US Presidential Election 2020

অগ্নিপরীক্ষা

আমেরিকায় গণতন্ত্র আর কতখানি অর্থময় থাকিবে, আজিকার ডোনাল্ড ট্রাম্প বনাম জো বাইডেন প্রতিদ্বন্দ্বিতা সেই দিকেই ইঙ্গিত করিতে চলিয়াছে।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০২০ ০১:১৫
Share:

ছবি: এএফপি।

আজ একটি ঐতিহাসিক নির্বাচনের দিন। সাম্প্রতিক ইতিহাসের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনের দিন, এমন বলিলেও অত্যুক্তি হইবে না। শুধু আমেরিকার জন্য নহে, সমগ্র পৃথিবীর জন্যই ইহার গুরুত্ব অপরিসীম। কেননা আকারে বৃহত্তম গণতন্ত্রের দেশ আমেরিকায় গণতন্ত্র আর কতখানি অর্থময় থাকিবে, আজিকার ডোনাল্ড ট্রাম্প বনাম জো বাইডেন প্রতিদ্বন্দ্বিতা সেই দিকেই ইঙ্গিত করিতে চলিয়াছে। উনিশশো ষাটের দশকের সিভিল ওয়ারের পর সে দেশে গণতন্ত্রের যে স্থিত ও গভীর প্রসার ঘটিয়াছিল, সেই অর্ধশতকব্যাপী যাত্রা আর অব্যাহত থাকিবে কি না, আজ তাহা বোঝা যাইবে। চার বৎসর যাবৎ আমেরিকা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অভূতপূর্ব স্বেচ্ছাচারী শাসন দেখিয়াছে। আরও চার বৎসর তাহা দেখিতে আমেরিকানরা রাজি কি না, আজ স্থির হইবে। শতাব্দীর বৃহত্তম অতিমারির ঋতুতে এই দেশটি সর্বাধিক ক্ষতি স্বীকার করিয়াছে। বিশ্বের সেরা শক্তিমান ও সমৃদ্ধিশালী দেশ হিসাবে যাহার প্রতিপত্তি গগনচুম্বী, গত কয়েক মাসে তাহার গৌরবকেতন ধুলায় লুটাইয়া পড়িয়াছে। এই বিপর্যয়ের প্রধান দায় যে স্বয়ং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের, তাঁহার ভ্রান্ত নীতি, স্পর্ধিত অপশাসন, সহানুভূতিরহিত ও পরিকল্পনাহীন স্বাস্থ্যবিধানের— সে কথা আজ বিতর্কের ঊর্ধ্বে। বাস্তবিক, সব মিলাইয়া আমেরিকা আজ এক অভাবিত নিম্নবিন্দুতে নিজেকে নামাইয়া ফেলিয়াছে, যাহা দেখিয়া মিত্ররা তো বটেই, শত্রুরাও যৎপরোনাস্তি বিস্মিত। এই পরিপ্রেক্ষিতে, আজ আমেরিকার নাগরিক ভোট দিবেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিরুদ্ধে কিংবা পক্ষে।

Advertisement

দুইটি কথা আলাদা করিয়া বলা জরুরি। প্রথমত, গণতন্ত্রের প্রকৃত অর্থ যদি হয় জনগণের স্বাধীন বিবেচনা অনুসারে শাসক নির্বাচনের পরিসর, তাহা হইলে আজিকার এই একটিমাত্র ব্যক্তি-কেন্দ্রিক উদ্ভ্রান্ত নির্বাচন কুনাট্য গভীর ভাবে গ্লানিকর, ও গণতন্ত্রের মর্যাদা-হানিকর। আশ্চর্য যে মাত্র চার বৎসর ক্রমাগত নিজেকে লইয়া চর্চা করিয়া, নিজেকে বিজ্ঞাপিত করিয়া কোনও নেতা এক দৃঢ়প্রোথিত গণতন্ত্রকে এত দ্রুত এখানে অবনমিত করিতে পারিলেন। চার বৎসর আগে ওভাল অফিসে প্রবেশমুহূর্ত হইতে অসত্যভাষণ ও অভিসন্ধিমূলক প্রচারের মধ্যে তিনি ‘দেশশাসন’ বিষয়টিকে ডুবাইয়া দিয়াছিলেন, নিজের সঙ্কীর্ণ স্বার্থকে দেশের স্বার্থ হিসাবে প্রতিষ্ঠার কাজে মাতিয়াছিলেন। দ্বিদলীয় রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য আমেরিকার নির্বাচনের সঙ্কীর্ণতার সমালোচনা শোনা যায়। এই বারের নির্বাচন কিন্তু দুই দলের সংঘাত নহে: ইহা কেবল এক জন ব্যক্তির নামে রেফারেন্ডাম বা গণভোট— নীতি, রীতি, আদর্শ, পরিকল্পনা, আর কিছুরই বিশেষ ভূমিকা নাই।

দ্বিতীয়ত, আমেরিকার ইতিহাসে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান, এই দল দুইটি নানা পরিক্রমা ও পরিবর্তনের মধ্য দিয়া আসিয়াছে, ভোলবদলও ঘটাইয়াছে। কিন্তু আজ দুই দলের মধ্যে যে সামাজিক মেরুকরণ— শ্বেতবর্ণীয় সমাজের সংখ্যাগুরু এক দিকে, আর অশ্বেতবর্ণ সমাজ প্রায় সামগ্রিক ভাবে আর এক দিকে, এমন বিভাজন অদৃষ্টপূর্ব। সহজেই অনুমান করা যায়, এই রাজনৈতিক মেরুকরণের পিছনে কী বিপুল বিস্ফোরক সামাজিক সংঘাত ও বিদ্বেষ জাল পাতিয়া রাখিয়াছে। গত বৎসরখানেক ধরিয়া আমেরিকায় বর্ণবিদ্বেষ কেন্দ্র করিয়া আক্ষরিক ভাবে আগুন জ্বলিয়াছে, কৃষ্ণাঙ্গদের প্রতি অবিরাম আক্রমণ নামিয়া আসিয়াছে, মানুষ হতাহত হইয়াছেন, অপরাধ ও অন্যায়ের প্লাবন বহিয়াছে। ভোটের ফলপ্রকাশের পর দেশব্যাপী গৃহযুদ্ধের আশঙ্কাও উড়াইয়া দেওয়া যাইতেছে না। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ‘সৌজন্যে’ বিশ্বের প্রধান শক্তির গৌরব ও মর্যাদা আমেরিকার হাত ফস্কাইয়া বাহির হইয়া গিয়াছে। কিন্তু নিজেকে অটুট ও নিরাপদ রাখিবার ক্ষমতাটুকুও সে আর ধরে কি না, তাহাই যেন আজিকার সংশয়।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন