—ফাইল চিত্র।
এখন উলটপূরাণের সময়। অতএব কোনও প্রশ্ন নয়। রাজার পূজা শুধু স্বদেশেই, বিদ্বানের সর্বত্র, এ তত্ত্ব আপাতত শিকেয়, অন্তত এ ভারতে, এ উলটপূরাণের সময়ে। না হলে দীপা গ্রেস এক্কা, মনিতা টোপ্পোদের ট্রেনের মেঝেতে বসে বাড়ির পথে ফিরতে হয়?
আসমুদ্র হিমাচল বিছিয়ে রয়েছে এক মানচিত্র, এক দেশ। চাপ চাপ অন্ধকার, মাঝেমধ্যে কিছু আলোকবিন্দু। কেউ কেউ বলে, সাফল্যের আলো। কেউ বলে, পাদপ্রদীপের। সেই আলো যেখানে পড়ছে, ফেলা হচ্ছে, অর্থাৎ মিডিয়া ফেলছে, সাফল্যের রস নাকি সেখানেই। অতএব পশ্চিমে ওই আলোয় রয়েছে ক্রিকেট, দক্ষিণে ব্যাডমিন্টন, উত্তর-পূর্বে হয়তো বা বক্সিং, উত্তর-পশ্চিমে খুঁজে নেওয়া যাক কুস্তিকে। সম্প্রতি ইতিউতি জিমন্যাস্টিক্স, ইতিউতি একাকী উত্থানের বৃত্তান্ত, অতএব মিডিয়ার কলরব, অতএব সরকারের নিদ্রাভঙ্গ— সব মিলিয়ে আমরা বেশ এ রকমই।
এ সব নিয়েই ছিলাম আমরা আদি কাল থেকেই। প্রদীপের আলোকেই বাড়িয়ে এসেছি। তার তলার অন্ধকারকে দূর করার কোনও অতিরিক্ত চেষ্টায় মন দিইনি, চাপ চাপ কালোর মধ্যে বিন্দু বিন্দু ধলা দেখে তাকে ধরেই ঝুলে পড়েছি সবাই মিলে— এ মতো রীতিতেই অভ্যস্ত ছিলাম আমরা।
ক্রিকেট, না হলে ফুটবল, নিদেন পক্ষে কাবাডি, বৈচিত্র চাইলে ডব্লুডব্লুএফ— যেমনটা চেয়ে আসা গিয়েছে, তেমনটাই আলো ফেলা গিয়েছে এ সবের উপর। সে আলো পড়লে সরকারের দায় বেড়ে যায়। দায় থাকে না যেখানে, আমরা ভুলে যাই সেই অন্ধকারেই একলব্যেরা বাঁচে। প্রতিটি মুহূর্তের সঙ্গে যুঝতে যুঝতে সাফল্যের দিকে এগিয়ে চলার চেষ্টা করে। যেমনটা করেছিলেন, দীপা গ্রেস এক্কা, মনিতা টোপ্পো, সুনীতা লাকড়া, লিলিমা মিঞ্জরা। ৩৬ বছর পর কোনও ভারতীয় মহিলা হকি দল যে অলিম্পিক্সের আসরে গিয়েছিল, তা এঁদেরই একাগ্র তপস্যার ফল।
পি ভি সিন্ধুরা ফিরেছেন, ফিরেছেন এঁরাও। আসমুদ্রহিমাচল বিছিয়ে রয়েছে একটা দেশ। আলো পড়ছে সিন্ধুদের উপর। সেখানে উৎসবের কলতান, বিএমডব্লু অথবা টাকা-জমি দানের প্রতিযোগিতা। আর ওই দেখুন, বিছিয়ে থাকা প্রসারিত অন্ধকার চিরে ছুটে যাচ্ছে একটা ট্রেন। আরও কাছে গিয়ে দেখুন, সে ট্রেনের মেঝেয় বসে রয়েছেন চার কন্যা। অলিম্পিক্সে গিয়েছিলেন তাঁরাও। সাড়ে তিন দশক পর দেশকে মহিলা হকির সর্বোচ্চ মঞ্চের অংশভাক করেছিলেন। তাঁরা ফিরছেন। অবহেলিত, অপাঙ্ক্তেয়।
এ বার আমাদের অপেক্ষা পরের অলিম্পিক্সের। অপেক্ষা চমৎকার কিছু হওয়ার। তত ক্ষণ ওই অন্ধকার চার কন্যার লজ্জাকে লুকিয়ে রাখুক। লুকিয়ে থাকি আমরাও।