Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

জাত নিয়ে খোঁটা! ডাক্তার আত্মঘাতী, নালিশ মায়ের

গত ২২ মে বিওয়াইএল নায়ার হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক পায়েলের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয় তাঁর ঘর থেকে। তাঁর মা আবেদার অভিযোগ, ‘‘যখনই মেয়ের সঙ্গে ফোনে কথা হত, তখনই বলত, উপজাতি সম্প্রদায়ের হওয়ায় ওই তিন জন সিনিয়র নানা রকম কটূক্তি করে। আমরা ওর মৃত্যুর বিচার চাই।’’

পায়েল তদভি।

পায়েল তদভি।

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০১৯ ০২:৪৯
Share: Save:

মুম্বইয়ের বিওয়াইএল নায়ার হাসপাতালের চিকিৎসক পায়েল তদভি গত ২২ মে আত্মঘাতী হয়েছেন। অভিযোগ, জাতিবিদ্বেষের শিকার হয়ে বছর তেইশের ওই চিকিৎসক আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছিলেন। যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, সেই তিন চিকিৎসক— হেমা আহুজা, ভক্তি মেহর ও অঙ্কিতা খণ্ডেলওয়ালের সদস্যপদ খারিজ করেছে মহারাষ্ট্র অ্যাসোসিয়েশন অব রেসিডেন্ট ডক্টরস। পায়েলের অস্বাভাবিক মৃত্যু হায়দরাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া রোহিত ভেমুলার আত্মহত্যার স্মৃতি উস্কে দিয়েছে। অভিযোগ, তিনিও জাতিবিদ্বেষের শিকার হয়েছিলেন।

গত ২২ মে বিওয়াইএল নায়ার হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক পায়েলের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয় তাঁর ঘর থেকে। তাঁর মা আবেদার অভিযোগ, ‘‘যখনই মেয়ের সঙ্গে ফোনে কথা হত, তখনই বলত, উপজাতি সম্প্রদায়ের হওয়ায় ওই তিন জন সিনিয়র নানা রকম কটূক্তি করে। আমরা ওর মৃত্যুর বিচার চাই।’’ আবেদার অভিযোগের ভিত্তিতে ওই তিন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হয়েছে। ওই তিন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অভিযোগ, হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে কটূক্তি করার পাশাপাশি, অপারেশন থিয়েটরে ঢোকার অনুমতি দেওয়া হবে না বলে হুমকি দেওয়া হত ওই আত্মঘাতী চিকিৎসককে। জামিন অযোগ্য ধারায় মামলাও হয়েছে তাঁদের বিরুদ্ধে। আবেদা জানান, তাঁরা কর্তৃপক্ষের কাছে পায়েলের হেনস্থা নিয়ে আগেই অভিযোগ করেছিলেন। কিন্তু তখন অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। পরিবারের এ-ও দাবি, কলেজ কর্তৃপক্ষ তাঁদের মৌখিক ভাবে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বললেও কোনও লিখিত আশ্বাস দেননি। পায়েলের মায়ের কথায়, ‘‘ঘটনার দিন বিকেল ৪টে নাগাদ মেয়ের সঙ্গে ফোনে কথা হয়। তখনও মানসিক অত্যাচারের কথা বলেছিল। দোষীদের কড়া শাস্তি চাই।’’ তাঁর অভিযোগ, হেনস্থার নালিশ জানাতে তিনি ডিনের সঙ্গে দেখা করা চেষ্টা করেন, কিন্তু অনুমতি দেওয়া হয়নি। কলেজের ডিন রমেশ ভারমল অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁর দাবি, এ নিয়ে তাঁকে কখনওই অভিযোগ জানানো হয়নি। রমেশ জানান, পুলিশি তদন্তের পাশাপাশি, অ্যান্টি র‌্যাগিং কমিটি তৈরি করে তদন্ত শুরু হয়েছে। ওই কমিটিতে রয়েছেন চিকিৎসক, পুলিশের প্রতিনিধি ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সদস্যেরা। ওই তিন অভিযুক্ত চিকিৎসককে তলব করা হয়েছে। তাঁরা যদিও এখন মুম্বই-ছাড়া। মহারাষ্ট্র অ্যাসোসিয়েশন অব রেসিডেন্ট ডক্টরস-এর কাছে আজ এক চিঠিতে তিন অভিযুক্ত লিখেছেন, ‘‘বিচারের আগে স্বচ্ছ তদন্ত হোক। কিন্তু পুলিশ ও সংবাদমাধ্যমের চাপে পড়ে তা হচ্ছে না। আমাদের কথা বলার সুযোগই দেওয়া হচ্ছে না।’’ যত দ্রুত সম্ভব তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে কমিটিকে। রমেশ আরও জানিয়েছেন, স্ত্রীরোগবিদ্যা বিভাগের প্রধান ও পায়েলদের ইউনিট হেডকে শোকজ নোটিস পাঠানো হয়েছে।

মহারাষ্ট্রের জলগাঁওয়ের বাসিন্দা পায়েল স্ত্রীরোগবিদ্যায় স্নাতকোত্তরে টোপিওয়ালা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন। ২০১৮ সালের ১ মে ওই কলেজটি যুক্ত হয় বিওয়াইএল নায়ার হাসপাতালের সঙ্গে। পায়েলের স্বামী পেশায় চিকিৎসক সলমন বলেন, ‘‘ডিসেম্বরে প্রথম হেনস্থার অভিযোগ করেছিল পায়েল। বিভাগীয় প্রধানের সঙ্গে দেখা করি। তার পরে দু’মাসের জন্য পায়েলের ইউনিট বদলে দেওয়া হয়েছিল। পুরনো ইউনিটে ফেরার পরে আবার হেনস্থা শুরু হয়।’’ বিচার চেয়ে কাল পথে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে উপজাতি সংগঠনগুলি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Suicide Mumbai Caste Discrimination
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE