শ্রাবন্তী মিত্র।ফাইল চিত্র।
খুব লজ্জা লাগে, যখন এই একবিংশ শতাব্দীতে পৌঁছেও দেখি, আমার দেশে নারীর স্বাধীনতা সুনিশ্চিত করার জন্য রোজ লড়াই করতে হচ্ছে। খুব হতাশ লাগে, যখন দেখি, আজকের পৃথিবীতে দাঁড়িয়েও ভারতের সরকারকে ‘বেটি বচাও বেটি পঢ়াও’ নামে কোনও এক প্রকল্প চালু করতে হচ্ছে। মেয়েদের স্বাধীনতা বা মেয়েদের ইচ্ছা-অনিচ্ছার গুরুত্ব বা মর্যাদা প্রতিষ্টার জন্য আজও লড়তে হবে আমাদের? মানব সভ্যতা এতখানি পথ পেরিয়ে আসার পরেও মেয়েদের বেঁচে থাকার এবং লেখাপড়া করার অধিকার সুনিশ্চিত করার জন্য রাষ্ট্রকে বিশেষ কর্মসূচি ঘোষণা করতে হবে? এই ছবি যে যথেষ্ট গ্লানির, সে নিয়ে সংশয় থাকা উচিত নয়। কিন্তু এই গ্লানিকেও অকিঞ্চিত্কর মনে হয়, যখন দেখি, এত কিছুর পরেও পড়তে চেয়ে মরতে হচ্ছে নারীকে!
শ্রাবন্তী মিত্রের নামটা গত কয়েক দিনে ঘরে ঘরে পরিচিত হয়ে গিয়েছে, খুব মর্মান্তিক কারণে নামটা পরিচিত হয়েছে। স্নাতকোত্তরের পরেও পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন ছিল শ্রাবন্তীর চোখে। স্বপ্ন পূরণ তো দূরের কথা, পৃথিবীতে আর থাকাই হল না তাঁর। স্বামীর বিরুদ্ধে, শ্বশুরবাড়ির অন্যদের বিরুদ্ধে শ্রাবন্তীর উপর মানসিক নির্যাতন তথা আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ উঠছে। শ্রাবন্তীর শিক্ষানুরাগ তাঁদের অপছন্দ ছিল বলেই শ্রাবন্তীকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেওয়া হল, এমন কথা শোনা যাচ্ছে। অভিযোগ এখনও প্রমাণিত নয়। কিন্তু প্রাথমিক তদন্তে যে তথ্য উঠে এসেছে, ঘটনা পরম্পরা সম্পর্কে যা জানা যাচ্ছে, তাতে বছর পঁচিশের যুবতীর এই পরিণতির কারণ সম্পর্কে সন্দিহান থাকার অবকাশ কমই।
দারিদ্র বা নিদারুণ জীবনযুদ্ধের মুখে পড়ে গৃহবধূকে সমস্যার মুখোমুখি দাঁড়াতে হচ্ছিল, এমন কিন্তু নয়। সম্পন্ন মধ্যবিত্ত পরিবারেই তিনি দুর্ভাগ্যজনক পরিস্থিতির মুখে পড়ছিলেন বরং। এ লজ্জা রাখব কোথায় আমরা?
অসুখটা আসলে মজ্জাগত। আমাদের সমাজের মজ্জাতেই এই বৈষম্যের শিকড় রয়েছে। তাই কোনও রাষ্ট্র বা কোনও সরকারের পক্ষে এ অসুখ সারানো সম্ভব নয়। এ অসুখ সারানোয় উদ্যোগী হতে হবে আমাদের সমাজকেই। না হলে আরও মর্মান্তিক আরও লজ্জাজনক দিন আমাদের অপেক্ষায় থাকবে।