সম্পাদকীয় ২

বন্ধ না করিয়া

ইংরাজি মাধ্যম স্কুলের প্রতি মধ্যবিত্ত, এমনকী নিম্নমধ্যবিত্তের দুর্বলতা সুবিদিত। সরকারি বাংলা মাধ্যম স্কুল খালি প়়ড়িয়া থাকে, কিন্তু ব্যাঙের ছাতার মতো গজাইয়া উঠা ইংরাজি মাধ্যম স্কুল রমরম করিয়া চলে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৭ মার্চ ২০১৮ ০০:০৮
Share:

কোথাও শিক্ষকের সংখ্যা আট জন, কোথাও সাত জন। কিন্তু, ছাত্রের সংখ্যা শূন্য। বঙ্গবাসী হাই স্কুল অথবা হিন্দু অ্যাকাডেমির ছবি এই রকমই। কলিকাতারই স্কুল, কিন্তু স্বভাবতই শহরবাসী এই স্কুলগুলির নাম জানেন না। কলিকাতায় এই রকম পঁচাত্তরটি স্কুল বন্ধ হইবার উপক্রম। শিক্ষামন্ত্রী অবশ্য দাবি করিয়াছেন, স্কুলগুলি বন্ধ হইবে না। বরং, পরিকাঠামোর উন্নতি হইবে। সরকার নূতন ইংরাজি মাধ্যম স্কুল চালু করিবে— যদিও কবে, তাহা আদৌ স্পষ্ট নহে। বাজারের যুক্তি বলিবে, যে স্কুলে ছাত্র জোটে না, তাহা বন্ধ করিয়া দেওয়াই বিধেয়। কিন্তু, সেই যুক্তির ঊর্ধ্বেও কিছু বিবেচনা থাকে। একটি স্কুল গড়িয়া উঠিতে সময় লাগে। কাজেই, একটি স্কুলও বন্ধ করিয়া দেওয়ার পূর্বে গভীর চিন্তাভাবনার প্রয়োজন। বিশেষত, এই রাজ্যেই বিভিন্ন স্কুলের ক্লাসঘর উপচাইয়া পড়ে, ছাত্র-শিক্ষকের অনুপাত চ়ড়া। যে স্কুলগুলির ক্লাসঘর খাঁ-খাঁ করিতেছে, সেগুলিকে কী ভাবে সজীব করা যায়, সেই চিন্তাটিই মুখ্য হওয়া বিধেয়। শিক্ষামন্ত্রীর ভাবনা সেই পথেই হাঁটিতেছে।

Advertisement

ইংরাজি মাধ্যম স্কুলের প্রতি মধ্যবিত্ত, এমনকী নিম্নমধ্যবিত্তের দুর্বলতা সুবিদিত। সরকারি বাংলা মাধ্যম স্কুল খালি প়়ড়িয়া থাকে, কিন্তু ব্যাঙের ছাতার মতো গজাইয়া উঠা ইংরাজি মাধ্যম স্কুল রমরম করিয়া চলে। সরকার নূতন ইংরাজি মাধ্যম স্কুল চালু করিলে তাহা বাজার ধরিতে সক্ষম হইতে পারে। কিন্তু, প্রশ্ন শুধু কিছু নূতন স্কুলের নহে। বেশির ভাগ সরকারি স্কুলই বাংলা মাধ্যম। শিক্ষার মাধ্যম হিসাবে মাতৃভাষা ফেলনাও নহে। তাহার সহিত ইংরাজি শিক্ষার, ইংরাজিতে সাবলীলতা অর্জনের বিরোধ নাই। প্রয়োজন শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ইংরাজিতে দড় করিয়া তোলা, তাহাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা। ইংরাজিতে দক্ষতার ভিত্তিতে কিছু শিক্ষক নিয়োগের কথাও ভাবা যাইতে পারে। পড়ুয়ার অভাবে যে স্কুলগুলি বন্ধ হইবার উপক্রম, সেগুলিকেই এই পরীক্ষার কাজে বাছিয়া লইলে ফল স্পষ্ট বোঝা যাইবে।

ইদানীং শহরাঞ্চলে সরকারি স্কুলগুলি মূলত যে জনগোষ্ঠীর ছেলেমেয়েদের ছাত্রছাত্রী হিসাবে পায়, সেখানে ইংরাজি শিক্ষার দাবি থাকিতেই পারে, কিন্তু তাহাই নির্ণায়ক প্রশ্ন, এমনটা ভাবিয়া লইবার কারণ নাই। যে পঁচাত্তরটি স্কুল বন্ধ হইবার জোগাড়, ইংরাজি শিক্ষার অভাবই সেগুলির বিপন্নতার প্রধান কারণ নহে। বিশেষত, একই অঞ্চলে যে সরকারি স্কুলগুলিতে ছাত্র আছে, সেখানেও তো বাংলা মাধ্যমেই পঠনপাঠন হয়। নির্ণায়ক প্রশ্নগুলি সম্ভবত ভিন্ন। স্কুলের ক্লাসঘরগুলির অবস্থা কেমন, শৌচাগার আছে কি না, বর্ষায় স্কুলে পৌঁছনো মুশকিল হয় কি না— বিচার করিয়া দেখা যেমন জরুরি, তেমনই স্কুলের সংস্কৃতির প্রশ্নটিও। শিক্ষকরা কি আপন দায়িত্ব সম্পাদনে অনিচ্ছুক? রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ কি প্রবল? এক জন প্রধানশিক্ষকের সুনামের ভরসাতেই হরেক প্রতিকূলতা অতিক্রম করিয়া স্কুল প্রতিষ্ঠিত হইতেছে, এমন উদাহরণ এই বঙ্গে বিরল নহে। সুতরাং, স্কুলে ইংরাজি শিক্ষায় জোর বাড়াইবার পাশাপাশি, প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধির পাশাপাশি, শিক্ষার সংস্কৃতির প্রশ্নটিও ভাবিয়া দেখিবার মতো। শিক্ষাকে সর্বজনীন করিতে, শিক্ষাকে প্রকৃত অধিকারের মর্যাদা দিতে সরকারি স্কুলের গুরুত্ব অসীম। শিক্ষামন্ত্রী ভাবিয়া দেখুন।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement