Editorial News

নাগরিকের অধিকার সুনিশ্চিত করা রাষ্ট্রের কর্তব্য

নাগরিকের অধিকার সুনিশ্চিত করা রাষ্ট্রের কর্তব্য, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের এই আপ্তবাক্য রূপায়ণের দায়িত্ব মূলত সরকার তথা শাসক দলের। পশ্চিমবঙ্গে তার ব্যর্থতার নজির বারংবার দেখছি আমরা।

Advertisement

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০১৮ ০০:৫৫
Share:

এ ভাবেই শাসাচ্ছিল গোপালের দল। ছবি: সায়কের ফেসবুক অ্যাকাউন্টের সৌজন্যে।

গড়িয়াতে ভরা বাজারে শুক্রবার রাতে যে ঘটনা ঘটে গেল, তা শুধু লজ্জাজনক বা নিন্দনীয় নয়, উদ্বেগজনকও। একদা দোর্দণ্ডপ্রতাপ, সাম্প্রতিক অনেকগুলো বছরে স্তিমিতপ্রায়, মস্তানকুল যে ভাবে আবার ঝাড়েবংশে বেড়ে উঠছে, তাতে এটুকু বলে দেওয়া যায়, সমাজতত্ত্ববিদদের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের অনেক আগে সমাজনাগরিকদের হাড়ে কাঁপুনি ধরে যাচ্ছে তীব্র ভাবেই। শীত আসলে বসন্ত যে আসবেই, এই আর্ষবাক্য মাথায় রেখে অনেকে হয়তো বজ্রনির্ঘোষের কল্পনা করছেন, বজ্রগর্জন সরকারি ভাবে হয়তো বা হচ্ছেও কখনও কখনও, কিন্তু আদপ আপ্তবাক্যটা রয়েই যাচ্ছে— যত গর্জাচ্ছে তত বর্ষাচ্ছে না।

Advertisement

না হলে, কলকাতার বুকে এক দল উচ্ছৃঙ্খল, মদ্যপ সমাজবিরোধী প্রকাশ্য তাণ্ডব চালাবে এবং তার শিকার নিরীহ নাগরিক, প্রশাসনের বদলে বেশি নিরাপত্তার আশ্রয় পেতে চাইবেন সোশ্যাল মিডিয়ার ছত্রছায়ায়— এ হেন ঘটনা সম্ভবই হত না। অন্যায়কারীদের উদ্দেশে কখনও ‘বাচ্চা দামাল ছেলে’সুলভ প্রশ্রয় অথবা অন্যায়ের কালিমার ছিটে যাতে গায়ে না লাগে, অতএব তাকে সাজনো ঘটনা বলে ব্যাখ্যার চেষ্টা, কোথাও একটা বিষবৃক্ষের বীজ বপন করছিল। এই রাজ্যের খেত-জমি-জল-জঙ্গল-চেনা মানুষ জানেন, ফুলের চাষে যে তীব্র শ্রম, অধ্যবসায়, উদ্যোগ ও মেধার দরকার, আগাছা বৃদ্ধিতে তার ন্যূনতম ভগ্নাংশও দরকার হয় না। সামান্য জল-জমি আর হাওয়া পেলেই আগাছা নিজেকে বাড়িয়ে তোলে নিরন্তর, আদিগন্ত।

অতএব সরকার-প্রশাসন-সমাজ-আমি-আপনি, সবারই উপর দায়িত্ব এসে বর্তায়। হ্যাঁ, সদাজাগ্রত ওই বিদ্বজ্জনেদের উপরেও। প্রশাসনের রাশের চেয়েও অধিকতর নিয়ন্ত্রণ যদি থাকে সমান্তরাল এক ‘অতি সাংবিধানিক’ ব্যবস্থার হাতে, তা হলে রাষ্ট্রীয় এক বিশৃঙ্খলার জন্ম হয়, দুর্ভাগ্য আমাদের, স্বাধীনতার এতগুলো বছরেও এটা আমরা উপলব্ধি করতে পারলাম না। কারণ, রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা বুঝিয়ে দেবেন, সমাজ এবং প্রশাসনিক কাঠামো জুড়ে সমান্তরাল এবং অতি সাংবিধানিক ব্যবস্থা যদি কায়েম থাকে তবে তার নিয়ন্ত্রণও চূড়ান্ত ভাবে সমাজবিরোধীদের হাতেই চলে যায়। অনেক কষ্টে অর্জন করা এই স্বাধীনতার পর তার রক্ষায় যে পরিমাণ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত ছিল, হয়তো বা তা করতে আমরা ব্যর্থই হয়েছি। তা না হলে, আধুনিক পশ্চিমবঙ্গ সাক্ষী, শুধুমাত্র শাসক দলের সংস্রবের উচ্চকিত ঘোষণায় প্রশাসনকে চ্যালেঞ্জ করায় মুহূর্মুহূ নির্ঘোষ শুনতাম না আমরা।

Advertisement

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

এত কথা বলার অর্থ এই, সাধু, সাবধান হওয়ার সময় এসেছে। আমি যদি সাধু হই, আমার সতর্ক হওয়ার মতন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ৩৪ বছরের বাম জমানাও মস্তানরাজের উত্থান ও তার শাসক নির্ধারিত পতনও দেখেছে। নাগরিকের অধিকার সুনিশ্চিত করা রাষ্ট্রের কর্তব্য, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের এই আপ্তবাক্য রূপায়ণের দায়িত্ব মূলত সরকার তথা শাসক দলের। পশ্চিমবঙ্গে তার ব্যর্থতার নজির বারংবার দেখছি আমরা।

আরও পড়ুন
গড়িয়ায় ভরা বাজারে দুষ্কৃতীদের তাণ্ডব, কিল-চড়-বাঁশপেটা অভিনেতা সায়ককে

তৃণই যদি মূল হয়, তবে আগাছার বাড় না বাড়ানোই ভাল। ভাল তৃণাদপি সুনীচেন হওয়া। না হলে, ভবিষ্যৎ শুধু হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগানোর কথাই শুধু বলবে।

সময় এখনও রয়েছে, শাসক সতর্ক হন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন