সম্পাদকীয় ১

উত্তীর্ণ গণতন্ত্র

পনেরো বৎসর, দুই মাস, এক দিন। একটি ভয়াবহ অপরাধ ও অপরাধীদের শাস্তিবিধানের মধ্যে ভারতীয় গণতন্ত্রে কাটিয়া গেল ঠিক এতখানি সময়।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১০ মে ২০১৭ ০০:০০
Share:

লড়াইয়ে আরও এক জন ছিলেন বিলকিস বানোর পার্শ্বে— তাঁহার স্বামী ইয়াকুব রসুল। ধর্ষিতা স্ত্রীকে বিনা বাক্যব্যয়ে ত্যাগ করাই যে দেশে দস্তুর, সেখানে ইয়াকুব কেবল বিলকিসের সহিত দাম্পত্য নির্বাহ করেন নাই, তদন্ত হইতে বিচারপ্রক্রিয়ার সুদীর্ঘ যাত্রায় তিনি ছিলেন স্ত্রীর ছায়াসঙ্গী। নারীর সম্মান যে তাঁহার শরীরে থাকে না, ধর্ষিত হওয়া মানে যে জীবন শেষ হইয়া যাওয়া নহে, ইয়াকুব রসুল কোনও বাহুল্য ছাড়াই নিজের জীবন দিয়া এই কথাটি প্রতিষ্ঠা করিয়াছেন। যাঁহারা ‘তিন তালাক’-এর বিরোধিতায় গলা চিরিয়া ফেলিতেছেন, ইয়াকুবের ধর্মীয় পরিচয়টি তাঁহাদের স্মরণ করাইয়া দেওয়া যাইতে পারে।

Advertisement

বম্বে হাইকোর্ট যে দিন বিলকিস বানো মামলার রায় ঘোষণা করিল, তাহার পরের দিনই সুপ্রিম কোর্টে নির্ভয়া মামলার নিষ্পত্তি হইল। দুই ক্ষেত্রে অপরাধীদের শাস্তির মাত্রায় তারতম্য চোখ এড়াইবার নহে। নির্ভয়ার চার ধর্ষকেরই যখন মৃত্যুদণ্ড হইল, বিকলিসের ধর্ষক ও তাহার পরিবারের ১৪ জনের হত্যাকারীদের চরম সাজা দিতে সম্মত হয় নাই বম্বে হাইকোর্ট। যে কোনও সভ্য সমাজই প্রাণদণ্ড এড়াইয়া চলিতে চাহিবে। ভারতীয় বিচারব্যবস্থাও কেবলমাত্র ‘বিরলের মধ্যে বিরলতম’ অপরাধের ক্ষেত্রেই প্রাণদণ্ড দিয়া থাকে। আদালতের প্রতি সম্পূর্ণ শ্রদ্ধা বজায় রাখিয়া, এবং দুইটি অপরাধের একটিকেও লঘু না করিয়াও প্রশ্ন তোলা প্রয়োজন— নির্ভয়ার প্রতি সংঘটিত নৃশংসতা কি বিলকিসের ধর্ষণ, তাঁহার তিন বৎসরের কন্যাসন্তান সমেত ১৪ জনকে হত্যা করার তুলনাতেও বিরলতর? অপরাধীরা ‘হিস্ট্রি শিটার’ কি না, তাহারা প্রতিহিংসার আগুনে উন্মত্ত ছিল কি না— এই প্রশ্নগুলি তাহাদের অপরাধের গুরুত্বকে খানিক হইলেও কি লঘু করিয়া দিল? সমাজকে এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজিতে হইবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন