INdia

নূতন মঞ্চ

এই মুহূর্তে চার দেশের অংশগ্রহণে যে ‘কোয়াড’ অক্ষ নির্মিত হইয়াছে, সেখানে আমেরিকা, জাপান, অস্ট্রেলিয়ার সহিত হাত মিলাইয়া ভারত একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় অবতীর্ণ হইয়াছে, এই কথা বলাই যায়।

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০২০ ০২:৩১
Share:

প্রতীকী ছবি।

যবনিকার অন্তরালে তৈরি হয় আরও বড় নাটক, কূটনীতির শিক্ষা। এই মুহূর্তে চিন ও ভারতের মধ্যে সম্পর্কের ক্ষেত্রে কথাটি বিশেষ ভাবে সত্য। দুই দেশের সীমান্তে যত সংঘর্ষই হউক না কেন, আসল সংঘর্ষের আবহ তৈরি হইতেছে অন্যত্র, অন্য কোনও শহরের রুদ্ধদ্বার বৈঠকে, অন্য কোনও দেশের অংশগ্রহণের জোরে তৈরি হইতেছে এশিয়ার দুই বৃহৎ প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরোধক্ষেত্রের পটভূমি। চিন চির কালই প্রচ্ছন্ন কিংবা গোপন কূটনৈতিক আদানপ্রদানে সিদ্ধহস্ত। ভারত বরং এ বিষয়ে কিছু পিছাইয়া। অতি বড় জাতীয়তাবাদীও মানিবেন যে আজ পর্যন্ত কূটনীতির বিশ্বে ভারত বিশেষ সাফল্যের স্বাক্ষর রাখিতে পারে নাই। এই মুহূর্তে চার দেশের অংশগ্রহণে যে ‘কোয়াড’ অক্ষ নির্মিত হইয়াছে, সেখানে আমেরিকা, জাপান, অস্ট্রেলিয়ার সহিত হাত মিলাইয়া ভারত একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় অবতীর্ণ হইয়াছে, এই কথা বলাই যায়। চিনের সহিত কূটনৈতিক টক্করের পরবর্তী পর্বে ‘কোয়াড’-এর সদস্যভূমিকা ভারতকে বিশেষ সাহায্য করিতে পারে। লক্ষণীয়, এখানে চারটি দেশের স্বার্থের মধ্যে একটিই সাধারণ সূত্র: চিনবিরোধিতা।

Advertisement

দক্ষিণ চিন সমুদ্র হইতে ভাসিয়া আসিয়াছে কোয়াড তৈরির প্রণোদনা। বাস্তবিক, চিনের বাণিজ্যিক ও সামরিক দখল সেখানে কোন পর্যায়ে গিয়াছে, বুঝিতে পারা যায় এই দেশগুলির বিরক্তি ও আশঙ্কার পরিমাণ দেখিয়া। ভারত ছাড়া তিন দেশেরই মূল মাথাব্যথা দক্ষিণ চিন সাগর। ভারতের ক্ষেত্রে অবশ্য সমস্যা সীমান্ত লইয়া, এবং প্রতিবেশী পাকিস্তানের সহিত চিনের গোপন বোঝাপড়া লইয়া। ২০১৭ সালে চিনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ আরম্ভ হইবার পর হইতেই ভারত দুশ্চিন্তায়— ভারতের অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক কারবারে চিনের নজরদারির সম্ভাবনা ইহাতে অনেক গুণ বাড়িল। চলমান বৎসরে লাদাখ অঞ্চলে দুই দেশের সংঘর্ষ শুরু হইবার পর আরও স্পষ্ট, কেন ভারতকে দ্রুত চিনের সহিত অর্থনৈতিক বোঝাপড়ায় আসিতে হইবে, কেন অন্য দেশের সহিত সংযোগ ভারতকে বাড়াইতে হইবে। সেই দিক হইতে, কোয়াড নামক নূতন আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীতে ভারতের অংশগ্রহণ একটি গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ। প্রধানমন্ত্রী মোদীর জমানায় বিদেশনীতির উপর্যুপরি ব্যর্থতার প্রেক্ষিতে, কোয়াড একটি বিরল গৌরবমুহূর্ত, সন্দেহ নাই।

অন্যের সহিত হাত মিলাইয়া চলিবার জন্য নূতন সমস্যাও তৈরি হয়। কোয়াড বৈঠক দেখাইয়া দিল, চিন বিষয়ে ভারতের অপেক্ষা অনেক বেশি সুর চড়াইতে আগ্রহী আমেরিকা। করোনাভাইরাস সঙ্কট সে দেশে চিনবিরোধী হুজুগ তুলিবার সুবর্ণসুযোগ আনিয়া দিয়াছে। পরের মাসে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের উপর খানিক নির্ভর করিবে সে দেশের ভবিষ্যৎ চিন-নীতি, তবু এখনই বলা যায় যে ভারতের স্বার্থের সহিত তাহার সাযুজ্য থাকিবার সম্ভাবনা কম। তাই সতর্ক থাকিতে হইবে ভারতকে। ভূ-রাজনীতির দিক দিয়া চিন যে ভারতের শত্রু নহে, প্রতিদ্বন্দ্বী— এই ভাবটি বহাল রাখিতে হইলে কেবল সীমান্ত অঞ্চলে নহে, আন্তর্জাতিক মঞ্চেও সাবধানে পা ফেলিতে হইবে। চিনের সহিত সামরিক বা অর্থনৈতিক সংঘর্ষে জড়াইয়া পড়িলে ভারতের দীর্ঘমেয়াদে কোনও লাভ নাই, স্বল্পমেয়াদে বিস্তর ক্ষতি। সুতরাং, কূটনীতি কূটবুদ্ধি অনুযায়ী চালনা করা জরুরি।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement