কবির অসম্মান

বাংলা কবিতাকে শাসন করার মতো কলম এসে গিয়েছে পাঠকেরা বুঝতে পেরেছিলেন। জয়দেব মুখের ভাষাকে অনায়াসে ঠাঁই দিতে পারতেন কবিতায়, নাটকীয় তির্যক গদ্যে বুনতে পারতেন কবিতার শরীর, ছন্দেও ছিলেন সমান সচল।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০১৭ ০০:০৫
Share:

কবিতাসংগ্রহ ১

Advertisement

লেখক: জয়দেব বসু

মূল্য: ৪৫০.০০ (পেপারব্যাক)

Advertisement

প্রকাশক: সপ্তর্ষি

চার বছর অদর্শনের পর জয়দেব বসুর কবিতা সংগ্রহ ১ পরিবর্ধিত ও পরিমার্জিত চেহারায় প্রকাশিত হল। আশির দশক থেকে তুমুল ভাবে কবিতা লেখালিখি শুরু করেছিলেন জয়দেব। তাঁর প্রথম কবিতার বই ভ্রমণ কাহিনি প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৯০ সালের বইমেলায়, সেখানেই প্রকাশিত হয়েছিল মেঘদূত। বাংলা কবিতাকে শাসন করার মতো কলম এসে গিয়েছে পাঠকেরা বুঝতে পেরেছিলেন। জয়দেব মুখের ভাষাকে অনায়াসে ঠাঁই দিতে পারতেন কবিতায়, নাটকীয় তির্যক গদ্যে বুনতে পারতেন কবিতার শরীর, ছন্দেও ছিলেন সমান সচল। রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে বিশ্বাস করতেন বাম রাজনৈতিক দল মানুষকে নিরাময় দিতে পারে, কবি হিসেবে কিন্তু বামদলগুলির দুর্বলতাকে গোপন করতেন না। লিখেছিলেন, ‘বিপ্লবীরা ক্রমশ মন্ত্রী হবে আর মন্ত্রীরা মন্ত্রীই হবে বারবার।’ তাঁর জিজ্ঞাসা, ‘তুই সনাতন লোভী/ সেজেছিস বিপ্লবী?’ এই জিজ্ঞাসার অন্তরালে ছিল তাত্ত্বিক জিজ্ঞাসা। ‘সত্য তো একই সঙ্গে বুনিয়াদি/ এবং বিকাশমান হবে?’ নব্বই সংলগ্ন ও নব্বই-পরবর্তী দেশকালের রাজনৈতিক ও সামাজিক চেহারা বুঝতে অকালে চলে যাওয়া এই রূপদক্ষের রচনা বাঙালি পাঠকদের অবশ্য পড়া উচিত। তবে জয়দেব বসুর কবিতা সংগ্রহ ১ বইটির শরীরে নানা অমনোযোগের চিহ্ন দেখে বিরক্তি জাগে। সচরাচর কবিতা সংগ্রহ বা কবিতা সমগ্র ছাপার সময় প্রকাশক প্রতিটি বইয়ের আগে ফ্লাই লিফ দেন, সেই ফ্লাই লিফে থাকে অতীতে প্রকাশিত বইটির প্রচ্ছদ। পাঠক সংগ্রহ বা সমগ্রের মধ্যে বইয়ের স্বতন্ত্র অস্তিত্ব টের পান। এক্ষেত্রে তা করা হয়নি। কবিতা ২০০৬-১২ যখন প্রকাশিত হয়েছিল তখন সূচনাকথা লিখেছিলেন শঙ্খ ঘোষ। আশ্চর্যের বিষয়, সেই ‘সূচনাকথা’ লেখাটি বর্তমান সংগ্রহে বাদ পড়েছে। সূচনাকবিতা হিসেবে সে বইতে ১৯৯৭-এ লেখা ‘তো, ভণ্ডামি শিখে গেলাম আস্তে-আস্তে’ রাখা হয়েছিল ‘ইচ্ছাকৃতভাবে’, এই সংগ্রহে তা বেমালুম উধাও। বর্তমান সংগ্রহের শেষে ‘প্রথম সারির সূচি’ নামে কাব্যপঙ্‌ক্তির যে বর্ণানুক্রমিক সূচি দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে তাতে কিন্তু এই উধাও ‘বিভাব’ কবিতাটির উল্লেখ আছে। কবিতার পঙ্‌ক্তিকে আমরা ‘সারি’ বলি কি? আর কেবল প্রথম বর্ণের ক্রম অনুসরণ করলেই বর্ণানুক্রমিক সূচি হয় না। এ রকম সূচি কারও কোনও কাজে লাগা সম্ভব নয়। প্রকাশনায় অযত্ন থাকলে কবির অসম্মান হয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন