শিক্ষা। এই ছবি যা বলে, জিডিপি’র অঙ্কে তাকে ধরা যায় না।
আমাদের দেশে অসাম্য বিষয়ে একটা ধারণা খুব চালু হয়েছে। অনেকেই বলছেন, জিডিপি দ্রুত বাড়ছে, এখন অসাম্যও বাড়বে, এটাই স্বাভাবিক, এমনকী প্রয়োজনীয়ও, ওপরতলার মানুষের আয় বেশি বাড়লে সঞ্চয় বাড়বে, লগ্নি বাড়বে। এই যুক্তির কি কোনও মানে আছে?
একেবারেই নেই। কেন আয়বৃদ্ধির জন্যে অসাম্য দরকার হতে পারে, তার কোনও সাবলীল অর্থনৈতিক যুক্তি নেই। আর বিভিন্ন দেশের বাস্তব অভিজ্ঞতা যদি বিচার করা হয়, তা হলেও এমন কোনও ধারণা ধোপে টেকে না। অনেক ক’টা দেশেই আয় খুব দ্রুত বেড়েছে, যাদের অসাম্য সেই সঙ্গেই কমেছে। জাপানে উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে যখন মেজি রেস্টোরেশন হল, দ্রুত আয়বৃদ্ধি শুরু হল, শাসকরা ঠিক করলেন সবাইকে খুব তাড়াতাড়ি সাক্ষর করে তুলবেন, চল্লিশ বছরের মধ্যে তা করেও দেওয়া হল, স্বাস্থ্য পরিষেবাও প্রসারিত হল, এবং আয়ের অসাম্যও তখন বাড়েনি। দক্ষিণ কোরিয়াতে গত শতাব্দীর ষাটের দশক থেকে প্রচণ্ড রকম গ্রোথ হল, কিন্তু অসাম্যও কমল। ইউরোপে যেটা টানা আয়বৃদ্ধির সবচেয়ে লম্বা সময়, সেটা হচ্ছে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পরে, যখন ন্যাশনাল হেল্থ সার্ভিস এল, জনকল্যাণ রাষ্ট্র তৈরি হল, তারই মধ্যে কিন্তু ইউরোপের আয় খুব দ্রুত বাড়ছিল। অসাম্য ছাড়া গ্রোথ হবে না, এর সপক্ষে যুক্তিটা কোথায়? সেটা তা হলে এই রকম একটা কিছু যে, আমাদের আয়বৃদ্ধির জন্যে পুরনো ব্রাজিলের পথই অনুসরণ করতে হবে— কোরিয়া নয়, জাপান নয়, দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পরবর্তী ইউরোপ নয়, এমনকী ব্রাজিলেও সামরিক শাসনের অবসানের পরে যে পথ নেওয়া হয়েছিল সে পথ নিলে চলবে না, আমাদের সেই সামরিক জমানার ব্রাজিলের পথেই চলতে হবে!
মানে অনেক দৃষ্টান্তের মধ্যে থেকে আমরা ওই রকম একটা দৃষ্টান্তই মাথায় করে নিতে চাইছি...
ঠিক তাই। আগে যেমন অনেকে বলতেন যে, ভারতে গ্রোথটা কম, তার কারণ এখানে গণতন্ত্র আছে, সেটাই দ্রুত আয়বৃদ্ধির পথে বাধা সৃষ্টি করে, গণতন্ত্র তুলে দিলে বৃদ্ধির হার বেড়ে যাবে। তখন আমাকে লিখতে হয়েছিল যে, ভারতে গণতন্ত্র আছে এবং আয়বৃদ্ধি কম, এটা ঠিকই, কিন্তু একটার জন্যেই অন্যটা হচ্ছে, এমন কোনও প্রমাণ নেই। এখন আর কেউ সেই যুক্তিটা দেন না, কারণ এখন ভারতের আয়বৃদ্ধির গতি অনেকটা বেড়েছে, গণতন্ত্রের মধ্যে দিয়েই বেড়েছে। আয়বৃদ্ধির জন্যে অসাম্য চাই— এই কুযুক্তিটাও একেবারে ওই গোত্রেরই। এর পরে যখন দেখা যাবে অসাম্যটাও কমানো যাচ্ছে, বিশেষ করে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক নিরাপত্তার প্রসার ঘটছে, আয়ের অসাম্যও কমছে এবং গ্রোথও হচ্ছে, তখন লোকে আর এই নিয়ে বলবে না। তখন হয়তো আবার একটা অন্য কিছু খাড়া করবে।
বস্তুত, এই মৌলিক অসাম্যগুলো যদি কমানো না যায়, তা হলে তো দীর্ঘমেয়াদি বিচারে আয়বৃদ্ধির গতিটাও ধরে রাখা কঠিন হবে।
একেবারেই। চিনে এত দ্রুত আয়বৃদ্ধি হতে পারত না, যদি সেখানকার মানুষ প্রাথমিক সক্ষমতাগুলি অনেকখানি অর্জন করতে না পারতেন। আমাদের দেশের সরকারি বিশ্বাস হচ্ছে যে, অপুষ্ট, রুগ্ণ এবং অশিক্ষিত শ্রমিকরা একটা শিল্পবিপ্লব নিয়ে আসবে।
ইদানীং মেক ইন ইন্ডিয়া-র ধুয়ো তোলা হচ্ছে...
মেক ইন ইন্ডিয়া তখনই সম্ভব যখন আমাদের ‘মেক’ করার ক্ষমতা আছে। আমাদের দেশে বিশ্ববাজারে রফতানি করতে পারি এমন প্রধানত তিনটে জিনিস তৈরি করা হয়। একটা হচ্ছে ফার্মাসিউটিক্যালস, মানে ওষুধপত্র। সেটা তো অত্যন্ত দক্ষ কর্মীরা তৈরি করেন, মানে যাঁরা আমাদের দেশের ‘ফার্স্ট বয়’, এবং ‘ফার্স্ট গার্ল’ও। তার পরে হচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তি, আইটি, সেটাও তাঁদেরই ব্যাপার। তৃতীয় হচ্ছে অটো পার্ট, মোটরগাড়ির যন্ত্রাংশ, সেটা যান্ত্রিক ভাবে আমরা ভাল করতে পারি। জাপান বা চিন এ রকম হাজারটা জিনিস তৈরি করতে পারে, কারণ সেখানে কর্মীরা শিক্ষিত, তাই তাঁদের যদি বলা হয় একটা জিনিস এই ভাবে করতে হবে, এই ভাবে তার গুণগত মান বজায় রাখতে হবে, তাঁরা সেটা করতে পারবেন। মৌলিক একটা শিক্ষা না থাকলে সেটা সম্ভবই নয়। ফলে আমরা যেখানে তিনটে জিনিসে দক্ষতা দেখাই, চিনেরা সেখানে প্রায় চার হাজার জিনিসে দক্ষ। পার্থক্যটা খুঁজতে গেলে দেখা যাবে তার পিছনে আছে আমাদের শিক্ষার অভাব এবং অসাম্য, স্বাস্থ্যের অভাব এবং অসাম্য। সুতরাং দ্রুত আয়বৃদ্ধির জন্যে অসাম্য দরকার— এই ধারণার পক্ষে শুধু যে যুক্তি ও তথ্যের অভাব আছে তা-ই নয়, এর বিপক্ষের যুক্তিগুলো অত্যন্ত জোরালো। কিন্তু এই সম্পূর্ণ ভুল ধারণাটা চালু হয়েছে, কারণ এটা চালু করা হয়েছে।
আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় সমাজের ওপরতলার সঙ্গে বাকি অংশের একটা বিরাট দূরত্ব আছে এবং সেটা ক্রমশই বাড়ছে। এর ফলে কি অসাম্য মেনে নেওয়াও এখন অনেক সহজ হয়ে গেছে?
সমাজের মধ্যে একটা খুব পাকা রকম ব্যবধান, আমরা-ওরা’র একটা পার্থক্য, খুব বড় রকমেরই হয়েছে। তার ফলটা নানা ব্যাপারেই দেখা যাচ্ছে। যেমন খবরের কাগজে এক শ্রেণির লোকেদের কথা কেবলই শোনা যায়। এবং এঁরাই ‘সাধারণ লোক’ হিসেবে গণ্য হয়ে থাকেন। এ বিষয়ে জঁ দ্রেজের সঙ্গে আমার যৌথ ভাবে লেখা বইতে (অ্যান আনসার্ট্ন গ্লোরি, বাংলা অনুবাদ ভারত: উন্নয়ন ও বঞ্চনা) কিছু আলোচনা করেছি। ভাগটা তো সব দিক দিয়েই ভীষণ প্রকট। যেমন আমাদের মতো লোকেরা যদি কোনও আইন ভাঙে, মনে হয় হয়তো পুলিশ গ্রেফতার করবে, তা হলে আমরা সঙ্গে সঙ্গে কোনও বড় আইনজ্ঞের সঙ্গে যোগাযোগ করি, কোনও ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট গোছের কারও সঙ্গে চেনা থাকলে তাঁকে বলি, আমাদের কাছে সেটা একটা বড় সমস্যা নয়। কিন্তু বহু মানুষের কাছে এটা একটা ভীষণ সমস্যা, পুলিশের হাজতে গেলে বের করবার কোনও উপায়ই নেই। তাঁদের সমস্যাগুলো নিয়ে ভাবনাচিন্তা যথেষ্ট করা হয়েছে বলে মনে হয় না। নাটকে উপন্যাসে নিশ্চয়ই অনেকেই লিখেছেন, সিনেমাতে বোধহয় বেশি নয়, সেখানে তো বেশির ভাগই দেখা যায় বাড়িতে বসবার ঘর আছে, অনেকের আবার ঠাকুরঘরও আছে! সত্যিকারের সাধারণ মানুষদের সঙ্গে সেই মানুষদের একটা খুব বড় রকমের পার্থক্য আছে।
আগে অনেক বাংলা সিনেমাতে গরিব মানুষের ঘরবাড়ি, জীবনযাত্রা দেখা যেত, এখন শহরের আধুনিক হলগুলিতে যে বাংলা ছবি চলে, সেখানে আপনি সেটা আর প্রায় দেখতেই পাবেন না।
বাংলা সিনেমাতে যখন এই নিয়ে প্রথম কথা শুরু হল, যেমন ‘উদয়ের পথে’, সেখানে যিনি বললেন, তিনিও তুলনায় উচ্চ ঘর, অধ্যাপক, লাইব্রেরিতে বই কেনা হয়েছে কিন্তু পাতা কাটা হয়নি, সেই নিয়ে সমালোচনা করছেন, সবটাই সম্পন্ন মানুষদের ব্যাপার, কিন্তু তিনি দরিদ্র মানুষদের অবস্থা নিয়ে উতলা হচ্ছেন। তার পর কিছু দিন এই সচেতনতার একটা প্রকাশ ঘটেছিল ঠিকই। যেমন, শম্ভু মিত্র যখন রক্তকরবী ও অন্যান্য নানা নাটক মঞ্চস্থ করলেন। কিংবা বলা যেতে পারে খ্বজা অহমদ আব্বাসের ‘ধরতী কে লাল’ চলচ্চিত্রের কথা, যা দেখে আমরা সবাই চমৎকৃত হয়েছি। তো, সেখান থেকে আজ এতটা দূরত্ব তৈরি হল কী করে, সেটা একটা প্রশ্ন। দূরত্বটা কতটা বেড়েছে ঠিক জানি না, কিন্তু সামাজিক বিচ্ছিন্নতা বেড়েছে বলেই মনে হয়।
খুব বড় রকমের সামাজিক অসাম্যের মধ্যে তো একটা মৌলিক অনৈতিকতা আছে। কিন্তু আজকাল সেটা অনেকেই আর মনে করেন না, বরং এই অসাম্যটাকে স্বাভাবিক বলেই ধরে নেওয়া হয়। সাধারণ মানুষের সঙ্গে সমাজের ওপরতলার মানুষের দৈনন্দিন জীবনের দূরত্ব বা বিচ্ছিন্নতা কি এর একটা কারণ নয়?
এই ব্যবধানটাই বোধহয় আমাদের গণতন্ত্রের পক্ষে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকারক। গণতন্ত্র দিয়ে যা হতে পারত, তা হচ্ছে না। সাধারণ লোকের নাম করে যাঁরা অনেক রকম সুযোগসুবিধা আদায় করছেন, তাঁরা তো খুব সাধারণ না। সত্যিকারের সাধারণ মানুষের প্রতি শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়ে যে কত অবহেলা হচ্ছে, সেগুলোর দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করা ক্রমশই কঠিন হয়ে যাচ্ছে। যেমন অনেকেরই ধারণা ছিল, ওই এলপিজি-র ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে সাধারণ মানুষের জন্যে। কিন্তু সাধারণ লোকের তো এলপিজি ব্যবহার করার কোনও সুযোগ নেই। মনে আছে, ১৯৫২-৫৩ সালে আমার বন্ধু ও সহযোগী মৃণাল দত্তচৌধুরী ন্যাশনাল স্যাম্পল সার্ভের তথ্য সংগ্রহের কাজ পেয়েছিলেন। তাঁর সঙ্গে সঙ্গে আমি গিয়েছিলাম, প্রশ্নোত্তর শুনতে। খুব দুঃস্থ মানুষের বসতি ছিল সেটা, বোধহয় কলুটোলা অঞ্চলে। সেখানে এনএসএস-এর নিয়ম অনুসারে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ‘আপনাদের বাড়িতে কি রেফ্রিজারেটর আছে?’ ‘এয়ারকন্ডিশনার আছে?’ আমার যে জবাবটা সবচেয়ে মনে আছে— একটি পরিবারের কর্তা এয়ারকন্ডিশনার শব্দটা শোনেননি, তিনি প্রশ্ন শুনে বললেন, ‘আমি ঠিক জানি না আমাদের ঘরে আছে কি না, আমার স্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করতে হবে!’
এই সামাজিক অসাম্যের ব্যাপারটা নিয়ে অশোক রুদ্র খুব চিন্তা করেছিলেন। ওঁর ওই যে লেখাটা, ‘ইন্টেলেকচুয়াল অ্যাজ আ রুলিং ক্লাস’, এত ভাল লেখা! আমরা ধরেই নিই যে আমরা সমালোচক, কিন্তু আমরা, আমাদের বামপন্থী চিন্তাবিদ থেকে শুরু করে সবাই যে আসলে রুলিং ক্লাস, সেটা উনি আলোচনা করেছিলেন।
তবে কী করে এই সামাজিক ব্যবধানটা এত বেশি হল, সেই প্রশ্নটা থেকেই গেল।
এটা কি বাঙালির মধ্যে বেশি?
আমার তা মনে হয় না।
এই কারণে জিজ্ঞাসা করলাম যে, বাঙালি সমাজে ভদ্রলোকদের আধিপত্য অস্বাভাবিক রকমের বেশি তো...
সেটা ঠিকই। এবং আমরা তো খুব স্পষ্ট ভাবে সেই আধিপত্যটা জানাইও। অম্লান দত্ত আমাকে একটা সুন্দর গল্প বলেছিলেন। এক ফরাসি ভদ্রলোক বাংলা শিখছেন, তিনি এক বাঙালি বন্ধুকে জিজ্ঞাসা করেছেন, বাংলায় যে ‘বই-টই’ বলা হয়, ওই টই-টা কোথা থেকে এল। বন্ধুটি উত্তর দিয়েছিলেন, এটা কিন্তু ভদ্রলোকেরা বলে না, ছোটলোক-টোটলোকেরাই বলে!
কিন্তু এটাও আবার ঠিকই যে, বাঙালি ভদ্রলোকেরাই এক কালে গরিবের জন্যে খুবই ভেবেছিলেন, কাজ করেছিলেন...
খুবই। আমাদের ঐতিহ্য বলে যাঁদের আমরা মনে করি, রামমোহন রায়, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর থেকে যে ধারাটা, ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের সঙ্গে তুলনা করলে সেটা খুবই অগ্রবর্তী। আর, ওই যে কার্ল মার্ক্স, জন স্টুয়ার্ট মিল প্রমুখ চিন্তাবিদের সাম্য-চিন্তার বইপত্র, এগুলো তো কলকাতায় অনেক বেশি চালু ছিল...
তবে কেউ কেউ বলেন, ভদ্রলোকেরা তাঁদের হয়ে ভেবে এবং কাজ করে দিয়েছেন বলে নিম্নবর্গের মধ্যে থেকে নিজেদের কথা বলার লোক কম এসেছেন, মহারাষ্ট্রের জ্যোতিবা ফুলের মতো দৃষ্টান্ত বাঙালি সমাজে বিরল।
এ প্রশ্নটা বিচার করার পক্ষে খুব ভাল দৃষ্টান্ত তো কেরল। সেখানেও উচ্চবর্ণের আধিপত্য ভাঙার আন্দোলন, পরে কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে যা এগোল, সেটাও কিন্তু উচ্চবর্ণের লোকেরাই শুরু করেছিলেন। তার পরে নিম্নবর্ণ থেকে নেতৃত্ব তৈরি হল, এখানে যা হল না।
আজও পশ্চিমবঙ্গে সমস্ত দলের রাজনৈতিক নেতৃত্ব উচ্চবর্ণের হাতে। এবং এমনটা গোটা ভারতে আর প্রায় কোথাও খুঁজে পাওয়া কঠিন।
এখানে সবাই উচ্চ ঘর, কংসরাজার বংশধর। ব্রাহ্মণ, কায়স্থ, বৈদ্য, হয়ে গেল।
এই প্রশ্নটা আমাদের এখানে বিশেষ ওঠে না...
আমরা যখন ছাত্রজীবনে কফিহাউসে আড্ডা দিয়েছি, ‘আর্লি’ কাউটস্কি এবং ‘লেট’ কাউটস্কি নিয়ে যখন খুব তর্ক হয়েছে, অন্য নানা বিষয়ে আলোচনা হয়েছে, তখনও এই প্রশ্নটা খুব একটা এসেছে বলে মনে পড়ে না। পরেও যখন ইংল্যান্ডে গেলাম বা দিল্লিতে পড়াতে এলাম, তখনও বহু বিষয়ে আলোচনা হয়েছে, কিন্তু এটা নিয়ে নয়। এখন হয়তো কিছু কিছু হচ্ছে। তবে ওই যে কথাটা— উচ্চবর্ণের লোকেরা আগ্রহী এবং উদ্যোগী হয়েছে বলে নিম্নবর্ণের লোকেরা পাত্তা পেল না— আমি এটা মানতে পারব বলে মনে হয় না। কারণ উচ্চবর্ণ বা উচ্চবর্গ থেকেই প্রায় সব আন্দোলনের শুরু।
এবং, কার্ল মার্ক্সও এক জন নাগরিক ইন্টেলেকচুয়াল। তিনি যেমন প্রকৃত স্বক্ষমতার নজির হিসেবে একই মানুষ কত রকমের কাজ করবে সে নিয়ে লিখেছেন, তার মধ্যে একটা হচ্ছে ‘সন্ধেবেলায় গরু চরানো’। এটা খুব শহুরে লোক ছাড়া কেউ বলতে পারে না। এ একেবারে সোজা হ্যাম্পস্টেড হিথ থেকে আসছে! (শেষ)
সাক্ষাৎকার: অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায়