সম্পাদকীয় ১

পিটুলিগোলা

বি হারে ধরাশায়ী নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহকে দেখিয়া বিনিয়োগকারীরা ঘাবড়াইয়া যাইতে পারেন, এমন আশঙ্কা অমূলক ছিল না। অতএব, অরুণ জেটলি লগ্নিকারীদের ভরসা দিতে মনস্থ করিলেন। কয়েকটি ক্ষেত্র বাছিয়া লইয়া কোথাও বিদেশি বিনিয়োগের ঊর্ধ্বসীমা খানিক বা়ড়াইয়া দিলেন, কোথাও সরকারি অনুমোদনের লালফিতার ফাঁস খানিক আলগা করিলেন।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০১৫ ২২:০১
Share:

বি হারে ধরাশায়ী নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহকে দেখিয়া বিনিয়োগকারীরা ঘাবড়াইয়া যাইতে পারেন, এমন আশঙ্কা অমূলক ছিল না। অতএব, অরুণ জেটলি লগ্নিকারীদের ভরসা দিতে মনস্থ করিলেন। কয়েকটি ক্ষেত্র বাছিয়া লইয়া কোথাও বিদেশি বিনিয়োগের ঊর্ধ্বসীমা খানিক বা়ড়াইয়া দিলেন, কোথাও সরকারি অনুমোদনের লালফিতার ফাঁস খানিক আলগা করিলেন। বিনিয়োগকারীরা তাহাতে আশ্বস্ত হইবেন? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজিবার পূর্বে জেটলি হাতের তালিকাটির দিকে আরও এক বার তাকাইতে পারেন। দেখিবেন, সেই তালিকায় মাল্টি ব্র্যান্ড রিটেলে বিদেশি লগ্নির উল্লেখমাত্র নাই। কেন নাই, অনুমান করা চলে। তিনি আরও এক দফা রাজনৈতিক ঝড়ের সম্মুখীন হইতে চাহেন নাই। সাহসের এই অভাব কতখানি গুরুতর, তাহা বুঝিতে অমর্ত্য সেনের একটি উক্তিই যথেষ্ট। আর্থিক সংস্কারের প্রশ্নে অমর্ত্যবাবুকে রক্ষণশীল বলা চলে। তিনিও বলিয়াছিলেন, খুচরা ব্যবসায়ে বিদেশি লগ্নিকে ছাড়পত্র দেওয়া নিতান্তই অকিঞ্চিৎকর সিদ্ধান্ত। সেই অকিঞ্চিৎকর কাজটি করিবার মতো সাহসও অরুণ জেটলিদের নাই। তাঁহাদের নিকট প্রকৃত সংস্কার প্রত্যাশা করা নিতান্ত অর্থহীন। জেটলির ঘোষণাটিকে বড় জোর প্রাক-দীপাবলি কালীপটকার সহিত তুলনা করা যায়। তাহাকে ‘বিস্ফোরণ’ বলিয়া চালাইলে সত্যের অপলাপ হইবে।

Advertisement

ব্যাঙ্কিং অথবা অসামরিক পরিবহণে বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ বৃদ্ধি করা, বা কফি-রবার-এলাচ উৎপাদনে ১০০ শতাংশ বিদেশি বিনিয়োগের ছাড়পত্র দেওয়া— এই খুচরা সিদ্ধান্তগুলিকে আর যাহাই বলুক, সংস্কার বলে না। ঘেঁটু ফুলকে ‘গোলাপ’ ডাকিলেই কি আর সুবাস মেলে? দিল্লির তখ্‌তে বসিবার দিনই এই সিদ্ধান্তগুলি সারিয়া রাখা নরেন্দ্র মোদীদের কর্তব্য ছিল। কারণ, তাঁহারা সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়াছিলেন, চার আনা-আট আনার সিদ্ধান্তের নহে। সংস্কারের অর্থ, এত দিন যাহা চলিতেছিল, সেই পথ হইতে সম্পূর্ণ সরিয়া আসা। নিতান্ত ব্যতিক্রমী ক্ষেত্র ভিন্ন সরকারের দখলদারি সম্পূর্ণ গুটাইয়া আনা। ব্যবসার অনুকূল পরিবেশের জন্য প্রয়োজনীয় নীতি নির্ধারণ করা। শ্রম আইন সংস্কার, পরিবেশ বিধির পুনর্নির্মাণ, জমি অধিগ্রহণ আইন রূপায়ন ইত্যাদি। সংস্কারের অর্থ বিভিন্ন মন্ত্রকের যাথার্থ্য লইয়া ভাবা। অপ্রয়োজনীয় মন্ত্রকগুলিকে গুটাইয়া নেওয়া, মন্ত্রকের এক্তিয়ার স্থির করিয়া দেওয়া। যে দেশে এখনও রাসায়নিক ও সার বিষয়ক মন্ত্রক বহাল তবিয়ত থাকে, সে দেশের নেতারা ‘সংস্কার’ শব্দটির অর্থই বুঝিতে শেখেন নাই। নরেন্দ্র মোদী দেড় বৎসরে এই সংস্কারের পথে হাঁটেন নাই। অদূর ভবিষ্যতে হাঁটিবেন, তেমন সম্ভাবনাও ক্ষীণ। অরুণ জেটলির হাতে থাকিবে শুধু পিটুলিগোলা।

তাঁহার এই পিটুলিগোলায় বিনিয়োগকারীরা আশ্বস্ত হইবেন কি? তেমন কোনও সংকেত নাই। বাজার যদি তাঁহাকে বিশ্বাসও করে, তবু একটি বিপরীত আশঙ্কা থাকিয়াই যায়। জেটলির ঘোষণাকে বাজার একটি ইঙ্গিত হিসাবে দেখিতে পারে— আজ না হউক, পরশুর পরের দিন সরকার সংস্কারের পথে হাঁটিবে। বাজার ভাবিতে পারে, নিজেদের রাষ্ট্রবাদী ভাবনার বোঝা নামাইয়া রাখিয়া নরেন্দ্র মোদীরা সত্যই অর্থনীতির ময়দান হইতে সরকারকে সরাইয়া লইবেন। কিন্তু, আশঙ্কা হয়, নরেন্দ্র মোদীরা তাহা করিবেন না। তাঁহারা আপাতত রাজনীতির পাটিগণিত মিলাইতে ব্যস্ত। সংস্কার যে তাঁহার প্রধানতম লক্ষ্য নহে, প্রধানমন্ত্রী সেই কথাটিও নির্দ্বিধায় বলিয়া রাখিয়াছেন। ফলে, বাজারের প্রত্যাশা ধাক্কা খাইবে। বিনিয়োগকারীরা ভারত বিষয়ে সন্দিগ্ধ হইবেন। তাঁহাদের টানিয়া আনিবার কাজটিও ভবিষ্যতে কঠিনতর হইবে। পালে বাঘ পড়িবার গল্পটি নেহাত মিথ্যা নহে।

Advertisement
(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন