নিয়ে তৈরি গৌতম ঘোষের তথ্যচিত্র ‘দ্য ম্যাজিক অব মেকিং’। সঙ্গে তপন সিংহ ফাউন্ডেশন-এর কর্ণধার অরিজিৎ মৈত্রকে দেওয়া শিল্পীর একটি সাক্ষাৎকারও।

হীরকজয়ন্তী

দেশভাগের পর ছিন্নমূল মানুষের উচ্চশিক্ষার জন্য উত্তর শহরতলিতে তেমন কোনও কলেজ ছিল না। এই অসুবিধে দূর করতে উদ্যোগী হয় তদানীন্তন সরকার। ১৯৫৬ সালে বরাহনগরের ব্রহ্মানন্দ কেশবচন্দ্র কলেজের প্রতিষ্ঠা এর পরিপ্রেক্ষিতেই। আজও এই কলেজের ছাত্রছাত্রীদের একটা বড় অংশই আসে সমাজের নিম্নবিত্ত অনগ্রসর অংশ থেকে। উচ্চশিক্ষার মানের জন্য এক সময় এই প্রতিষ্ঠানকে সাধারণ মানুষ চিনতেন ‘খালপাড়ের প্রেসিডেন্সি’ বলে। সেই কলেজ ২৭ জুলাই হীরকজয়ন্তী পূর্ণ করতে চলেছে। এই উপলক্ষে ৩১ জুলাই সারা দিন নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পাশে থাকছে তিনটি মনোজ্ঞ আলোচনা: বলবেন সাহা ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার ফিজিক্সের প্রাক্তন শিক্ষক পুরুষোত্তম চক্রবর্তী ও নিতাইপদ ভট্টাচার্য এবং বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য স্মৃতিকুমার সরকার। বক্তারা সকলেই এই কলেজের প্রাক্তন ছাত্র।

আকস্মিক

শিল্প-ইতিহাস চর্চায় যাঁরা ভারতীয় মননকে সমৃদ্ধ করেছেন, তারণকুমার বিশ্বাস তাঁদের অন্যতম। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাচীন ভারতীয় ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করার পর, ‘ভারতীয় শিল্পকলায় ‘অশ্ব’ কত ভাবে ও কত অভিমুখে উপস্থাপিত হয়েছে’ তা নিয়ে গবেষণা করেন শিল্প-ইতিহাসবিদ কল্যাণকুমার গঙ্গোপাধ্যায়ের কাছে। এর পর নিজের আগ্রহ প্রসারিত করেন সংগ্রহশালা সংক্রান্ত বিদ্যা চর্চায়। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবগঠিত মিউজিওলজি বিভাগ থেকে ডিপ্লোমা নেন। সেই সময়ই দেবপ্রসাদ ঘোষের সান্নিধ্যে আসেন। কর্মজীবনে বেনারস হিন্দু বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারত কলাভবনে যুগ্ম অধিকর্তা ও প্রধান ছিলেন। পরে কলকাতার বিড়লা অ্যাকাডেমি-র অধিকর্তার দায়িত্ব নেন, আমৃত্যু ছিলেন সেই পদেই। ভারতীয় পুথিচিত্র সহ চিত্রকলার নানা দিকে ছিল তাঁর আগ্রহ। শিল্প, মূর্তিতত্ত্ব ও সংগ্রহশালাবিদ্যা নিয়ে লিখেছেন বেশ কয়েকটি বই ও বহু প্রবন্ধ। ভিজিটিং প্রফেসর হিসাবে পড়িয়েছেন দেশের নানা সংগ্রহশালা ও বিশ্ববিদ্যালয়ে। সম্প্রতি কাজ করছিলেন নব্যভারতীয় চিত্রকলা নিয়ে। প্রকাশিতব্য অশোক ভট্টাচার্য সম্মাননা গ্রন্থে শিল্পী শৈলেন দে-র বিষয়ে প্রবন্ধটিই শিল্পী বিষয়ে সম্ভবত তাঁর শেষ আলোচনা। আকস্মিক হৃদরোগে প্রয়াত হলেন তিনি।

