National news

অন্ধকার সুড়ঙ্গে এনেছেন আপনি, সকালটা আনার দায় এখন আপনারই

আচমকা একটা সুড়ঙ্গের মধ্যে ঢুকে পড়তে হয়েছে। কারওরই জানা ছিল না পথে এ রকম ঘুটঘুটে অন্ধকার একটা সুড়ঙ্গ আচমকা হাজির হবে। রাষ্ট্রনেতা সকলকে চমকে দিয়ে জাতীয় জীবনের গোটা প্রবাহটাকেই হ্ঠাৎ এই সুড়ঙ্গে ঢুকিয়ে দিয়েছেন গত ৮ নভেম্বর সন্ধ্যার পরে।

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৮ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৩:৫৫
Share:

ফাইল চিত্র।

আচমকা একটা সুড়ঙ্গের মধ্যে ঢুকে পড়তে হয়েছে। কারওরই জানা ছিল না পথে এ রকম ঘুটঘুটে অন্ধকার একটা সুড়ঙ্গ আচমকা হাজির হবে। রাষ্ট্রনেতা সকলকে চমকে দিয়ে জাতীয় জীবনের গোটা প্রবাহটাকেই হ্ঠাৎ এই সুড়ঙ্গে ঢুকিয়ে দিয়েছেন গত ৮ নভেম্বর সন্ধ্যার পরে। আর স্বপ্ন দেখিয়েছেন, সুড়ঙ্গের ও পারে একটা স্নিগ্ধ, আলোকোজ্জ্বল সকাল অপেক্ষায় রয়েছে আমাদের জন্য।

Advertisement

এ সুড়ঙ্গ যতই বিপদসঙ্কুল হোক, এর শেষ প্রান্ত কাঙ্খিত সকালটাতে গিয়েই শেষ হয়েছে— এই বিশ্বাসে ভর করে পথ হাঁটতে শুরু করেছিল ভারত। কত দূর হাঁটতে হবে, জানা ছিল না শুরুতে। কিন্তু সুড়ঙ্গ বেয়ে ঝুঁকির সফরটা শুরু হওয়ার কয়েক দিনের মধ্যেই অমোঘ বাণীর মতো শোনা গিয়েছিল প্রধানমন্ত্রীর কণ্ঠস্বরটা আবার— মাত্র পঞ্চাশটা দিন এগোতে হবে এ পথ বেয়ে। তা হলেই আঁধার কাটিয়ে পা রাখা যাবে স্বপ্নিল সকালটাতে। সে সকালে কোনও অর্থনৈতিক শোষণ থাকবে না, সে সকালে স্তূপীকৃত কালো ধনের চুড়োয় কাউকে বসে থাকতে দেখা যাবে না, সে সকালে কালোবাজারি থাকবে না— স্বপ্ন দেখিয়েছিল সে কণ্ঠস্বর। প্রধানমন্ত্রীর এই উচ্চারণই মনোবল আরও বাড়িয়ে দিয়েছিল যাত্রীদের। শীতল অন্ধকারের মধ্যে দিয়ে, মৃত্যুর আচম্বিত হানাদারিকে পাশ কাটিয়ে, হাহাকারের ধ্বনির আবহে এগোতে হওয়া সত্ত্বেও নাগরিক বুঝেছিলেন, এ যাত্রা অনন্ত বা অনির্দিষ্ট নয়, গন্তব্য মাত্র পঞ্চাশটা দিন দূরে।

ক্রমশ কঠিন হচ্ছে যাত্রাপথ। সঙ্কীর্ণ সুড়ঙ্গ বেয়ে সারিবদ্ধ অগ্রগমনের সময় সামনের বা পিছনের যাত্রীকে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে দেখছেন কেউ কেউ। কাউকে আবার ঘিরে ধরছে অনাহার, যন্ত্রণা, ক্লেশের ধ্বনি-প্রতিধ্বনিগুলো। তার মধ্যে এক পাশে তুমুল কোলাহল যেন— টাকা নেই, কোথাও টাকা নেই! পরের বাঁকে পৌঁছে সে কোলাহলেরই অন্য রূপ— টাকা রয়েছে, কিন্তু খুচরো কোথাও নেই! দূরাগত অন্য কিছু কণ্ঠস্বর থেকে যেন আর্তনাদ উঠছে— ব্যাঙ্ক নেই, এটিএম নেই, কোথায় যাব! তবুও ভারত দৃঢ়চিত্ত— এ পথ হাঁটতেই হবে, এ সুড়ঙ্গ পেরিয়ে স্বচ্ছ সকালটাতে পৌঁছতেই হবে।

Advertisement

দাঁতে দাঁত চেপে চলছিল সুড়ঙ্গ সফরটা। প্রধানমন্ত্রীর উপর বিশ্বাস রেখেই প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে ক্রমশ দৃঢ় হচ্ছিল চোয়াল। ঠিক এমন সময়ে ছন্দপতন যেন। তিরিশ দিনের পথ যখন অতিক্রান্ত, সুড়ঙ্গ পর্ব যখন মাইলফলকে উপনীত, সরকারের কণ্ঠস্বর হয়ে সামনে এলেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর। জানালেন, আর্থিক প্রগতি ধাক্কা খেয়েছে এ সুড়ঙ্গে ঢুকে, আর্থিক বৃদ্ধির হার কমতে চলেছে। এই আশঙ্কাই তো ব্যক্ত করেছিলেন একের পর এক মান্য অর্থনীতিবিদ! তাঁদের আশঙ্কা কি সত্যি হতে চলেছে তা হলে?

সুড়ঙ্গ পথে বাতাস কিন্তু ক্রমশ ভারী হচ্ছে। বদ্ধ, শ্বাসরোধকর হয়ে উঠছে যাত্রাটা ক্রমশ। এ যাত্রা তবু চলবে। আরও কুড়ি দিন, যে ভাবেই হোক, ভারত হাঁটবেই। কারণ সরকারের কণ্ঠস্বরে প্রত্যয়ের অভাবটা যখন টের পাওয়া গেল, তখন আর পিছন দিকে ফেরার উপায় নেই। কথা রাখার দায়টা এখন আপনারই প্রধানমন্ত্রী। কোটি কোটি চোখে যে স্বপ্ন এঁকে দিয়ে যাত্রাটা আপনি শুরু করিয়েছিলেন, যাত্রা শেষে সে স্বপ্নের কিনারায় তরী আপনাকে ভেড়াতেই হবে। যদি তা পারেন, তা হলে এ যাত্রা বেঁচে গেলেন নরেন্দ্র মোদী। আর যদি না পারেন, তা হলে আমরাও বেঁচে রইলাম।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন