Newsletter

কমল নাথ আপনিও!

মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী পদে দু’দিন কাটতে না কাটতেই কমল নাথ বিভাজনের পথে হাঁটলেন। মধ্যেপ্রদেশের অধিকাংশ চাকরি বিহার এবং উত্তরপ্রদেশের লোকজনদের দখলে চলে গিয়েছে বলে কমল নাথ মন্তব্য করলেন।

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:৫১
Share:

কোনও মুখ্যমন্ত্রীর মুখে এই রকম ইঙ্গিত কতটা মারাত্মক হতে পারে, কতটা ঘৃণা এবং বিদ্বেষ তৈরি করতে পারে, তা কি কমল নাথ জানেন না! ফাইল চিত্র।

বার বার সতর্কাবার্তা উচ্চারিত হয়, কিন্তু টনক নড়ে না কিছুতেই। বিভাজন আর সঙ্কীর্ণতা বার বার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে এ দেশের রাজনীতিতে। বার বার তা আক্রমণ করে ভারত রাষ্ট্রের মূল সূত্রকে।

Advertisement

একটা ধুন্ধুমার নির্বাচনী যুদ্ধ শেষ হয়েছে সদ্য। ওই যুদ্ধে বিজেপির বিরুদ্ধে বার বার বিভাজনের রাজনীতি করার অভিযোগ তুলেছেন রাহুল গাঁধী এবং তাঁর দলবল। রাহুলের অভিযোগে যদি সত্যতা থাকে, তা হলে ধরে নিতে হবে যে, দেশবাসী বিভাজনের রাজনীতিকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। কিন্তু এতো কাণ্ডের পরেও এ কী শুনতে হল! মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী পদে দু’দিন কাটতে না কাটতেই কমল নাথ বিভাজনের পথে হাঁটলেন। মধ্যপ্রদেশের অধিকাংশ চাকরি বিহার এবং উত্তরপ্রদেশের লোকজনদের দখলে চলে গিয়েছে বলে কমল নাথ মন্তব্য করলেন। তাঁর রাজত্বে এই পরিস্থিতি বরদাস্ত করা হবে না বলেও স্পষ্ট ইঙ্গিত দিলেন।

বিভাজন তৈরি করা, সাম্প্রদায়িকতাকে প্রশ্রয় দেওয়া, মেরুকরণের রাজনীতি করা— বিজেপির বিরুদ্ধে লাগাতার এই অভিযোগগুলো করছিলেন রাহুল গাঁধী। তিনটি রাজ্যের নির্বাচনী ফলাফল দেখে যদি ধরে নিতে হয় যে, রাহুলের বক্তব্যের উপরে দেশের মানুষ একটু একটু করে আস্থা রাখতে শুরু করেছেন, তা হলে কমল নাথের এই মন্তব্য রাহুলের জন্য অত্যন্ত অস্বস্তি ডেকে আনল নিশ্চয়ই। মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে বসা মাত্রই তিনি এমন একটা সঙ্কীর্ণ, বিভাজনকারী এবং প্রাদেশিক মন্তব্য করলেন কী ভাবে? এই প্রশ্ন নানা মহল থেকে উঠছে। বিহার আর উত্তরপ্রদেশের লোকজনের জন্য মধ্যপ্রদেশের নাগরিকরা কর্মসংস্থান থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন— কোনও মুখ্যমন্ত্রীর মুখে এই রকম ইঙ্গিত কতটা মারাত্মক হতে পারে, কতটা ঘৃণা এবং বিদ্বেষ তৈরি করতে পারে, তা কি কমল নাথ জানেন না!

Advertisement

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

আরও পড়ুন: উত্তরপ্রদেশ-বিহারবাসীর জন্যই মধ্যপ্রদেশে জীবিকায় কোপ! কমল নাথের মন্তব্যে বিতর্ক

অসমে বাঙালি এবং বিহারিদের উপর আক্রমণ, গুজরাত এবং মহারাষ্ট্র থেকে বিহারি বিতাড়নের চেষ্টা, দিল্লিতে আক্রমণ উত্তর-পূর্ব ভারত থেকে যাওয়া পড়ুয়াদের উপর— বিভাজনের আগুন কিন্তু দেশের নানা প্রান্তে এ ভাবেই অস্থিরতা তৈরি করেছে বার বার। সে বিভাজন কোনও রাজনৈতিক দলের তৈরি করা, নাকি অন্য ভাবে জন্ম নেওয়া, সে তর্ক জরুরি নয়। জরুরি হল এটা বোঝা যে, এই ভারতের যে কোনও প্রান্তে বসবাস এবং জীবিকা নির্বাহ করার অধিকার রয়েছে যে কোনও ভারতীয় নাগরিকের। এই কথাটা গোটা দেশ ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করলে প্রত্যেক ভারতবাসীকেই বিপদে পড়তে হতে পারে। কিন্তু কমল নাথের মতো প্রবীণ , অভিজ্ঞ নেতা তথা দীর্ঘ দিনের সাংসদ তথা দফায় দফায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রিত্বে আসীন হওয়া এক জন নেতা এই মন্তব্য কী ভাবে করলেন, তার ব্যখ্যা খুঁজে পাওয়া কঠিন হচ্ছে।

রাহুল গাঁধীর ঘনিষ্ঠ বৃত্তের অন্যতম নেতা হিসেবেই এখন পরিচিতি কমল নাথের। বিজেপির কট্টরবাদকে আক্রমণ করে তার বিপরীতে কংগ্রেসের যে প্রগতিশীল এবং উদার ভাবমূর্তি তুলে ধরার চেষ্টা রাহুল করছেন, কমল নাথ গোড়া থেকেই সেই প্রয়াসের অঙ্গ। কিন্তু মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হওয়া মাত্রই যে রকম বিভাজক মন্তব্য কমল করলেন, তা এ বার কংগ্রেসকেও বিভাজনকামী রাজনীতি করার দায়ে অভিযুক্ত করছে।

কমল নাথের মন্তব্যের কোনও বিরোধিতা এখনও করেননি কংগ্রেস নেতৃত্ব। বিপজ্জনক মন্তব্যের জন্য কমল নাথকে রাহুল গাঁধী তিরস্কার করেননি এখনও পর্যন্ত। যদি তিরস্কৃত না হন মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী, তা হলে বিভাজনের রাজনীতির অভিযোগ তুলে বিজেপি-কে আক্রমণ করার নৈতিক অধিকার কিন্তু হারিয়ে ফেলবেন রাহুল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন