প্রতীকী ছবি।
দোষে-গুণেই মানুষ আর ভালয়-মন্দয় মিশিয়েই আমাদের সমাজ। কিন্তু কখন ইতির দিকে পাল্লা ভারী, কখন নেতির দিকে, সেটুকু বুঝে নিতে পারলেই সমাজমানসকে অভ্রান্ত চিনে নেওয়া যায়। খুব সূক্ষ্ম কিছু লক্ষণই বুঝিয়ে দেয়, পরিস্থিতিটা কখন ইতির দিকে আর কখন নেতির। ভ্রাতৃদ্বিতীয়া সাড়ম্বরে পালিত হল শনিবার। লক্ষ লক্ষ বোন তাঁদের লক্ষ লক্ষ ভাইকে ফোঁটা দিলেন, মঙ্গল কামনা করলেন। কিন্তু দিনের শেষে বোনেরা এও বুঝলেন, ভাইদের অনেকের মানসিকতায়ই বোনদের অস্তিত্ব এখনও বেশ হীনবল এবং অমর্যাদার। তা যদি না হয়, তা হলে কি কলেজের পাঠ্যবই কোনও দিন পণপ্রথার ইতিবাচক দিক খুঁজে বার করার চেষ্টা করতে পারত?
আরও পড়ুন: পণপ্রথার ‘উপকারিতা’ পাঠ্যে, ক্ষোভ কলেজে
পণপ্রথার সুফল কী কী? বেঙ্গালুরুর এক কলেজে সমাজবিদ্যার পাঠ্যবইতে তালিকা তুলে ধরা হয়েছে। ‘কুৎসিত’ মেয়েদের সহজে বিয়ে হয় না এবং পণপ্রথার ‘সুবাদেই’ তাঁরা পাত্রস্থ হন— অনেকটা এমনই লেখা হয়েছে বইটিতে। একটি কলেজের পাঠ্যবইতে এই রকম কথা কী ভাবে লেখা থাকতে পারে, সে প্রশ্ন ঝড় তুলে দিয়েছে গোটা দেশে।
কুৎসিত কি শুধু মেয়েরাই হন, ছেলেরা নন? নাকি শুধু মেয়েদেরই বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়, ছেলেদের হয় না? এই প্রশ্নের উত্তর কে দেবে? বেঙ্গালুরুর কলেজের সমাজবিদ্যার পাঠ্যবইতে ওই রকম ‘গুরুতর’ কথাগুলো লিখলেন যিনি, তাঁর মনে এই বুনিয়াদি প্রশ্নদুটোর উদ্রেক হল না? সে ক্ষেত্রে লেখক নিশ্চয়ই বিশ্বাস করেন যে, জীবনে কোনও পুরুষের সঙ্গী হতে পারা এতটাই মহার্ঘ কোনও নারীর পক্ষে যে, পুরুষের অসৌন্দর্যে নারীর কিছুই যায়-আসে না। কিন্তু নারী এতই সহজলভ্য পুরুষের জন্য যে, সৌন্দর্য-অসৌন্দর্যের বিচারক হয়ে উঠে পুরুষ পণও চাইতে পারেন। এই রকম বিশ্বাস বা ধ্যান-ধারণার মানুষের সংখ্যা আজও যে বিপুল আমাদের সমাজে, সে কথা ভাবতে বেশ লজ্জা হয়। সমাজের প্রগতিশীল অংশ বলে যে শ্রেণিকে চিনি আমরা, সেই শ্রেণির মানসিকতাতেই এমন জমাট নেতি! এ কথা ভাবতে বেশ অবাক লাগে! এক দিকে ভাইফোঁটার মতো বোনফোঁটাও চালু করার কথা বলে সমাজের এই অংশটা। শুধু বোনই কেন ভাইকে রক্ষা করার জন্য যমের দুয়ারে কাঁটা বিছিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করবেন? ভাই কেন একই কাজ বোনের জন্য করবেন না? প্রশ্ন তোলা হয় ভাইফোঁটার আগে। কোথাও কোথাও সোৎসাহে বোনফোঁটার আয়োজনও হয়ে যায়। কিন্তু একই দিনে জানা যায়, কোনও লেখক কলেজ পড়ুয়াদের পাঠ্যবইতে লিখেছেন, পণপ্রথার সবটাই খারাপ নয়, অনেক সুফলও রয়েছে।
সমাজমানসে নেতির প্রগাঢ় ছাপ স্পষ্ট তো বটেই। নিদারুণ বৈপরীত্যটাও বিস্মিত করছে। নারী নির্যাতন, নারীর সম্ভ্রম লুণ্ঠনের একের পর এক আখ্যান রোজ কেন সামনে আসে, তা বুঝতে আর খুব অসুবিধা হয় না, যখন এই বিস্ময়কর মানসিকতার আঁচ পাওয়া যায়।