খাদ্যসংস্কৃতি

সুকুমার রায় সেই কবেই লিখে গিয়েছেন— ‘যত কিছু খাওয়া লেখে বাঙালির ভাষাতে,/ জড় করে আনি সব, থাক সেই আশাতে।’ বাংলা ভাষায় খাদ্যসংস্কৃতি বিষয়ে দুই মলাটের মধ্যে তথ্য মেলা খুব কঠিন। অল্প কিছু বই বাদ দিলে খাবার নিয়ে চর্চা মূলত রন্ধনপ্রণালীতেই আটকে আছে। সে কারণেই বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে খাদ্যসংস্কৃতিকে বোঝানোর চেষ্টা রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্য সান্যাল ও অনার্য তাপস সম্পাদিত নুনেতে ভাতেতে সংকলনটিতে (দ্য কাফে টেবল, পরি: খোয়াবনামা প্রান্তজনের কথা, নরেন্দ্রপুর)। একটি কবিতা সহ ১৭টি অধ্যায়ের বইটিতে দুই বাংলা ছাড়াও ভারতের অন্যান্য রাজ্যের খাদ্যসংস্কৃতির বৈচিত্র নিয়ে আলোচনা রয়েছে। শস্য উৎপাদন, সংরক্ষণ, খাদ্যোপযোগীকরণ, রান্না, পরিবেশন রীতি, খাওয়া, খাদ্য বা শস্যকে নিয়ে গড়ে ওঠা মানুষের আচার-প্রথা-সংস্কার এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনা— পুরো চক্রটিই ধরা পড়েছে।

ইন্দিরা

ভারতীয় রেলের কর্মী পিতা নরেন্দ্রনাথ চৌধুরীর কর্মস্থল বিহারের ভোজুড়িতে তাঁর জন্ম হলেও, পৈতৃক বাস দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার সরিষায়। স্থানীয় বিদ্যালয়ের পাঠ শেষ করে সুভাষ চৌধুরী (১৯৩৫-২০১২) পড়তে গিয়েছিলেন শান্তিনিকেতনে সংগীতভবনে। শিক্ষকরূপে পেয়েছিলেন শৈলজারঞ্জন মজুমদার, শান্তিদেব ঘোষ, ভি ভি ওয়াঝলওয়ার, অশেষ বন্দ্যোপাধ্যায়দের। সরিষা রামকৃষ্ণ মিশনে স্বল্পকালীন সংগীত শিক্ষকতা শেষে বিশ্বভারতী গ্রন্থনবিভাগে যোগদান এবং স্বরলিপি অধীক্ষকরূপে অবসর নেন। তিনিই সংগীতভবনের দুই প্রাক্তনী সুপূর্ণা ঠাকুর (পরে সহধর্মিণী) এবং জয়শ্রী রায়কে সঙ্গে নিয়ে ইন্দিরা দেবী চৌধুরানির নামাঙ্কিত সংগীত প্রতিষ্ঠান ‘ইন্দিরা সংগীত-শিক্ষায়তন’-এর সূচনা করেন। সংগীত শিক্ষাদানের সঙ্গে প্রদর্শনী, গ্রন্থ ও রেকর্ড প্রকাশ, সংগীত সম্মেলন ইত্যাদি কর্মধারায় ‘ইন্দিরা’র আত্মনিয়োগ মূলত তাঁর উদ্যোগেই ঘটেছিল। এ বার সেই ‘ইন্দিরা’ যাদবপুরে ত্রিগুণা সেন অডিটোরিয়ামে ৩০ জুলাই সন্ধে ৬টায় ‘সুভাষ চৌধুরী স্মারক বক্তৃতা’র আয়োজন করেছে। বক্তা: দেবেশ রায়।

অন্য ম্যাকবেথ

আবার শেক্সপিয়র বঙ্গরঙ্গমঞ্চে। তাঁর ‘ম্যাকবেথ’ নতুন ব্যাখ্যায় ও রূপান্তরে। দেবী হিসেবে কালী-র শুভ শক্তিরই পুজো হয়, কিন্তু এ নাটকে সম্মোহন-বশীকরণ-মারণ ইত্যাদি মন্ত্রতন্ত্রের মাধ্যমে সেই কালীর অশুভ রূপকেই আহ্বান করে মানুষজন, যারা নিজের কর্মক্ষমতার ওপর বিশ্বাস হারিয়ে দৈবনির্ভর হয়ে পড়েছে। এই নেতিবাচকতা থেকেই ডাইনি-র জন্ম তাদের মনে, ‘ম্যাকবেথ’-এর তিন ‘উইচ’কে (অভিনয়ে মোনালিসা চট্টোপাধ্যায় শিপ্রা দে জয়িতা দাস) এ ভাবেই রূপায়িত করছেন নিজেদের নাটকে, জানালেন নির্দেশক শান্তনু দাস। কল্যাণী কলামণ্ডলম-এর এই ‘ম্যাকবেথ মিরর’ ইতিমধ্যেই মঞ্চস্থ কাঠমাণ্ডুর আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসবে, ডেনমার্কে হয়েছে এই নাটকের নির্বাচিত অংশের ভিডিয়ো-শো। আগামী অভিনয় শিশির মঞ্চে ৩১ জুলাই সন্ধে ৭টায়। সঙ্গে ‘ম্যাকবেথ মিরর’-এর একটি দৃশ্য।

প্রতিরোধ

কর্পোরেট জগতের বড় বড় সংস্থাগুলি কী ভাবে একচেটিয়া দখল করে রাখতে চাইছে কৃষির বাজার, কিংবা তাদের লগ্নি-করা অর্থ দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে জনমত; আবার এ সবের বিরুদ্ধে জন্ম নিচ্ছে যে প্রতিবাদ-প্রতিরোধ তাকে কী ভাবে সঙ্ঘবদ্ধ করে তুলছেন সমাজকর্মীরা— এসব নিয়েই আলোচনা এ বারের ‘বিজ্ঞানী অভী দত্ত মজুমদার স্মারক বক্তৃতা’য়— ‘কর্পোরেটোক্রেসি ভার্সাস পিপলস রেজিস্ট্যান্স’। বলবেন অভ্র চক্রবর্তী, শুভজিৎ বাগচী, সোনি সোরি। ২৬ জুলাই মৌলালি যুবকেন্দ্রে বিকেল ৪টে থেকে। আয়োজক ফোরাম এগেনস্ট মোনোপলিস্টিক অ্যাগ্রেশন (ফামা)।

উৎসকথা

গগন মৈ থাল’ শিখভজন ভেঙে রবীন্দ্রনাথের (অনুমিত) ‘গগনের থালে রবি চন্দ্র দীপক জ্বলে’ গান রচনা অথবা ‘পঞ্চনদীর তীরে বেণী পাকাইয়া শিরে’-র বহু পরিচিতি সত্ত্বেও এ কথা অবশ্য স্বীকার্য যে, শিখরা কবে থেকে, কী ভাবে ও কেন এখানে এসেছিল, কী ভাবেই বা তারা বাংলার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গী সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে, সে সব নিয়ে এখনও চর্চা অনেক বাকি। সেই কাজেই উদ্যোগী হয়েছেন জগমোহন সিংহ গিল। জন্মসূত্রে কলকাতাবাসী জগমোহন একই মালায় গাঁথতে চান বাংলা আর শিখভূমি পঞ্জাবকে। নানান সামাজিক কাজের সঙ্গে যুক্ত ইতিহাসপ্রিয় অনুসন্ধিৎসু মননের অধিকারী জগমোহন বাংলা ও বিহারের নানা প্রান্তে খুঁজছেন সেই উৎসকথা। বলা হয়, পাঁচশো বছরেরও বেশি আগে অবিভক্ত বাংলায় এসেছিলেন শিখরা। গুরু নানক এবং গুরু তেগ বাহাদুর মালদহ ও ঢাকায় আসেন। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গে ব্যবসাসূত্রে জড়িত ছিলেন দীপচাঁদ, যাঁর ছেলে আমীরচাঁদ ওরফে উমিচাঁদও কোম্পানিতে মাল সরবরাহ করতেন। কলকাতার প্রথম শিখ বসতি ব়়ড়বাজারে। এখানকার বড়া শিখ সংগত উমিচাঁদের আত্মীয় হুজুরিমলের তৈরি বলেই কথিত। রাজা রামমোহন রায়, কেশবচন্দ্র সেন গুরু নানকের ধর্মমত বিষয়ে আগ্রহী ছিলেন। রামকৃষ্ণের গুরু তোতাপুরীও ছিলেন নানকপন্থী। স্বাধীনতা আন্দোলনেও দুই রাজ্যবাসী-ই সক্রিয় অংশ নিয়েছিল। ‘গদর’ আন্দোলন বাংলা-য় গভীর প্রভাব ফেলেছিল। ইংরেজি ও হিন্দি-র প্রভাবে বহু প্রাদেশিক ভাষার মতো গুরুমুখীও আজ ক্ষতিগ্রস্ত। তরুণ প্রজন্মকে নিজ ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি আগ্রহী করে তুলতে তাই জগমোহন এক পৃথক বোর্ড তৈরি করতে চান। তাঁর উদ্যোগ সফল হোক। ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য

সিধু জ্যাঠা

হরীনদার কাছে শেখা বিভিন্ন ভারতীয় ভাষায় আন্তর্জাতিক সংগীতের অনুবাদগুলি আমরা গাইতাম সভায়, স্ট্রিট কর্নারে এমনকি দল বেঁধে উঠলে ট্রাম-বাস-ট্রেনে।— জানিয়েছেন জ্যোতিরিন্দ্র মৈত্র। হরীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় (১৮৯৮-১৯৯০) ছেচল্লিশ ধর্মতলা স্ট্রিটের আড্ডায় শিখিয়েছেন নিজের গান ‘সুরিয় অস্ত হো গয়া’, হিন্দিতে ইন্টারন্যাশনাল-এর অনুবাদ ‘উঠো জাগো ভুখে বন্দি অব খেঁচো লাল তল্‌ওয়ার’, বা লা মার্সাই-এর সুরে ‘অব কমর বাঁধ, তৈয়ার হো লক্ষ কোটি ভাইয়োঁ’। চল্লিশ-পঞ্চাশের দশকে কমিউনিস্টদের ডাকে এসে সভা মাতিয়ে যেতেন। (প্রগতির চেতনা প্রগতির পথিকেরা। একুশে সংসদ)। অঘোরনাথ ও বরদাসুন্দরী-র এই পুত্রের জন্ম হায়দরাবাদে, সরোজিনী নাইডু তাঁর দিদি, দাদা বিপ্লবী বীরেন্দ্রনাথ থাকতেন জার্মানিতে, আর স্ত্রী কমলাদেবী চট্টোপাধ্যায়। স্বাধীনতার পরেই লোকসভার সদস্য হন। দ্য ফিস্ট অব ইউথ সহ একাধিক ইংরেজি কাব্যগ্রন্থ তাঁর। নাটক লিখেছেন, অভিনয়ের নেশা ছিল। উল্লেখ্য হৃষীকেশ মুখোপাধ্যায়ের ‘বাওয়ার্চি’, সত্যজিতের ‘গুগাবাবা’, ‘সীমাবদ্ধ’ ও ‘সোনার কেল্লা’, যেখানে সিধু জ্যাঠার সংলাপই ছিল যেন তাঁর জীবনদর্শন: ‘আমি... শুধু মনের জানলাগুলো খুলে দিয়ে বসে আছি, যাতে আলো আর বাতাস ঢুকে মনটাকে তাজা রাখে।’ তাঁর ৭৫-এ পদ্মভূষণ প্রাপ্তির সময় তৈরি জগদীশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের তথ্যচিত্র (ফিল্মস ডিভিশন) দেখানো হবে নন্দনে ২৯ জুলাই সন্ধে ৬টায়, সলিল চৌধুরী সংগীত পরিচালক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন