Editorial News

বিজেপি ও তার কুমিরছানা

দায়িত্বশীল পদে থাকা ব্যক্তিবর্গ কী ভাবে এই রকম একের পর এক দায়িত্বজ্ঞানহীন তথা বিপজ্জনক মন্তব্য করে চলেন, তা বোধের বাইরে। সংবিধান যে ভারসাম্য তৈরি করেছে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায়, সেই ভারসাম্যে আঘাত হানে রাজনীতিকদের দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্যগুলো।

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০১৮ ০০:৩৯
Share:

যোগী আদিত্যনাথ। —ফাইল চিত্র।

শিয়ালপণ্ডিত আর কুমিরছানার কাহিনি অনেকেরই জানা। কুমিরের সাত ছানার ছ’টাকেই খেয়ে ফেলেছিল পণ্ডিতরূপী শিয়াল। আর কুমির যখন ছানাদের দেখতে যেত, তখন অবশিষ্ট সপ্তম ছানাটাকেই পর পর সাত বার গর্ত থেকে বাইরে বার করে দেখাত শিয়াল।

Advertisement

এ দেশের রাজনীতিতে রামমন্দিরের দশাটা এখন অনেকটা কুমিরছানার মতো। কুমীরের যেমন সাতটা ছানা ছিল, এ দেশে তেমন সাতটা রাম জন্মভূমি রয়েছে, বিষয়টা এমন নয়। রামজন্মভূমি একটাই, সুতরাং রামমন্দিরও একটাই হওয়ার দাবি রয়েছে ভারতীয় জনসংখ্যার একাংশের মধ্যে। কিন্তু সেই একটা রাম জন্মভূমি বা একটা রামমন্দিরের প্রতিশ্রুতি দেখিয়েই যদি একের পর এক নির্বাচন পার করে দেওয়া যায়, তা হলে আর সাতটার দরকারই বা কী?

লোকসভা নির্বাচন এলেই রামমন্দির ইস্যু গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে এ দেশে। এ বারও ব্যতিক্রম যে হবে না, তার আভাস মিলতে শুরু করেছে। ঝুলি থেকে কুমিরছানাটা আবার বার করেছে বিজেপি। অতএব রাজনীতি গরম হতে শুরু করেছে। তর্ক বাড়তে শুরু করেছে। এ ভাবে চালিয়ে যাওয়া গেলেই মেরুকরণও তীব্র হতে শুরু করবে। আর কী চাই বিজেপির?

Advertisement

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ একটা ইঙ্গিতবহ মন্তব্য করেছেন রামমন্দির সম্পর্কে। সহমতের ভিত্তিতে রামমন্দির গড়া গেলে ভাল, না হলে বিকল্প পথও রয়েছে। এমনই মন্তব্য আদিত্যনাথের। বিকল্প পথটা কী, তা তিনি স্পষ্ট করেননি। স্পষ্ট না করাটাই স্বাভাবিক। সব কিছু স্পষ্ট হয়ে গেলে কুমিরছানা দেখানোর অবকাশটাই যে থাকে না আর।

রামজন্মভূমি-বাবরি মসজিদ বিতর্ক এখন দেশের সর্বোচ্চ আদালতে বিচারাধীন। আদালত সদ্য জানিয়েছে যে, জরুরি ভিত্তিতে ওই মামলার শুনানি গ্রহণ করা হবে না। জানুয়ারির আগে শুনানির কোনও সম্ভাবনা যে নেই, তা-ও স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। সর্বোচ্চ আদালত যখন এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তখন মেনে নেওয়া ছাড়া গত্যন্তর নেই। কিন্তু বিজেপি নেতারা সম্প্রতি নতুন এক অবস্থান নিয়েছেন। রাজনৈতিক লাভের সম্ভাবনা যেখানে দেখছেন, সেখানেই সর্বোচ্চ আদালতকেও তাঁরা খানিক অবজ্ঞা করছেন। শবরীমালার ক্ষেত্রে অমিত শাহ ঘটিয়েছেন ওই কাণ্ড। অযোধ্যা প্রসঙ্গে একই কাজ করলেন যোগী আদিত্যনাথ। আদালত যেখানে অযোধ্যা মামলার শুনানি পিছিয়ে দিচ্ছে, সেখানে মুখ্যমন্ত্রী মন্তব্য করছেন যে, নিষ্পত্তির বিকল্প পথ তাঁর জানা আছে। অর্থাৎ আদালতকে না হলেও তাঁর চলে অথবা আদালত কী নিষ্পত্তি করবে তা নিয়ে তিনি খুব একটা ভাবিত নন। কারণ তিনি নিজেই পারবেন নিজের পছন্দ মতো এক নিষ্পত্তি সূত্র প্রতিষ্ঠা করতে।

আরও পড়ুন: রাম মন্দির গড়ার বিকল্প পথ আছে, প্রয়োজনে সে পথেই হাঁটব, হুঙ্কার যোগীর

এই প্রবণতা ভয়ঙ্কর। দায়িত্বশীল পদে থাকা ব্যক্তিবর্গ কী ভাবে এই রকম একের পর এক দায়িত্বজ্ঞানহীন তথা বিপজ্জনক মন্তব্য করে চলেন, তা বোধের বাইরে। সংবিধান যে ভারসাম্য তৈরি করেছে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায়, সেই ভারসাম্যে আঘাত হানে রাজনীতিকদের দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্যগুলো। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি জনসাধারণের শ্রদ্ধা এবং আস্থাও ধাক্কা খেতে থাকে।

রামমন্দিরকে কেন্দ্র করে বিজেপি আবার যে জিগির তোলার চেষ্টা করছে, সেই জিগির কতটা সফল হবে, সে প্রশ্নের উত্তর সময়ই দেবে। কিন্তু কুমিরছানার আসল কাহিনি যে দিন মানুষ বুঝে যাবেন, সে দিন সমূহ বিপদ হতে পারে। বিজেপি নেতাদের কিন্তু সে কথাটা জেনে রাখা দরকার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন