Coronavirus

দায়

এই ব্যর্থতার দায় কেবল ওই সংগঠনটির নহে। কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্য প্রশাসনকেও দায় বহন করিতে হইবে বইকি।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০২০ ০০:৩৪
Share:

দিল্লির নিজ়ামুদ্দিন অঞ্চলে যাহা ঘটিল, তাহা কেবল অবাঞ্ছিত নহে, অতীব হতাশাজনক। এতগুলি মানুষের করোনা-কবলে পড়িবার মধ্যে, কিংবা করোনা-আশঙ্কায় পড়িবার মধ্যে, একটি বড় মাপের দুর্ভাগ্য আছে। দেশব্যাপী লক্ষ লক্ষ মানুষের সাবধানতা গ্রহণের মধ্যে যখন সেই দুঃসংবাদ আসিয়া পড়ে, তখন সমধিক বড় হতাশার বোধ গ্রাস করে। গোটা দেশের সঙ্কট-মোকাবিলা যেন কিয়দংশে অর্থহীন হইয়া যায়। করোনা সঙ্কটের চরিত্রটিই তেমন। আক্ষরিক অর্থে ইহার মোকাবিলায় সকলকে প্রয়োজন, নতুবা লক্ষ্য পূর্ণ হইবার নহে। নিজ়ামুদ্দিনের ঘটনায় যাঁহারা অসুস্থ হইয়া পড়িলেন, তাঁহারা নিজেদের সহিত অন্য বহু মানুষের বিষম বিপদ ডাকিয়া আনিলেন। অথচ এই দুর্বিপাক সহজেই এড়ানো যাইত। সহজেই, কেননা কোনও ধর্মবিশ্বাস বা ধর্মাচরণই বলে না তাহার জন্য নিজেকে ও প্রতিবেশী মানুষের জীবন বিপন্ন করিতে, আর তাই এ হেন সঙ্কটকালে নিজের নিজের বিশ্বাস অটুট রাখিয়া নিজ নিজ পরিসরে থাকা এমন কিছু কঠিন বিষয় নহে। মার্চ মাসের প্রথমে যতখানি বিপদের বার্তা ছিল, তাহার উপর নির্ভর করিয়াই তবলিগ-ই-জামাত নামক ইসলামি ধর্মীয় সংগঠনটির পক্ষ হইতে এই জমায়েত বাতিল করা উচিত ছিল। পরিকল্পনাকারীদের এই অযৌক্তিক, অন্যায় ও অমানবিক পদক্ষেপের কারণে আজ কত মানুষ বিপন্ন হইলেন ভাবিলে শিহরিয়া উঠিতে হয়। সংগঠনটির পক্ষ হইতে যে বক্তব্য পেশ হইয়াছে, তাহা হইতে আদৌ পরিষ্কার নহে, কেন জরুরি ভিত্তিতে এই সমাবেশ স্থগিত রাখা হইল না। প্রসঙ্গত, ওই সময়েই পূর্বনির্ধারিত বসন্তোৎসব কর্মসূচি বাতিল করিয়াছিল পশ্চিমবঙ্গের বিশ্বভারতী, করোনা আশঙ্কায়।

Advertisement

অবশ্যই, এই ব্যর্থতার দায় কেবল ওই সংগঠনটির নহে। কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্য প্রশাসনকেও দায় বহন করিতে হইবে বইকি। যে কারণে মার্চের তৃতীয় সপ্তাহ হইতে সমগ্র দেশ সম্পূর্ণ ‘লকডাউন’ করিয়া দেওয়া হইবে, মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে সেই একই কারণে যে রাজধানীর বুকেও সরকারি সচেতনতা ছিল না, ইহা যুগপৎ লজ্জা ও ত্রাসের বিষয়। মানুষের হাতে সিদ্ধান্ত ছাড়িয়া দিলে যে চলিবে না, প্রশাসনকে কড়া হাতে পরিস্থিতি সামলাইতে হইবে, এই কথা কি দিল্লির শাসকদের জানা ছিল না? আন্তর্জাতিক বিমানের আনাগোনা কেন আরও আগে বন্ধ হয় নাই, রাাহুল গাঁধী প্রশ্ন তুলিয়াছেন। তাহার সঙ্গে এই প্রশ্নও যোগ করা জরুরি, কেন তবলিগ-এর জমায়েত সরকারি নির্দেশে বন্ধ করা হয় নাই? কেনই বা জাতীয় লকডাউন ঘোষণার পরেও মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ তাঁহার রাজ্যে ভিড় জমাইয়া রামের মূর্তি স্থানান্তর করিতে পারিলেন? এই সব হিমালয়-সমান প্রশাসনিক ব্যর্থতার দাম কি দেশের সাধারণ মানুষকেই দিতে হইবে না?

ঠিক সেই দায়টিই নিজেদের উপর হইতে সরাইবার জন্য ইতিমধ্যে এক সাম্প্রদায়িক প্রচার শুরু হইয়াছে মুসলিম সমাজের বিরুদ্ধে। শোনা যাইতেছে, দেশের সংখ্যালঘু সমাজেরই বিষম দায়িত্বজ্ঞানহীনতার প্রমাণ নিজ়ামুদ্দিন কাণ্ড। অথচ, এই দুর্ভাগ্যজনক সংবাদের মধ্যে হিন্দু-মুসলমান প্রশ্ন না উঠাইয়া দায়িত্বের প্রশ্নটিই উঠাইবার কথা ছিল। যে সার্বিক দায় বহন সকলের কাজ, হিন্দু মুসলিম বৌদ্ধ জৈন পারসিক সকলের জন্যই যখন প্রাণরক্ষার খাতিরে এক নিদান, সকলেই ধর্ম-গোষ্ঠীনির্বিশেষে যখন তাহা আপ্রাণ পালনের চেষ্টা করিতেছেন, এবং জামাতি বা রামভক্তরা যখন কোনও মতেই পুরা মুসলিম সমাজ বা পুরা হিন্দু সমাজের একমাত্র প্রতিনিধি নহেন— তখন এই প্রসঙ্গে সংখ্যাগুরু বা সংখ্যালঘু শব্দগুলি টানিয়া আনিবার প্রয়োজন ছিল না। নিজ়ামুদ্দিন ঘটনা প্রমাণ করিল যে ভারতীয় রাজনীতি ও সমাজ আপাতত অসহিষ্ণু সম্প্রদায়চেতনায় বিষাইয়া গিয়াছে। জাতীয় সঙ্কটেও তাহা হইতে পরিত্রাণের পথ নাই।

Advertisement

অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন