রাজনাথ সিংহ এবং দীনেশ্বর শর্মা। ছবি: পিটিআই।
বোধোদয় সম্ভবত হল অবশেষে। যথেষ্ট বিলম্বেই হল, সংশয় নেই। কিন্তু নিরন্তর পেশীর আস্ফালন আর ভারী বুটের শব্দ আর বুলেট আর পেলেট আর রক্তপাত জম্মু-কাশ্মীরে শান্তি ও স্বাভাবিকতা ফেরানোর একমাত্র পথ হতে পারে না— এ কথা যে ভারত সরকারের মাথায় ঢুকল, সে অবশ্যই ইতিবাচক।
উপত্যকায় আলোচনার দরজাগুলো ফের খুলতে চাইছে কেন্দ্রীয় সরকার— স্পষ্ট বার্তা দিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। আলোচনার পুনরুজ্জীবনের লক্ষ্যে দীনেশ্বর শর্মাকে ভারত সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে। আলোচনার অর্থ যে সবার সঙ্গে আলোচনা, সব পক্ষের বক্তব্য জেনে নেওয়া, উপত্যকার প্রতিটি মন ও মানসিকতা পড়ার চেষ্টা করা, সে কথাও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী স্পষ্ট করেই জানিয়েছেন।
এই পদক্ষেপকে সর্বাগ্রে সাধুবাদই জানানো উচিত। জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি এবং বিরোধী দলের নেতা ওমর আবদুল্লাও কেন্দ্রের পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন। সন্ত্রাসের করাল থাবার বিরুদ্ধে উপত্যকায় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখার যে লড়াই, মেহবুবা-ওমররা অবশ্যই সে লড়াইয়ের সবচেয়ে বড় সৈনিক। কিন্তু দীর্ঘ দিন জম্মু-কাশ্মীরের রাজনীতির এই দুই স্তম্ভ পরস্পরের সঙ্গে সহমত হওয়ার কোনও অবকাশই খুঁজে পাচ্ছিলেন না। কেন্দ্রের পদক্ষেপটা অনেক দিন পর মেহবুবা মুফতি এবং ওমর আবদুল্লাকে একই অবস্থানে আসতে সাহায্য করল। গণতন্ত্রই মজবুত হল।
আরও পড়ুন: কাশ্মীরে কথা চালাতে দূত কেন্দ্রের
প্রশ্ন অবশ্য রয়েছে কিছু। জম্মু-কাশ্মীরে শান্তি এবং স্বাভাবিকতা রক্ষার্থে আলোচনাই যে সবচেয়ে শক্তিশালী পথ, সে কথা বহু চর্চিত। আগেও বিভিন্ন পক্ষ আলোচনায় বসার পরামর্শ দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারকে। কিন্তু কেন্দ্র খুব একটা আগ্রহ দেখায়নি। নিরাপত্তা বাহিনীর সক্ষমতার আস্ফালনই জঙ্গি কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণে সবচেয়ে কার্যকরী ভূমিকা নেবে বলে সরকার মনে করেছিল। জম্মু-কাশ্মীরের শীর্ষ রাজনীতিকরা শুধু নয়, জাতীয় রাজনীতির রথী-মহারথীরাও নয়াদিল্লিকে বার বার মনে করিয়ে দিতে চেয়েছেন, উপত্যকায় স্থায়ী শান্তি ফেরানোর জন্য আলাপ-আলোচনার চেয়ে ভাল পথ আর কিছুই হতে পারে না। কিন্তু এ সব পরামর্শ সে সময়ে ভাল লাগেনি কেন্দ্রীয় সরকারের কর্তাদের। প্রভূত বলপ্রয়োগ, প্রচুর রক্তপাত, একের পর এক প্রাণহানি এবং অসহনীয় হিংসার দিন পেরিয়ে এসে কেন্দ্র উপলব্ধি করল, আলাপ-আলোচনাই চূড়ান্ত পথ, বলপ্রয়োগ-রক্তপাত-প্রাণহানি শেষ কথা বলতে পারে না। সেই যখন আলোচনাতেই ফেরা গেল, তখন আরও আগেই এই পথে ফেরা সম্ভব ছিল না কি? এত রক্তপাত, এত প্রাণহানি, এত হিংসা কি আদৌ জরুরি ছিল? সদুত্তর মেলা কঠিন এই প্রশ্নের।
প্রশ্নগুলো যে রয়েছে এবং সব প্রশ্নের সদুত্তর যে নেই, তা জেনেও আবার বলছি, জম্মু-কাশ্মীরে আলাপ-আলোচনার দরজাগুলো ফের খুলে দেওয়ার চেয়ে ভাল সিদ্ধান্ত এই মুহূর্তে আর কিছুই হতে পারত না। যে পথ খুলল, সেই পথে হেঁটে নতুন সকালের দিকে এগনোর চেষ্টা করা যাক আপাতত। বাকিটার উত্তর ভবিষ্যৎ দেবে।