National news

চিকিৎসকরাই এত অসুস্থ!

জাতপাতের নামে মানসিক নির্যাতন কোন পর্যায়ে পৌঁছলে এই রকম সিদ্ধান্ত নিতে হয় কাউকে? ভাবলেই শিউরে উঠতে হচ্ছে।

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০১৯ ০১:০৬
Share:

পায়েল তদভি।

শিকড় কতটা গভীরে না থাকলে সমাজের আলোকিততম অংশেও এ ভাবে অস্তিত্বশীল হতে পারে বৈষম্য তথা সামাজিক বিভাজন! স্তম্ভিত হতে হল মুম্বইয়ের বি ওয়াই এল নায়ার হাসপাতালের ঘটনার কথা শুনে।

Advertisement

রেসিডেন্ট চিকিৎসক তথা স্ত্রীরোগ বিভাগের স্নাতকোত্তরের ছাত্রী পায়েল আত্মঘাতী হলেন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ক্যাম্পাসেই। অভিযোগ উঠল তীব্র জাতিবিদ্বেষের শিকার হওয়ার। দিনের পর দিন সিনিয়র তথা সহকর্মীদের দ্বারা হেনস্থা হতে হচ্ছিল ওই চিকিৎসক তথা স্নাতকোত্তরের ছাত্রীকে, জাত তুলে কটূকাটব্য করা হচ্ছিল, অপমানিত-অপদস্থ করা হচ্ছিল একনাগাড়ে পায়েলকে— অভিযোগ এমনই। সুরাহা চেয়েছিলেন পায়েল ও তাঁর পরিবার মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে বার বার, কিন্তু কোনও ফল হয়নি বলে অভিযোগ। মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত পায়েল শেষ পর্যন্ত শেষ করে দিলেন নিজেকেই।

জাতপাতের নামে মানসিক নির্যাতন কোন পর্যায়ে পৌঁছলে এই রকম সিদ্ধান্ত নিতে হয় কাউকে? ভাবলেই শিউরে উঠতে হচ্ছে। সমাজের যে স্তরে এই সাংঘাতিক বিদ্বেষের উপস্থিতির কথা সামনে আসছে, তা জেনে আরও বিস্মিত হতে হচ্ছে। অনালোকিত, অনগ্রসর কোনও অংশ নয়, সমাজের সবচেয়ে আলোকপ্রাপ্ত এবং এগিয়ে থাকাদের সমাহার যেখানে, সেখানেও জাতপাতের নামে এত বিদ্বেষের রমরমা! এত ঘৃণা! সে ঘৃণা বা বিদ্বেষকে আবার নিতান্তই সাধারণ ও স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবে ধরা হয়, যেন এমনটা তো হতেই পারে। না হলে রেসিডেন্ট চিকিৎসক এবং তাঁর পরিবারের কাছ থেকে বার বার অভিযোগ পেয়েও গুরুত্বই দেবেন না কেন মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ?

Advertisement

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

বিপর্যয়টা ঘটে যাওয়ার পরে হইচই শুরু হল। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত হচ্ছে। পুলিশেও অভিযোগ দায়ের হয়েছে। মেডিক্যাল কলেজের যে কর্তারা সব জেনেও এত দিন নিষ্ক্রিয় ছিলেন বলে অভিযোগ, সেই কর্তাদের জবাব তলব করা হয়েছে। কিন্তু চোর পালানোর পরে বুদ্ধি খুললে কাজের কাজ যে খুব একটা হয় না, সে তো বলাই বাহুল্য।

আরও পড়ুন: জাত নিয়ে খোঁটা! ডাক্তার আত্মঘাতী, নালিশ মায়ের

সমাজ কতটা অসুস্থ হলে সমাজের শীর্ষ স্তরেও এমন ভয়ঙ্কর বিদ্বেষ ঘাঁটি গেড়ে থাকতে পারে! কোনও বিচ্ছিন্ন পরিস্থিতি কিন্তু নয় এ। শুধু মহারাষ্ট্রের একটা মেডিক্যাল কলেজে এ ঘটনা ঘটেছে, এমন নয় মোটেই। এ রাজ্যের মেডিক্যাল কলেজেও জাতিবিদ্বেষী আচরণের অভিযোগ ঘোরাফেরা করে। খুব বড় আকারে সে সব অভিযোগ সামনে আসেনি ঠিকই। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, আমরা এ সব থেকে মুক্ত। পরিস্থিতিটা তাই দুর্ভাগ্যজনক ঠেকে।

যে পরিস্থিতির শিকার হয়ে পৃথিবী ছেড়ে দিলেন চিকিৎসক পায়েল, কোনও সুস্থ সামাজিকতা তাকে প্রশ্রয় দেয় না। কোনও রাজনীতি বা রাজনৈতিক দল প্রকাশ্যে এই বিদ্বেষের পৃষ্ঠপোষণা করে, এমনও নয়। তা সত্ত্বেও সমাজের সব স্তরে এর উপস্থিতি বুঝিয়ে দেয়, বিদ্বেষের বিষ কী ভাবে অবিরল ছুটে বেড়াচ্ছে শিরায়-উপশিরায়। সামাজিক চেতনায় এবং বোধের উৎসে কত বড় ধাক্কা দিতে পারলে এই বিষ জব্দ হবে, বোঝা কঠিন হয় আজ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন