সিবিডিটি (সেন্ট্রাল বোর্ড অব ডিরেক্ট ট্যাক্সেস) তাহার সাম্প্রতিক বিজ্ঞপ্তিতে জানাইয়াছে, অতঃপর প্যান কার্ডের আবেদনপত্রে লিঙ্গ পরিচয়ের ক্ষেত্রে রূপান্তরকামী মানুষদের জন্য একটি তৃতীয় খোপের ব্যবস্থা থাকিবে। খোপটি থাকিবে ‘পুরুষ’ এবং ‘স্ত্রী’— বিকল্প দুইটির পাশাপাশি। পরিবর্তনটি ছোট, কিন্তু অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ এবং অসামান্য। তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ সর্বোচ্চ আদালতের রায় সত্ত্বেও রূপান্তরকামী মানুষরা আজও স্ত্রী, পুরুষের পাশাপাশি কাঁধ মিলাইয়া হাঁটিবার সুযোগ পান না, অন্য দুই লিঙ্গের মতো সরকার প্রদত্ত সকল অধিকার একই ভাবে ভোগ করিতে পারেন না। অসামান্য, কারণ আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে এই সমানাধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইই তো তাঁহারা এত কাল ধরিয়া চালাইয়া আসিতেছেন। সিবিডিটি-র সংশোধনটি সেই লড়াইকেই এত দিনে মান্যতা দিল এবং আর্থিক ক্ষেত্রে রূপান্তরকামীদের প্রতি বৈষম্য কিছুটা হইলেও কম হইবার ইঙ্গিত দিল।
তবে, এই পরিবর্তনটি প্রথম পদক্ষেপ নহে। বস্তুত, রূপান্তরকামীদের সমানাধিকার প্রদানের প্রক্রিয়াটির সূচনা হইয়াছিল চার বৎসর পূর্বেই। ২০১৪ সালের এই এপ্রিল মাসেই সুপ্রিম কোর্ট এক ঐতিহাসিক রায়ে রূপান্তরকামীদের ‘তৃতীয় লিঙ্গ’ হিসাবে স্বীকৃতি দান করে এবং কেন্দ্রকে নির্দেশ দেয় রূপান্তরকামী মানুষদের আর্থিক এবং সামাজিক ক্ষেত্রে পশ্চাৎপদ শ্রেণি হিসাবে গণ্য করিতে। এই রায়েই শিক্ষা এবং চাকরির ক্ষেত্রে অন্যান্য অনগ্রসর জাতির মতোই রূপান্তরকামীদের জন্যও কেন্দ্রকে সংরক্ষণ চালু করিতে এবং সামাজিক ক্ষেত্রে বৈষম্য কমাইতে উদ্যোগ করিবার কথা বলা হয়। কিন্তু রায়ে সরকারি পরিচয়পত্র-সহ সমস্ত জনকল্যাণমূলক প্রকল্পের সুবিধা যাহাতে রূপান্তরকামীরা পাইতে পারেন, তাহার ব্যবস্থা করিতে কেন্দ্র ও রাজ্যগুলিকে সুস্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া সত্ত্বেও অনেক ক্ষেত্রেই তাহা হয় নাই। তাঁহারা আধার কার্ড পাইয়াছেন, কিন্তু প্যান কার্ডের আবেদনপত্রে তৃতীয় লিঙ্গের জায়গা না থাকায় যথেষ্ট হয়রানি ভোগ করিতে হইয়াছে। প্যান কার্ডের সঙ্গে আধার কার্ড সংযুক্তিকরণ প্রক্রিয়াটিও বিঘ্নিত হইয়াছে। সিবিডিটি-র নবতম উদ্যোগে এই অসুবিধা অনেকটাই দূর হইবার কথা।
কিন্তু সামাজিক ক্ষেত্রে যে অসুবিধাগুলি তাঁহারা এখনও ভোগ করিতেছেন, তাহার অবসান হইবে কবে? উত্তর জানা নাই। সরকারি কর্মচারীদের একাংশের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের রায় লইয়া যে নিদারুণ অজ্ঞতা এখনও রহিয়া গিয়াছে, তাহার ফল ভোগ করিতে হইতেছে এই মানুষগুলিকে। পরিবর্তিত লিঙ্গপরিচয়ের প্রমাণস্বরূপ তাঁহাদের নিকট প্রায়শই রূপান্তর সংক্রান্ত অস্ত্রোপচারের নথি চাওয়া হয়, যদিও সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুসারে লিঙ্গ পরিচয়ের জন্য শরীরে কাটাছেঁড়ার প্রয়োজন নাই। এই শহরেই নারী পরিচয়ে পাসপোর্টের আবেদন করিতে গিয়া হেনস্থার উদাহরণও আছে। সুতরাং, দুর্ভোগ কমে নাই। তবে এ কথা সত্য যে, সাধারণ মানুষের দৃষ্টিভঙ্গিতে ধীরে হইলেও কিছু পরিবর্তন আসিয়াছে। রূপান্তরকামীদের তাঁহারা প্রচলিত পরিচয়ের বাহিরে গিয়া দেখিতে অভ্যস্ত হইয়াছেন। এখন অপেক্ষা সরকারের তরফ হইতে আরও কিছু ইতিবাচক উদ্যোগের। আধার কার্ড, প্যান কার্ড দিয়াই না-হয় তাহার সূচনা হউক।