ভারতের ইতিহাসে চরকা এবং চরকা-বোনা গাঁধীজির ওই ছবির মূল্য যে কী, মোদীরা হয় তা জানেন না, অথবা তা জেনেই ওই ছবি মুছে ফেলার কাজে প্রবৃত্ত হয়েছেন।
ইতিহাস সাক্ষী, দু’টি বিস্মরণ সভ্যতার বিবর্তনে বার বার নেতিবাচক বাঁক এনে দিয়েছে। প্রথম বিস্মরণটি ইতিহাসকে, দ্বিতীয় বিস্মরণ সত্যকে। ইতিহাসকে পাল্টে নিজের মতো করে লিখে দেওয়ার চেষ্টা অথবা স্তাবকদের তোষামোদের পরিভাষায় সত্যকে ভুলে রংচঙে কল্পনাকে বাস্তব বলে ধরে নেওয়া— এ দুটোই যে কত ক্ষতিকর হতে পারে, হিটলার থেকে শুরু করে অসংখ্য মানুষ তার সাক্ষ্য দেবেন।
পরিতাপের বিষয় নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহের জমানায় ভারতের শাসককুল এখন সেই চেষ্টাতেই রত। ইতিহাসের পাঠ খুব বেশি নেওয়া নেই বলেই বোধহয় ইতিহাসের শিক্ষা নেওয়ার মতো উপলব্ধি করছেন না তাঁরা। না হলে, জাতির জনক বলে গোটা দেশ যাঁকে মেনে নিয়েছে, যে ছবিটাকে মনের মধ্যে গেঁথে নিয়েছে, সেখানে নিজেকে বসানোর স্পর্ধা দেখাতেন না নরেন্দ্র মোদী। চরকা কাটা রূপক মাত্র। ভারতের ইতিহাসে চরকা এবং চরকা-বোনা গাঁধীজির ওই ছবির মূল্য যে কী, মোদীরা হয় তা জানেন না, অথবা তা জেনেই ওই ছবি মুছে ফেলার কাজে প্রবৃত্ত হয়েছেন।
আত্মপ্রেম অথবা আত্মম্ভরিতা খুব সুগভীরে প্রোথিত না হলে চরকার ছবিটা আসতই না। আত্মম্ভরিতার কারণটা স্পষ্ট করে দিয়েছেন হরিয়ানার মন্ত্রী এবং বিজেপি নেতা অনিল ভিজ। পারিষদ দলে যদি শত মুখে বলতে শুরু করেন, গাঁধীজি এখন নির্বাপিত প্রায়, ব্র্যান্ড মোদীই এখন একমেবমদ্বিতীয়ম, তা হলে আর মোদীর দোষ থাকে কোথায়? ক্ষুদ্র মনুষ্যই তো!
বর্তমান শাসক যদি ইতিহাসকে মোছার চেষ্টা করে, যদি সত্যকে বিস্মৃত হয়ে কল্পনার ফানুস তৈরি করে, ভবিষ্যত্ ক্ষমা করবে না। যত বড় প্রচণ্ড শাসকই হোক না কেন, ইতিহাস বড় নির্মোহ। এবং নিষ্ঠুরও।