সম্পাদকীয় ১

অসার ঘোষণা

এই সন্দেহ আরও গাঢ় হয় পূর্বের প্রকল্পটির দিকে তাকাইলে। রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য বিমা যোজনার সূচনা হইয়াছিল ২০০৮ সালে, দরিদ্রকে সুরক্ষা দিবার লক্ষ্য লইয়া।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০০:১৫
Share:

সম্প্রতি দুইটি নূতন শব্দের আমদানি হইয়াছে। ‘মোদীকেয়ার’ এবং ‘জুমলা।’ প্রশ্ন উঠিয়াছে, ‘মোদীকেয়ার’ কি জুমলা? অর্থাৎ জাতীয় স্বাস্থ্য সুরক্ষা প্রকল্পে দরিদ্রকে স্বাস্থ্য বিমা দিবার প্রতিশ্রুতি কি অসার ঘোষণা? বিশেষজ্ঞদের একাংশের তেমনই আশঙ্কা। দশ কোটি পরিবারের জন্য পাঁচ লক্ষ টাকার সুরক্ষা পাইতে হইলে বিমার প্রিমিয়ামের জন্য ন্যূনতম প্রয়োজন দশ হাজার কোটি টাকা। সেখানে বাজেটে বরাদ্দ মাত্র দুই হাজার কোটি টাকা। তাহাও কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে ভাগাভাগি করা হইবে। প্রধানমন্ত্রীর নাম জুড়িয়া যে প্রকল্পের প্রচার করিতেছে তাঁহার দল, তাহাতে দায়বোধের এমন অভাব দেখিলে নাগরিকেরই লজ্জা হয়। প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিষেবা দিবার জন্য দেশে দেড় লক্ষ স্বাস্থ্যকেন্দ্র হইবে, সেই বাজেট-ঘোষণা সম্পর্কেও একই প্রশ্ন উঠিয়াছে। এই কেন্দ্রগুলিতে নিখরচায় চিকিৎসা, ঔষধ ও পরীক্ষাব্যবস্থা মিলিবে, বলিয়াছেন অরুণ জেটলি। কিন্তু বরাদ্দ করিয়াছেন বারোশো কোটি টাকা, অর্থাৎ প্রতি কেন্দ্রের জন্য আট লক্ষ টাকা। তাহাতে কুলাইবে না, বুঝিয়াই হয়তো কর্পোরেট সংস্থার সহায়তা প্রার্থনা করিয়াছেন বাজেট বক্তৃতায়। সমাজের উন্নয়নে সকলেরই যোগদান প্রয়োজন। কিন্তু সরকারি বরাদ্দের ঘাটতি কি অপরে পুরাইতে পারে? নিখরচায় প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিষেবা নিশ্চিত করা সরকারের কর্তব্য। কাহারও সদিচ্ছার উপর সে কাজটি নির্ভর করিতে পারে না। সন্দেহ হইতে বাধ্য, কেন্দ্র নূতন প্রকল্পের প্রচার করিতে যতটা উৎসুক, কার্যকর করিতে ততটা নহে।

Advertisement

এই সন্দেহ আরও গাঢ় হয় পূর্বের প্রকল্পটির দিকে তাকাইলে। রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য বিমা যোজনার সূচনা হইয়াছিল ২০০৮ সালে, দরিদ্রকে সুরক্ষা দিবার লক্ষ্য লইয়া। বর্তমান সরকার বিমার পরিমাণ বাড়াইয়াছে ত্রিশ হাজার টাকা হইতে পাঁচ লক্ষ টাকা। কিন্তু দরিদ্রের স্বাস্থ্য বিমার যে সমস্যাগুলি ইতিমধ্যেই প্রকট হইয়াছে, তাহার কী হইবে? জেটলি বাজেট বক্তৃতায় বলিয়াছেন, দরিদ্র পরিবার যাহাতে চিকিৎসার খরচ দিতে গিয়া সর্বস্বান্ত না হয়, তাহার জন্যই জাতীয় স্বাস্থ্য সুরক্ষা প্রকল্প। কিন্তু বিভিন্ন সমীক্ষায় ইতিমধ্যেই প্রকাশিত যে, রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য বিমা যোজনা দরিদ্রের চিকিৎসা-ব্যয় কমাইতে পারে নাই। প্রথমত বিমা কেবল হাসপাতালে ভর্তি রোগীর খরচ বহন করে। আউটডোরে পরীক্ষা এবং ঔষধের খরচ বিমার অন্তর্ভুক্ত নহে। উপরন্তু, বিমা লইয়া ভর্তি হইয়াও রোগীদের হাসপাতাল খরচ বিশেষ কমে নাই। কখনও হাসপাতাল বিমা থাকিলেও তাহার সুবিধা দিতে অস্বীকার করিয়াছে, কখনও তাহার খরচ ত্রিশ হাজার টাকার সীমা ছাড়াইয়াছে, কখনও পরীক্ষা এবং ঔষধের জন্য পৃথক খরচ করিতে রোগী বাধ্য হইয়াছে।

অপরাপর সমীক্ষায় উদ্বেগের আরও নানা কারণ ধরা পড়িয়াছে। যেমন, বিমার টাকা পাইবার জন্য বেসরকারি হাসপাতাল অকারণ অস্ত্রোপচার করিয়া থাকে। বিশেষত হৃদ্‌যন্ত্র, জরায়ু, চোখের ছানির অস্ত্রোপচারের হার অস্বাভাবিক ভাবে বাড়িয়া যায়। যাহার অর্থ, বিমার সুযোগ লইয়া হিতে বিপরীত ঘটাইতেছে অসাধু চিকিৎসা ব্যবসায়ীরা। অতএব কেবল বিমার কাগজটি ধরাইলে দরিদ্রের সুরক্ষা মিলিবে না। বিনামূল্যে সর্বত্র প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিষেবা সরকারকেই নিশ্চিত করিতে হইবে। তাহার বিকল্প নাই, স্বীকার করিয়াও কেন্দ্র ও প্রায় সকল রাজ্য সরকার কার্যত দায় এড়াইতেছে। তৎসহ, বেসরকারি হাসপাতাল এবং বিমা সংস্থাগুলির উপর নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা আবশ্যক। বিমা প্রকল্পটিকে দরিদ্র-বান্ধব করা যায় কী উপায়ে, তাহাও ভাবিতে হইবে। ভিয়েতনামের মতো দেশ আউটডোর চিকিৎসাকেও বিমার অধীনে আনিতে পারিয়াছে, তাই রোগীর ব্যয়ভার বাস্তবিকই কমিয়াছে। ভারত পারিবে না কেন?

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন