European Union

প্রকৃতির প্রতিশোধ

প্রকৃতির সহিত সংযোগ স্থাপনে বহু দায়িত্বের ভিতর কার্বন নিঃসরণ হ্রাসের প্রচেষ্টাই সর্বাধিক জরুরি।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০২০ ০৬:২২
Share:

—ফাইল চিত্র।

রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব জানাইলেন, আগামী বৎসরের প্রধান লক্ষ্য: গ্রিনহাউস গ্যাসের নিঃসরণ ‘নেট জ়িরো’-তে লইয়া যাইবার জন্য একটি বিশ্বজনীন জোট প্রস্তুত করা। ‘নেট জ়িরো’ হইল সেই পরিস্থিতি, যেখানে কোনও দেশে বৎসরে সর্বাধিক তত পরিমাণ গ্রিনহাউস গ্যাস উৎপন্ন হইবে, যাহা সেই একই সময়কালে প্রকৃতিতে শোষিত হইতে পারে। অর্থাৎ, নূতন নিঃসরণ বায়ুমণ্ডলে মোট গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমাণ বাড়াইবে না। বর্তমান পৃথিবীতে জলবায়ু পরিবর্তনকে সর্বাধিক গুরুত্ব না দিয়া উপায় নাই। ‘সভ্যতা’র স্বার্থে যে ভাবে পরিবেশের উপর কোপ পড়িতেছে, তাহাতে ক্রমশ ছিন্নবিচ্ছিন্ন হইয়া যাইতেছে এই বিশ্ব। ইহা প্রতীয়মান হইতেছে যে, প্রাকৃতিক বিশ্বের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করিয়াছে আধুনিক জীবনযাত্রা। আপনার উন্নতিসাধনে প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মে হস্তক্ষেপ করিতেও দ্বিধাবোধ করিতেছে না উন্নত মানুষ। কিন্তু এই যুদ্ধ নিঃসন্দেহে মানুষের পক্ষে ‘আত্মঘাতী’ হইতেছে। বুঝা যাইতেছে যে, প্রকৃতিও পাল্টা ঝাপট মারিতে পারে, এবং তাহা পুরা শক্তি প্রয়োগ করিয়া। কোভিড-১৯’এর পরে প্রকৃতির প্রতিশোধের ভয়াবহতা বিষয়ে সংশয়ের অবকাশ নাই। এই ভয়ানক প্রতিশোধের কথা স্মরণে রাখিয়া ভবিষ্যতে সংযত না হইলে বৃহত্তর বিপদ শুধু সময়ের অপেক্ষা।

Advertisement

এক্ষণে করণীয় কী? প্রকৃতির সহিত সংযোগ স্থাপনে বহু দায়িত্বের ভিতর কার্বন নিঃসরণ হ্রাসের প্রচেষ্টাই সর্বাধিক জরুরি। কিন্তু ইহাকে সর্বজনীন কর্তব্য হিসাবে গ্রহণ করিতে না পারিলে লাভ হইবে না। বিশ্বের প্রতিটি দেশ এই বিষয়ে সহমত হইতে না পারিলে কী রূপে বায়ুমণ্ডলকে বাঁচানো সম্ভব? বিপ্রতীপে, সকল দেশকে একসূত্রে গাঁথিয়া ধরিত্রীকে রক্ষা করিবার উদ্যোগটিকে এখনও দিবাস্বপ্ন বলিয়াই মনে হয়। অতএব, প্রয়োজনের মুহূর্তে একত্র হইবার যে শিক্ষা আমরা প্রকৃতির নিকট হইতে পাইয়াছি, তাহা অক্ষরে অক্ষরে পালন করিতে হইবে। বুঝিতে হইবে, এই শিক্ষার অবহেলা আমাদের অস্তিত্ব-অনস্তিত্বের সহিত ওতপ্রোত ভাবে জড়াইয়া আছে। একটি অসুখের সূত্রে যদি সমগ্র বিশ্ব যৌথ ভাবে পদক্ষেপ করিতে পারে, তবে সুখের সন্ধানেও তাহা পারিবে না কেন? জগতের নিয়মে বাধ্য হইয়া যে যৌথতা আমরা অর্জন করিয়াছি, এই বার তাহা সদর্থক ভাবে কাজে লাগাইতে হইবে।

রাষ্ট্রপুঞ্জ-প্রধানের বক্তব্যে নিঃসরণ হ্রাস সংক্রান্ত স্পষ্ট বিশ্বজনীন রূপরেখা উপস্থিত। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, আমেরিকা, চিন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া-সহ বিশ্বের ১১০টি দেশ এই শতকের মাঝামাঝি কালপর্বের ভিতর ‘কার্বন নিউট্রাল’ হইবার অঙ্গীকার করিয়াছে। বিগত চার বৎসর ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমেরিকা এই উদ্যোগে বাধাস্বরূপ হইলেও প্রেসিডেন্ট-ইলেক্ট জো বাইডেন ২০৫০-এর ভিতর কার্বন নিঃসরণ শূন্য করিবার কথা বলিয়াছেন। বৃহৎ শক্তি আমেরিকা পরিবেশ ভাবনাকে যথাযথ গুরুত্ব দিলে সমগ্র বিশ্বেই প্রক্রিয়াটি প্রয়োজনীয় গতি পাইবে বলিয়া আশা করা যায়। কিন্তু, অপর দেশগুলি কী ভাবিতেছে, তাহা অদ্যাবধি স্বচ্ছ নহে। এই অস্পষ্টতা সমগ্র বিশ্বকে আঁধারে নিমজ্জিত করিতে পারে। ২০২০ হইতে শিক্ষা লওয়া প্রয়োজন। নচেৎ, সৌরজগতের নীল গ্রহটি কী রূপে মহাকালের গর্ভে বিলীন হইয়া যাইতে পারে, একটি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ভাইরাস তাহার আভাস দিল।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন