পরিবর্তনের ডাক

অতি সম্প্রতি চিলির শিক্ষক-অধ্যাপক-সমাজকর্মীরা একযোগে প্রেসিডেন্টের কাছে বার্তা পাঠাইয়াছেন যে, এই ভাবে ক্রমাগত মানবাধিকার দলন কোনও সভ্য দেশে চলিতে পারে না।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০১৯ ০১:২১
Share:

ছবি পিটিআই।

কাতারে কাতারে মানুষ রাস্তায় নামিয়া আসিয়াছেন। কাহারও হাতে বাসন, কাহারও হাতে কাপড়। বাসন ঝনঝনাইয়া, পতাকা ফেস্টুন ব্যানার উঁচাইয়া তাঁহারা বিক্ষোভ প্রদর্শন করিতেছেন। বিক্ষোভ আরম্ভ সাবওয়ে অর্থাৎ ভূগর্ভ রেলের ভাড়া দিয়া। সহজেই তাহার সঙ্গে জুড়িয়া গেল বাস-ট্রাম-ট্যাক্সি ইত্যাদি বিষয়ক প্রতিবাদ, নানা প্রকার করের বিরোধিতা, রাজনৈতিক নেতাদের যথেচ্ছাচারের বিরুদ্ধে ক্ষোভাগ্নি, এবং শেষ পর্যন্ত রাজনীতির সার্বিক পরিবর্তনের দাবি। সব মিলাইয়া চিলির মানুষ যে আন্দোলনে নামিয়াছেন, তাহাকে আন্দোলন না বলিয়া বিদ্রোহ বলিলেও এখন অত্যুক্তি হইবে না। প্রশাসনও প্রবল উদ্যমে মোকাবিলায় নামিয়াছে। কাঁদানে গ্যাসের গন্ধে গোটা রাজধানী শহর উদ্‌ব্যস্ত। সোশ্যাল মিডিয়া ছাইয়া গিয়াছে পুলিশি নির্যাতনের ছবিতে! অন্তত কুড়ি জন ইতিমধ্যেই প্রাণ হারাইয়াছেন, বেগতিক দেখিয়া প্রেসিডেন্ট পিনিয়েরা খানিক মার্জনাভিক্ষাও করিয়াছেন। তবে তাহাতে অশান্তির আগুন নিবে নাই, আরও বেশি করিয়া জ্বলিয়াছে। আপাতত সাধারণ মানুষ আর প্রশাসনিক সমাজ— চিলি দেশটি এখন ‘শ্রেণি’সংগ্রামে থরথর কম্পমান। আশ্চর্যই বলিতে হইবে, কেননা কিছু দিন আগে অবধিও এই চিলিকে মনে করা হইত, দক্ষিণ আমেরিকার অন্যতম শান্ত ও স্থিতিশীল রাজনীতির দেশ।

Advertisement

ছবিটির মধ্যে যে অনেকখানিই ভুল ছিল, তাহা আজ আর বলিয়া দিতে হয় না। দীর্ঘ কাল একনায়কত্বের শাসনাধীন এই দেশে এখনও কর্তৃত্ববাদের পুরাতন ঐতিহ্য রাজনীতির আনাচে কানাচে সঙ্গোপনে বাহিত হইতেছে। যে ভাবে মানুষ আজ প্রতিবাদমুখর হইয়া উঠিয়া শাসকসমাজের নিকট হইতে দায়বদ্ধতা দাবি করিতেছেন, তাহাই বলিয়া দেয়, রাজনীতির আত্মসংশোধনের প্রয়োজনটিও অত্যন্ত জরুরি হইয়া গিয়াছে। ১৯৯০-এর দশকে আউগুস্তো পিনোশের শাসনাবসানের পর এত বড়, এত হিংসাত্মক গণ-প্রতিবাদ দেখেন নাই চিলির অধিবাসীরা। উত্তাল তরুণ প্রজন্ম এই বার্তা পৌঁছাইয়া দিতে চাহিতেছে যে, বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা, স্বাস্থ্যব্যবস্থায় তাহাদের সহ্যক্ষমতা শেষ হইবার জোগাড়।

প্রসঙ্গত উঠিয়া আসিতেছে মানবাধিকার হননের ব্যাপকতার কথা। অতি সম্প্রতি চিলির শিক্ষক-অধ্যাপক-সমাজকর্মীরা একযোগে প্রেসিডেন্টের কাছে বার্তা পাঠাইয়াছেন যে, এই ভাবে ক্রমাগত মানবাধিকার দলন কোনও সভ্য দেশে চলিতে পারে না। এখনই ইহার বিহিত হওয়া প্রয়োজন। আন্দোলনকারীরা আরও একটি কথা স্পষ্ট করিয়া দিয়াছেন। তাঁহাদের প্রতিবাদ কেবল দেশের শাসক দল বা পক্ষের বিরুদ্ধে নহে, দলমতনির্বিশেষে সমস্ত রাজনৈতিক সমাজের বিরুদ্ধে। ইহাতেই পরিষ্কার— রাজনৈতিক সমাজের বাহিরে যে নাগরিক সমাজ, তাহারাই এই আন্দোলনের মুখ্য চালিকাশক্তি। রাজনৈতিক বিরোধীদের ইহাতে বিশেষ ভূমিকা নাই। এমনকি বিরোধীরা এই সুযোগ বিশেষ কাজে লাগাইতেও ব্যর্থ। বিষয়টি প্রণিধানযোগ্য। রাজনীতির বাহিরে যে এখনও নাগরিক সমাজের বৃহৎ প্রতিবাদ রূপায়িত হইতে পারে, আজিকার এই ঘোর অন্ধকারাচ্ছন্ন সময়ে বিশ্বদরবারে তাহার দৃষ্টান্ত পেশ করিতেছে চিলি। দৃষ্টান্তটির মূল্য অসীম। কর্তৃত্ববাদের সাগরে ভাসমান বিশ্ব ইহা হইতে কিছু শিখিতে পারে।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন