Coronavirus

জলের ন্যায় কঠিন

বড় বড় শহরগুলিতে পানীয় জলই মহার্ঘ হইয়াছে, যাহার ফলে সর্বাধিক বিপাকে পড়িতেছেন গরিব মানুষ।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০২০ ০২:১৬
Share:

প্রায় অলক্ষ্যে চলিয়া গেল আন্তর্জাতিক জল দিবস, গত মাসে। অথচ নোভেল করোনাভাইরাসের আক্রমণে সন্ত্রস্ত বিশ্বে ২২ মার্চ দিনটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ ছিল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই ভয়ানক জীবাণু হইতে রক্ষা পাইতে বার বার পরিষ্কার জলে হাত ধুইবার নির্দেশ দিয়াছে। অর্থাৎ জল থাকিলে মানুষ রোগমুক্ত থাকিবে, জল না থাকিলে রোগাক্রান্ত হইবে। জল দিবস ফের মনে করাইল, বিশ্বের একশত নব্বই কোটি মানুষের নিকট পরিচ্ছন্ন ও নিরাপদ জল অধরা থাকিয়া গিয়াছে। ইহাদের অধিকাংশই ভারত-সহ তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিতে বসবাসী মানুষ। অধিকাংশই দরিদ্র। কিন্তু ইহারা অসুস্থ হইলে সকলের মধ্যে অসুখ ছড়াইবে। অতি সাবধানে জল ব্যবহার করিলেও, বিশেষজ্ঞদের নির্দেশমতো সাবান দিয়া হাত পরিষ্কার করিতে এক এক বার অন্তত দুই লিটার জল লাগিবে। সারা দিনে দশ বার ধুইলে কুড়ি লিটার। একটি পরিবারের অন্তত একসশত লিটার। সুজলা ভারতের কত পরিবার দিনে এক শত লিটার জল জোগাড় করিতে পারে?

Advertisement

বড় বড় শহরগুলিতে পানীয় জলই মহার্ঘ হইয়াছে, যাহার ফলে সর্বাধিক বিপাকে পড়িতেছেন গরিব মানুষ। উত্তর ভারতের বেশ কিছু রাজ্যে নব্বইয়ের দশক হইতে ভূগর্ভের জলস্তর প্রতি বৎসর অন্তত আট ইঞ্চি নামিতেছে। তৎসত্ত্বেও ভূগর্ভস্থ জলের উপর নির্ভরতা বাড়িতেছে। সরকার-পোষিত ক্ষুদ্র সেচ প্রকল্পের প্রায় ৯৫ শতাংশ ভূগর্ভের জলের উপর নির্ভরশীল। নদী-পুকুর, খাল-বিলের জল, বৃষ্টির জলের ব্যবহার না বাড়াইলে সঙ্কট গভীর হইবে। রোগ এড়াইতে হইলে কেবল জীবা কারণে মৃত্যু ঘটিতেছে, তাহার মধ্যে প্রধান ডায়েরিয়া। যাহা ইঙ্গিত করে, পানীয় জলে বর্জ্য জলের জীবাণু মিশিতেছে। এই সমস্যা পূর্বের অপেক্ষা কমিতেছে, এমনও নহে। স্বচ্ছ ভারত প্রকল্পে যে অগণিত সেপটিক ট্যাঙ্ক তৈরি হইয়াছে, সেগুলি পরিষ্কৃত ও সুরক্ষিত না থাকিলে ভূগর্ভস্থ পানীয় জলে দূষণ ছড়াইবে কি না, সেই আশঙ্কা রহিয়াছে। এই সকল কারণে সকল প্রকার বর্জ্য তরলের সংস্কার করিবার ব্যবস্থা অত্যন্ত প্রয়োজন, যাহাতে তাহা দূষণ ছড়াইতে না পারে। আরব দেশগুলি জলবিরল, কিন্তু জলের সংস্কার করিয়া পুনর্ব্যবহার করিতে দক্ষ। ওমান তাহার ব্যবহৃত ও বর্জ্যের একশো শতাংশ সংস্কার করে এবং ৭৮ শতাংশ পুনরায় ব্যবহার করে। ইজ়রায়েলের ড্রিপ ইরিগেশন গোটা দুনিয়ায় জলসাশ্রয়ী সেচের প্রকৃষ্ট মডেল হিসাবে স্বীকৃতি পাইয়াছে। শিক্ষাটি সরল— জল-সমস্যার সমাধান খুঁজিতে হইবে বিভিন্ন বিকল্প পথেই।

জলের সঙ্কটটি এত তীব্র, এবং এত ব্যাপক হওয়ার পরও তাহা কেন যথেষ্ট রাজনৈতিক গুরুত্ব পায় না? সাধারণ দায়িত্বজ্ঞানহীনতা ভিন্ন এই প্রশ্নের যদি আর কোনও উত্তর থাকে, তবে তাহা ইহা যে জল বস্তুটি ক্রয়যোগ্য। হাওয়ায় দূষণ ভাসিলে তাহা যেমন ক্ষমতাবান আর ক্ষমতাহীন, ধনী এবং দরিদ্রের মধ্যে প্রভেদ করে না, সকলেই তাহার নিকট সমান অসহায়— জলের ক্ষেত্রে তাহা ঘটে না। অর্থবল থাকিলে পরিস্রুত জল কিনিয়া লওয়া যায়। যত প্রয়োজন, টাকা থাকিলে তত জল পাইবার পথে এখনও কোনও বাধা নাই, কারণ সম্পদ হিসাবে জল এখনও অপ্রতুল নহে। সমস্যা তাহার সমবণ্টনে। বাজার নিজের ধর্ম অনুসারেই চলিবে। যাঁহারা সেই বাজারে প্রবেশ করিতে অসমর্থ, তাঁহাদের কথা ভাবিবার দায়িত্ব সরকারের। সকলের জন্য যথেষ্ট এবং নিরাপদ জল কী ভাবে জোগান দেওয়া যায়, এখনই তাহার পথ সন্ধান করা ব্যতীত উপায়ান্তর নাই। বহু ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক নিষ্ক্রিয়তার পিছনে একটি কারণ নিহিত থাকে বলিয়া অভিযোগ— সরকার ধরিয়া লহে, কোনও ব্যবস্থা না হইলে শেষ অবধি মানুষ পরিস্থিতির সহিত মানাইয়া লইবে। কিন্তু, আর মানাইয়া লওয়ারও অবকাশ নাই। এই বার সমাধান করিতেই হইবে।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন