গুরগাঁও হবে গুরুগ্রাম, অগ্রাধিকার শুধু নামবদলেই?

নামে সত্যিই অনেক কিছু আসে যায়। লিখছেন জয়ন্ত ঘোষালনামে সত্যিই অনেক কিছু আসে যায়। লিখছেন জয়ন্ত ঘোষাল

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০১৬ ২৩:২৮
Share:

শেক্সপিয়র বলেছিলেন, নামে কী আসে যায়!

Advertisement

কিন্তু সত্যিই কি আসে যায় না?

গোটা দুনিয়া নামকরণের রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত কেন? চিনের কথা ছেড়ে দিন। আমাদের দেশে কলকাতা-দিল্লি, সিপিএম-কংগ্রেস-দিদি সব জমানাতেই নামকরণ বড় ইস্যু। ক্যালকাটা হয়ে গেল কলকাতা! মাদ্রাজ হল চেন্নাই। এ বার হরিয়ানা কেন পিছনে থাকে!

Advertisement

হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী মনোহরলাল খাট্টার ঘোষণা করেছেন, গুড়গাঁও হবে গুরুগ্রাম। এই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফ্যাসাদে পড়েছে খোদ নরেন্দ্র মোদীর সরকার। হরিয়ানার বিজেপি সরকার কেন্দ্রের কাছে এই সিদ্ধান্ত পাঠিয়েছে অনুমোদনের জন্য। কিন্তু বস্তুত সঙ্ঘ পরিবারের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে মুখরিত কংগ্রেস-কমিউনিস্ট, এমনকী দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল।

বিজেপি তথা সঙ্ঘ পরিবারের যুক্তি, কুরুক্ষেত্র হল হরিয়ানা রাজ্যের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ভরকেন্দ্র। তাই এখন মহাভারতের গুরু দ্রোণাচার্যকে স্মরণ করে তাঁর নামেই এর নাম হোক। আরও যুক্তি হল, অতীতে মহাভারতের যুগে পুরাণের দিনে এই প্রান্তের মানুষ এই স্থানকে গুরুগ্রামই বলতেন। ব্রিটিশ যুগের শাসকরাই এই নাম বদলে দেন তাঁদের ভুল উচ্চারণে।

এই সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর সিপিএম-কংগ্রেস, এমনকী, কেজরীবাল অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। দেশের দলিত সমাজের কিছু সম্প্রদায়ও এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে মুখর। দলিত সংগঠনগুলির বক্তব্য, দ্রোণাচার্যকে নিয়েও পুরাণের কাহিনিতে বিতর্ক রয়েছে। দ্রোণাচার্য একলব্যর আঙুল কেটে নিয়েছিলেন। তাঁকে ধনুর্বিদ্যায় শিক্ষা দেননি। কারণ একটাই। একলব্য উচ্চবর্ণের প্রতিনিধি ছিলেন না। কেজরীবাল এই ইস্যুকে আসন্ন পঞ্জাব নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক তাস হিসেবে ব্যবহার করতে সক্রিয়। তবে বেশ কয়েক জন সংস্কৃত পণ্ডিত অবশ্য মনে করছেন, গুরুগ্রাম নামকরণে দ্রোণাচার্যর প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন থাকলেও অতীতের অস্পৃশ্যতার প্রতি সমর্থন নেই।

বরং বিজেপি সূত্র বলছে, নরেন্দ্র মোদী নিজে অম্বেডকরের প্রতি বার বার শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করছেন। লন্ডনে, নাগপুরে, দাদরিতে অম্বেডকরের নামে মেমোরিয়াল তৈরি করা হচ্ছে। অম্বেডকরের নামে স্ট্যাম্প ও মুদ্রা হবে। এমনকী, অম্বেডকরকে মরণোত্তর ভারতরত্ন দেওয়ার প্রস্তাব বিবেচনা করা হচ্ছে। এমন সময়ে গুরুগ্রাম শব্দটি নিয়ে রাজনীতি করা অনুচিত।

তবে মার্কসবাদী ঐতিহাসিকরা বলছেন, প্রথমত, পুরাণের কাহিনিতেও নানা ধরনের স্ববিরোধী কাহিনি রয়েছে, তাই রামায়ণ-মহাভারতের কাহিনির ভিত্তিতে নামকরণ সর্বদা ঐতিহাসিক সত্য নয়।

দ্বিতীয়ত, নামকরণ ধীরেসুস্থে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে করা ভাল। তা না হলে অন্য রাজ্যগুলিতেও নাম পরিবর্তনের দাবি উঠবে। যেমন, হিমাচল প্রদেশে রাজ্য বিশ্ব হিন্দু পরিষদ নেতা আমন পুরী মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে প্রতিনিধি দল নিয়ে দেখা করে এক স্মারকলিপি পেশ করে বলেছেন, শিমলার নাম দেওয়া হোক শ্যামলা। শ্যামলা হিমাচলের অতীতের কালীমার নাম। ডালহৌসির নাম হোক নেতাজি সুভাষের নামে। পিটার হফ হোক বাল্মীকি ভবন। কাংরা জেলার নূরপুরের নামবদল হোক, কারণ নূরজাহানের নামে নূরপুরের নামকরণ হয়। কিন্তু নূরজাহানের কোনও প্রাসঙ্গিকতা নেই।

এখানেই শেষ নয়। রাজস্থান-পঞ্জাব সীমান্তে হরিয়ানার মেওয়াত জেলার নাম নুহ্ করা হয়েছে। এই মুসলমান প্রধান এলাকায় বিজেপি বিরোধী বিদ্রোহ চরমে। এই নুহ্ সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে অত্যাচার ঐতিহাসিক। এই পরিবর্তনের মধ্যেও রাজনীতি আছে বলে অভিযোগ করছে প্রতিপক্ষ। আপ দলের হরিয়ানার মুখপাত্র আর এস রাঠি বলেন, উন্নয়ন না করে নতুন নামকরণ করে মানুষকে ধোঁকা দিচ্ছেন। আবেগে সুড়সুড়ি দিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করে উন্নয়নের বিষয়টিকে আড়াল করা হচ্ছে।

নরেন্দ্র মোদী কী করবেন? দলের সরকার যখন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সঙ্ঘ পরিবার যখন নেপথ্যে, তখন মোদী সেই সুরে সুর মেলাতেই প্রস্তুত।

কিন্তু এটাই কি অগ্রাধিকার? দেশের একটা বড় অংশ যখন দারিদ্রসীমার নীচে, তখন উন্নয়নের বদলে নামকরণ নিয়ে মাথা ঘামানোই কি সরকারের প্রাধান্য?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন